এক প্যাকেট বাতাস কিনে আনলাম, বাসায় এসে দেখি ভেতরে কয়েকটা চিপসও আছে! কৌতুক করে অনেকেই এমনটা বলেন। আসলে চিপসের অত বড় প্যাকেটের তুলনায় ভেতরে খাবারের পরিমাণ এত কম যে মনের দুঃখে এ ধরনের কৌতুক চলে আসে।
বিস্কুট বা চাল-ডালের মতো খাদ্যদ্রব্যের ক্ষেত্রে প্যাকেট ভর্তি থাকে খাবারে। কিন্তু চিপসের ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্যাকেটের বেশির ভাগটাই বাতাস। শুধু চিপস নয়, বিভিন্ন ধরনের স্ন্যাকস বা হালকা নাশতা জাতীয় অনেক খাবারের প্যাকেট আকারে বড় হয়। ভেতরে থাকে বাতাস। প্রশ্ন হলো, কেন? তারচেয়েও বড় কথা, ভেতরের বাতাসটুকু আসলে কীসের তৈরি?
বেশির ভাগ খাবারই খোলা পরিবেশে বেশি দিন ভালো থাকে না। বাতাসের নানা উপাদান, জলীয়বাষ্প এবং পরিবেশের তাপমাত্রার কারণে খাবারে বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। এতে খাবারের স্বাভাবিক গুণাগুণ আর ঠিক থাকে না। উপযুক্ত পরিবেশে একসময় ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক আধিপত্য বিস্তার করে খাবারে। ফলে খাবার নষ্ট হয়ে যায়।
নষ্ট হওয়ার হাত থেকে খাবার বাঁচাতে মানুষ কম চেষ্টা করেনি। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ খাবার সংরক্ষণের দিকে নজর দিয়েছে। আবিষ্কার করেছে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম নানা উপাদান, যেগুলো খাবারে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। ইংরেজিতে এসব উপাদানকে বলা হয় প্রিজারভেটিভ। সবকিছুর মতো প্রিজারভেটিভেরও ভালো-মন্দ আছে। সব প্রিজারভেটিভ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়।
বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন প্যাকেটজাত খাদ্যদ্রব্য তৈরির কারখানা হয়েছে। এসব কারখানা প্রিজারভেটিভ এবং কিছু কৌশলের মাধ্যমে প্যাকেটজাত খাবার উৎপাদন করে। দীর্ঘদিন এসব খাবার ভালো থাকে প্যাকেটের মধ্যে।
চিপসের প্যাকেটে আমরা যে বাতাস দেখি, সেটা কিন্তু বায়ুমণ্ডলের বাতাস নয়। কারণটা হয়তো বুঝতে পেরেছেন এতক্ষণে। বায়ুমণ্ডলের বাতাস খাবার সংরক্ষণের উপযোগী নয় একদমই। তাহলে কী থাকে ভেতরে?
ভেতরে থাকে নাইট্রোজেন গ্যাস। এ গ্যাস মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয়। বায়ুমণ্ডলের প্রায় ৭৮ ভাগই নাইট্রোজেন গ্যাস। অর্থাৎ বলতে গেলে আমরা ডুবে থাকি নাইট্রোজেনের সমুদ্রে। বায়ুমণ্ডলে এই গ্যাসের সঙ্গে অনেক কিছু মিশে থাকে বলে খাবার নষ্ট হয়। কিন্তু আপনি যদি বিশুদ্ধ নাইট্রোজেনে কোনো খাবার রাখেন, তাহলে সেটা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ভালো থাকবে। কারণ, এটি খাবারের রং, স্বাদ, গন্ধ এবং গাঠনিক কাঠামো ঠিক রাখতে সাহায্য করে। তবে খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এই বাতাসকে অবশ্য শুধু নাইট্রোজেন বলে না। বলে স্ল্যাক ফিল (Slack Fill)।
চিপস তৈরির সময় বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে চিপসের প্যাকেটে থাকা অক্সিজেন সমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডলীয় বাতাস বের করে নেওয়া হয়। একই সঙ্গে বায়ুশূন্য প্যাকেট ভরে ফেলা হয় নাইট্রোজেন গ্যাস দিয়ে। এরপর নাইট্রোজেন গ্যাসভর্তি প্যাকেট দ্রুত বায়ুনিরোধক করে ফেলা হয়, যাতে ভেতরের বাতাস বাইরে এবং বাইরের বাতাস ভেতরে ঢুকতে না পারে। এতে ভেতরের খাবারের জন্য ভিন্ন এক পরিবেশ তৈরি হয়। পরিবেশটি যেহেতু খাবারের রং, গন্ধ, স্বাদ ইত্যাদি ঠিক রাখতে সাহায্য করে, তাই খাবারও ভালো থাকে দীর্ঘসময়।
অবশ্য চিপসের প্যাকেট নাইট্রোজেন গ্যাসে ভরে ফেলার এটাই একমাত্র কারণ নয়। গঠনগত দিক থেকে চিপস খুবই ভঙ্গুর। একটু চাপ পড়লেই গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যায়। কিন্তু যথেষ্ট বাতাসে প্যাকেট ভরে ফেললে বাইরের চাপটা সরাসরি চিপসের ওপর পড়ে না। পড়ে ভেতরে থাকা বাতাসের ওপর। ফলে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পরিবহনের সময় চিপস ভেঙে যায় না। কারখানা যেভাবে তৈরি হয়, সেভাবেই পৌঁছে যায় ভোক্তার হাতে।
এতক্ষণে আশা করি বুঝতে পেরেছেন, কেন চিপসের প্যাকেট বাতাসে (আসলে নাইট্রোজেন) ভর্তি থাকে। এতে অনেক সময় ভোক্তা বিভ্রান্ত হলেও কাজটি করা হয় পণ্যের গুণগত মান অটুট রাখতে। তবে প্যাকেট ঠিক কত শতাংশ বাতাসে ভরা থাকতে হবে, তার কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ না থাকায় অনেক সময় বড় প্যাকেট ব্যবহার করে কোম্পানীগুলো। বেশি বাতাস হলে চিপস ভেঙে যাওয়ার আশংকা কমে। তবে বেড়ে যায় ভোক্তার বিভ্রান্ত হওয়ার আশংকা। সে জন্য দোকানে চিপস বা এ জাতীয় খাবার কিনতে গেলে প্যাকেটের আকার না দেখে, পরিমাণে কতটুকু আছে, তা দেখাই বুদ্ধিমানের কাজ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।