আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চীনের স্বপ্নের প্রকল্প ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ নিয়ে আবারো নিজেদের আপত্তির কথা জানাল ভারত। সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) বৈঠকে সব সদস্যরাষ্ট্র চীনের এই প্রকল্পকে সমর্থন জানালেও নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সায় মেলেনি।
এসসিও বৈঠকের শেষে সদস্য রাষ্ট্রগুলো একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে জানায়, যৌথভাবে তৈরি হওয়া এই প্রকল্পকে তারা সমর্থন করছে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে রাশিয়া, পাকিস্তান, কাজাখস্তানসহ প্রায় সব সদস্য রাষ্ট্র, তবে স্বাক্ষর ছিল না ভারতের।
গত মঙ্গলবার এসসিওর সদস্য দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান পরিষদের অনলাইন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসসিও বৈঠকে প্রথমবারের মতো সভাপতিত্ব করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৈঠকের শুরুতেই তিনি ভার্চুয়াল ভাষণে জানান, এসসিও গোষ্ঠীর সনদকে মান্যতা দেয়া উচিত সকলের। এর পাশাপাশি চীনের নাম না করেই সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতা রক্ষার বিষয়ে প্রশ্ন করেন তিনি।
দীর্ঘ দিন ধরেই নয়াদিল্লির আপত্তি রয়েছে ‘বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্পের একটি নির্দিষ্ট অংশ নিয়ে। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) নামের এই রাস্তা চীন অধিকৃত উইঘুর এলাকা শিনজিয়াং?য়ের কাশগড়কে যুক্ত করেছে পাকিস্তানের গোয়েদর
সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে। ওই রাস্তার একটি অংশ গেছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের গিলগিট-বালটিস্তান এলাকার ভেতর দিয়ে। পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অংশ বলে স্বীকার করে না ভারত। তাই নয়াদিল্লির যুক্তি, এই রাস্তা তৈরি করে ভারতের সার্বভৌমত্বে ভাগ বসিয়েছে বেইজিং।
এসসিওর শীর্ষ বৈঠকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকেও খোঁচা দেন মোদি। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হলো সন্ত্রাসবাদ। আমাদের এর বিরুদ্ধে লড়তে হবে।’ এর পরেই পাকিস্তানের নাম না-করে বলেন, ‘কিছু দেশের নীতিই হল সীমান্ত পারের সন্ত্রাসকে মদত দেয়া। তাদের নিন্দা করার ক্ষেত্রে কোনো দ্বিধা থাকা উচিত নয়।’ রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের উপস্থিতিতেই এ মন্তব্য করেন মোদি। প্রসঙ্গত, রাশিয়ার সা¤প্রতিক ‘ওয়াগনার বিদ্রোহের’ পর এই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেখা গেছে পুতিনকে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ভিডিও ভাষণে বলেন, বিশ্বব্যাপী বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর আঞ্চলিক সংস্থা হিসেবে সংস্থাটির সদস্য দেশগুলো বাইরের শক্তির নতুন স্নায়ুযুদ্ধের ঝুঁকির মুখে পড়ছে। সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার উচিত ঐক্যবদ্ধভাবে বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নের জন্য আরো নিশ্চয়তা দেয়া এবং ইতিবাচক শক্তি যোগানো। তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের জনগণের সুন্দর জীবনের সদিচ্ছা হলো আমাদের দর্শন। শান্তি, উন্নয়ন, সহযোগিতা ও অভিন্ন কল্যাণ হলো যুগের প্রবণতা, যা বাধাগ্রস্ত করা যায় না। ভাষণে তিনি এসসিও দেশগুলোর মধ্যে নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেন করার কোটা বাড়ানো, উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, সন্ত্রাসদমন, মাদকপাচার রোধ থেকে শুরু করে ডিজিটাল নিরাপত্তা, জৈব নিরাপত্তা এবং মহাকাশ নিরাপত্তাসহ নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারের পরামর্শ দেন।
প্রসঙ্গত, নব্বইয়ের দশকের শুরুতে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ৩টি দেশ, কিরগিজস্তান, কাজাখস্তান এবং তাজিকিস্তানকে সঙ্গে নিয়ে চীন একটি নতুন জোট গড়ে। এই দেশগুলোর সঙ্গে চীনের প্রায় ৩,৫০০ কিলোমিটারের সীমান্ত রয়েছে। কূটনৈতিক মহলের একাংশের মতে, প্রাথমিকভাবে চীনের লক্ষ্য ছিল মধ্য এশিয়ার ওই নতুন দেশগুলোয় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং ইসলামি কট্টরপন্থার প্রসার প্রতিরোধ। পরে নিজের শিনজিয়াং প্রদেশের আন্দোলন দমনে মুসলিম প্রধান ৩ দেশের আপত্তি এড়ানো এবং ওই অঞ্চলে মজুত প্রাকৃতিক সম্পদের উপর দখলদারিও বেইজিংয়ের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়।
সেই প্রেক্ষাপটে ১৯৯৬ সালে শান্তি, নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে চীন, রাশিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান এবং তাজিকিস্তান যৌথ ভাবে ‘সাংহাই ফাইভ’ গড়ে তোলে। ২০০১-এ উজবেকিস্তান এই জোটে যোগ দেয় এবং সংস্থাটির নাম বদলে হয় সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)। ২০১৫-তে মূলত মস্কোর উদ্যোগে ভারত এই প্রভাবশালী আঞ্চলিক রাষ্ট্রগোষ্ঠীর সদস্য হতে পারলেও, নয়াদিল্লিকে চাপে রাখতে চীন একই সঙ্গে পাকিস্তানকে এই সংস্থার অন্তর্ভুক্ত করে। এবার ইরানও এসসিওতে যোগ দিয়েছে এবং বেলারুশ সংস্থাটির সঙ্গে স্মারকলিপি স্বাক্ষর করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।