জুমবাংলা ডেস্ক : মঙ্গলবার (০৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বেগমগঞ্জ থানায় একজন বৃদ্ধ ডিউটি অফিসারের কক্ষের সামনে বেঞ্চে হেলান দিয়ে বসে আছেন। কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে জানা গেল তিনি বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে দেলোয়ার বাহিনীর হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূর বাবা। চোখে মুখে অজানা আতঙ্ক। ভয়ে ভয়ে দিন কাটছে তার, এমন কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘বাবা গো আমাদের মেরে ফেলবে’, দেলোয়ারের কত নেতা। আগেও কতবার পুলিশ ধরছে। কিন্তু হেতে (সে) নেতাগোরে দি (দিয়ে) আবার বাহির অই (হয়ে) যায়। দেলোয়ারের কাছে ম্যালা (অনেক) অস্ত্র আছে, আন্নে (আপিন) দেখলে ঘুরি হড়ি (পড়ে) যাইবেন (যাবেন)। পুলিশ কয়দিন ধরি রাইখবো (রাখবে)। হেতে (সে) বার (বাহির) হয়ে আঙ্গো ঘরের ব্যাকরে (সবাইকে) মারি হালাইবো (মেরে ফেলবে)।
গত ২ সেপ্টেম্বর ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের পর থেকে ঘরে তালা দিয়ে বাড়ি ছেড়ে ছিলেন তিনিসহ পুরো পরিবার। কিন্তু গত এক মাসের বেশি সময় পরও অভিযুক্ত দেলোয়ার ও তার সহযোগীরা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেও আতঙ্ক কাটেনি তার।
বেগমগঞ্জ থানার ডিউটি অফিসার এসআই শহিদ উল্যা জানান, ‘কক্ষের মধ্যে সন্ধ্যা ৬টা ১০মিনিটের দিকে হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন ওই নির্যাতিতার বাবা। তিনি ও পুলিশ সদস্যরা উনাকে তুলে পানি খাইয়ে দেন। একটু স্বাভাবিক হওয়ার পর বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে ওই নারীর আগের স্বামী তার সাথে দেখা করতে তার বাবার বাড়ি একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে তাদের বাড়িতে আসেন। বিষয়টি দেখে পেলে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার। রাত ১০টার দিকে দেলোয়ার তার লোকজন নিয়ে ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করে পরপুরুষের সাথে অনৈতিক কাজ ও তাদের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে মারধর শুরু করেন। এক পর্যায়ে পিটিয়ে নারীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে। ৪ অক্টোবর রোববার দুপুরে ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েল জেলায় তথা দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
রোববার রাত আড়াইটার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোড এলাকা থেকে দেলোয়ারকে গ্রেফতার করে র্যাব। এসময় তার কাছ থেকে একটি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার সন্ধ্যায় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুরে দেলোয়ারের একটি মাছের খামারে অভিযান চালিয়ে ৭টি তাজা ককটেল ও দুই রাউন্ড কার্টুজ উদ্ধার করে র্যাব। এ ঘটনায় র্যাব বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা দায়ের করেছেন।
এদিকে, ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আব্দুর রহিম ও রহমত উল্যাকে দু’টি মামলা পৃথকভাবে ৩দিন করে এবং মামলার প্রধান আসামি বাদলকে ৭দিন ও ইউপি সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন সোহাগকে ২দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। অপর আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।