আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চীনে বিয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সহজ করতে এবং দম্পতিদের আর্থিক চাপ কমাতে নতুন কিছু ব্যবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার চীনের সরকার এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণের কথা জানায়, যা দেশটির কমে যাওয়া জন্মহার বাড়ানোর সর্বশেষ প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
চীনে বিয়ের বাইরে সন্তান জন্ম দেওয়া অত্যন্ত বিরল। সামাজিক বাধা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে দম্পতিরা বিয়ে ও সন্তান গ্রহণে অনাগ্রহী হয়ে পড়ছেন। এ সমস্যা মোকাবিলায় সরকার ইতিমধ্যে নগদ প্রণোদনা ও শিশুর যত্নের জন্য নতুন অবকাঠামো তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।
নতুন নিয়ম কী?
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন থেকে দম্পতিরা তাদের নিজস্ব বাসস্থান থেকেই বিয়ের নিবন্ধন করতে পারবেন। আগে তাদের বর বা কনের জন্মস্থান অনুযায়ী নির্দিষ্ট এলাকায় গিয়ে নিবন্ধন করতে হতো, যা অনেকের জন্য ভ্রমণ ও আর্থিকভাবে ব্যয়বহুল হয়ে উঠত।
সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভি এবং রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, ‘‘এই পরিবর্তনটি বিশেষভাবে উপকারী হবে তাদের জন্য, যারা জন্মস্থান ছেড়ে অন্যত্র বসবাস ও কাজ করছেন, বিশেষ করে তরুণদের জন্য।’’
বিয়ে ও জনসংখ্যা সংকট
চীনে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ২০২৪ সালে বিয়ের সংখ্যা এক-পঞ্চমাংশ কমে যায় এবং এটি টানা তৃতীয় বছর জনসংখ্যা হ্রাসের হারকে বাড়িয়ে তোলে। এই প্রবণতা মোকাবিলায় চীন সরকারের নতুন পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে যৌতুক ও বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত খরচের বিরুদ্ধে প্রচারণা।
যৌতুকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান
চীনের কিছু অঞ্চলে বিয়ের সময় বরপক্ষকে বিশাল অঙ্কের যৌতুক দিতে হয়, যা অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে এবং সামাজিক বৈষম্য বাড়ায়। নতুন নিয়মের অধীনে, এই প্রবণতা রোধে সরকারের তরফ থেকে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম চালানো হবে।
বিয়ে করতে দেরি কেন?
তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিয়ে ও সন্তান গ্রহণে অনীহার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো বিয়ের আগে অ্যাপার্টমেন্ট কেনার জন্য সঞ্চয়ের অভাব। অনেক তরুণেরই স্বল্প আয়ের কারণে বাড়ি কেনা সম্ভব হয় না, যা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে দেরির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
উচ্চ শিক্ষার ব্যয়বহুল খরচও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বিশেষ করে প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে টিকে থাকার জন্য দীর্ঘ শিক্ষাজীবনের প্রয়োজন হয়, যা অনেক সময় বিয়ের পরিকল্পনাকে পিছিয়ে দেয়।
শিশুর ডে কেয়ার ও প্রাইভেট টিউশনের খরচও একটি বড় বিষয়। চীনে শিক্ষা নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা রয়েছে এবং অনেক পরিবারই মনে করে যে, সন্তানের ভালো ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে তাদের বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হবে। ফলে অনেক দম্পতিই সন্তান নেওয়ার আগে বারবার চিন্তা করছেন।
সরকারের পরিকল্পনা কী?
সিসিটিভি জানায়, ‘‘জনগণের প্রত্যাশার প্রতি ভালোভাবে সাড়া দিতে এবং পাইলট প্রকল্পগুলোর সফলতার ভিত্তিতে, দেশব্যাপী বিয়ে নিবন্ধনের এই নতুন নিয়ম বাস্তবায়ন করা হবে।’’
চীনের নাগরিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিয়ের খরচ কমানোর জন্য বিশেষ প্রচারাভিযান চালাবে। এর পাশাপাশি, সরকারের পক্ষ থেকে দম্পতিদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে।
সূত্র: এএফপি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।