আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন সেনাবাহিনী সম্প্রতি লং-রেঞ্জ প্রিসিশন স্ট্রাইক মিসাইল (পিআরএসএম) এর প্রথম চালান পেয়েছে। এই সাফল্য দেশটির সামরিক পরিষেবাতে ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির একটি মাইলফলক। শুধু তাই নয়, এটি মার্কিন সামরিক বাহিনীর কৌশলগত দূর-পাল্লার হামলা করার ক্ষমতা ও প্রচলিত প্রতিরোধের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য উন্নতিও বটে।
নতুন ক্ষেপণাস্ত্র জয়েন্ট ফোর্স কমান্ডারদের ২৪/৭, সব ধরনের আবহাওয়ায় প্রতিপক্ষের যুদ্ধ কৌশল ঠেকাতে ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনায় নতুন মাত্রা যুক্ত করবে। ডিফেন্স নিউজ জানিয়েছে, প্রথম চালানটির সক্ষমতা নিউ মেক্সিকোর হোয়াইট স্যান্ডস মিসাইল রেঞ্জে পরীক্ষা করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিআরএসএম হল মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি মূল প্রযুক্তি যা নির্ভুলভাবে দূর পাল্লায় হামলা করা নিয়ে কাজ করে। ২০১৭ সাল থেকে এটি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি এম১৪২ হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম (হিমারস) ও এম২৭০এ২ মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম (এমএলআরএস) উভয় থেকেই উৎক্ষেপণ করা যেতে পারে।
ডিফেন্স নিউজে যে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছে তা হলো, মার্কিন সেনাবাহিনী প্রাণঘাতীর মাত্রা ও রেঞ্জ বাড়ানোর জন্য উন্নত অনুসন্ধানকারী প্রযুক্তি যুক্ত করার পরিকল্পনা করেছে। লকহিড মার্টিন ও রেথিয়ন টেকনোলজিস-নর্থরপ গ্রুম্যান নামক দুটি মার্কিন অস্ত্র ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এই প্রকল্প আরও উন্নত করতে কাজ করবে।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন আর্মি রেথিয়ন টেকনোলজিস-নর্থরপ গ্রুম্যানের সঙ্গে ৯৭.৭ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে শুধু দুরপাল্লার ম্যানুভারেবল (সহজে, স্বল্প পরিসরে ব্যবহার করা যায় এমন কিছু) ফায়ার প্রোগ্রামকে আরও উন্নত করার জন্য। অপরদিকে লকহিড পেয়েছিল ৩৩ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি।
পিআরএসএম পুরানো আর্মি ট্যাকটিকাল মিসাইল সিস্টেমকে (এটিএসিএমএস) প্রতিস্থাপন করবে। এটি ১৯৯১ সাল থেকে মার্কিন সেনাবাহিনী ব্যবহার করে আসছে। ব্রেকিং ডিফেন্স চলতি মাসে এক নিবন্ধে বলেছে, ৫০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে পিআরএসএম ক্ষেপণাস্ত্রকে। পূর্বের এটিএসিএমএস এর রেঞ্জ ছিল ৭০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার।
যদিও ব্রেকিং ডিফেন্স বলেছে, মার্কিন সেনাবাহিনী পিআরএসএম-এর প্রকৃত রেঞ্জ প্রকাশ করেনি, তবে ক্ষেপণাস্ত্রটি ৮৫ কিলোমিটারের কম ও ৪০০ কিলোমিটারের বেশি দূরের লক্ষ্যবস্তুতে পরীক্ষা করা হয়েছে। যার মানে দাঁড়ায় এর সীমা হতে পারে ৮০-৪০০ কিলোমিটার। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে পিআরএসএম এর লক্ষ্য ৮৫ কিলোমিটারের কম দূরের বস্তু নয়।
২০২০ সালের আগস্টে কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিস (সিআরএস) রিপোর্টে বলা হয়েছে, পিআরএসএম লঞ্চার একটি পডে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ধারণ করতে পারে। এতে একটি অ্যান্টি-জ্যাম জিপিএস অ্যান্টেনা রয়েছে। অপরদিকে এটিএসিএমএস মাত্র একটি ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারতো।
২০২৩ সালের নভেম্বরে একটি একটি নিবন্ধে ব্রেকিং ডিফেন্স বলেছে, পেন্টাগন যখন তার ২০২৪ সালের আর্থিক বাজেট প্রকাশ করেছিল, তখন মার্কিন সেনাবাহিনী ৩ হাজার ৯৮৬ পিআরএসএম ইনক্রিমেন্ট ১ ক্ষেপণাস্ত্র বানানোর পরিকল্পনা করেছিল। যেহেতু তারা ইউক্রেনে পুরানো এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছে, তাই লক্ষ্য হল মার্কিন ইনভেন্টরি থেকে খালি হওয়া এটিএসিএমএস এর জায়গায় পিআরএসএম দিয়ে পূর্ণ করা।
পাশাপাশি মার্কিন সেনাবাহিনী পিআরএসএম ইনক্রিমেন্ট ২, উন্নত মানের ওয়ারহেড সম্বলিত পিআরএসএম ইনক্রিমেন্ট ৩ ও এক হাজার কিলোমিটার রেঞ্জের পিআরএসএম ইনক্রিমেন্ট ৪ সহ ভূমি ভিত্তিক অ্যান্টি-শিপ মিসাইল (এলবিএএসএম) সিকারের দিকে মনোযোগ দিয়েছে।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পেন্টাগনের ‘ক্ষেপণাস্ত্র প্রাচীর’ কৌশলে পিআরএসএম হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ।
পিআরএসএম ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে চীনের সামরিক হুমকি থেকেও নিজেদের রক্ষা করতে পারবে তাইওয়ান। তবে মার্কিন মিত্ররা বিভিন্ন কারণে আমেরিকার ‘ক্ষেপণাস্ত্র প্রাচীর’ কৌশলে নাও অংশ নিতে চাইতে পারে। কারণ মার্কিন ও চীনের মধ্যে বন্দুক যুদ্ধ বাধার ঝুঁকিও কম নয়।
২০২৩ সালের নভেম্বরে এশিয়া টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্থল-ভিত্তিক টমাহকস, এসএম-৬এস ও সম্ভবত পিআরএসএম ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করবে যুক্তরাষ্ট্র। সেই পরিকল্পিত ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন এই অঞ্চলে চীনের সামরিক সম্প্রসারণ ও দৃঢ়তা নিয়ে মার্কিন উদ্বেগকে তুলে ধরে।
সম্ভাব্য চীনা আক্রমণ ঠেকাতে তাইওয়ানের পাল্টা হামলার ক্ষমতাও বাড়াতে পারে পিআরএসএম ক্ষেপণাস্ত্র। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে আর্মি টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৯টি হিমারস লঞ্চার, ৮৬৪টি নির্ভুল নির্দেশিত রকেট ও ৮৪টি এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র কেনার জন্য বাজেট বরাদ্দ করেছে তাইওয়ান।
তাইওয়ানের সামরিক বাহিনী চীনা সমুদ্র সৈকতে বোমা ফেলবে হিমারস দিয়ে আর চীনের মূল ভূখণ্ডের উপকূলে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করবে এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে। তবে এ ধরনের হামলার পূর্বাভাসে চীন ইতিমধ্যেই তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। গত মাসে, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের (ডব্লিউএসজে) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন তার দক্ষিণ অঞ্চলে শক্ত ও ছদ্মবেশী আশ্রয়কেন্দ্র, বর্ধিত রানওয়ে ও নতুন ফাইটার জেট এপ্রোনসহ এক ডজন বিমানঘাঁটিতে উল্লেখযোগ্যভাবে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে।
এর ফলে সম্ভবত তাইওয়ানে বিমান হামলার সময় চীন ভাল সুবিধা পাবে আর এই ঘাঁটিগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে। চীন তার মূল ভূখন্ডের উপকূলে শক্তিশালী বিমান প্রতিরক্ষা ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধ ক্ষমতা মোতায়েন করেছে, যা এটিএসিএমএস এর মতো পুরানো যুদ্ধাস্ত্রের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে।
পরবর্তী প্রজন্মের পিআরএসএম এইভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানের গতানুগতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে পারে ও মিত্রদেরকে চীনা হামলার ঝুঁকি মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়াতে পারে।
-এশিয়া টাইমস থেকে অনূদিত
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।