আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের ইতি টানতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বেইজিং কোনো চুক্তি করতে ব্যর্থ হলে চীনা পণ্যে আরো শুল্কারোপের হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আলোচিত সীমিত পর্যায়ের প্রাথমিক চুক্তিতে বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতি পৌঁছাতে না পারলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরো শ্লথ হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। খবর রয়টার্স।
এক বছরের বেশি সময় ধরে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের ইতি টানতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন চীন ও মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিরা। শীর্ষ অর্থনৈতিক শক্তি দুটির বিরাজমান বাণিজ্যিক অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে আলোচনা চলছে ‘প্রথম পর্যায়ের’ বাণিজ্য চুক্তির। প্রথম পর্যায়ের এ চুক্তি সম্ভব হলে লাভবান হবে উভয় পক্ষ। চাঙ্গা হয়ে উঠবে দুই দেশসহ বৈশ্বিক আর্থিক বাজারগুলো।
প্রথম পর্যায়ে ‘সীমিত’ বাণিজ্য চুক্তির কথা থাকলেও তা উল্লেখযোগ্যভাবে সম্প্রসারিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিজেদের পণ্যে আরোপিত শুল্ক বড় রকমের প্রত্যাহার চাইছে বেইজিং। এ পরিস্থিতিতে বিনিময়ে চীন কী প্রস্তাব করছে, সেটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেইজিংয়ের দাবি-দাওয়া মেনে নিলে প্রথম পর্যায়ের বাণিজ্য চুক্তির আকার প্রত্যাশার চেয়ে বড় হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এদিকে প্রথম পর্যায় বা যেকোনো বাণিজ্য চুক্তির জন্য বাণিজ্যযুদ্ধের শুরু থেকে ওয়াশিংটন কর্তৃক চীনা পণ্যে আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহার গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হিসেবে জুড়ে দিয়েছে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। চীনের দাবি-দাওয়া খানিকটা বিস্মিত করেছে মার্কিন কর্মকর্তাদের। তবে ওয়াশিংটনের প্রত্যাশানুযায়ী বেইজিং মার্কিন কৃষিপণ্যের ক্রয়, দেশটির আর্থিক সেবা শিল্পে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশাধিকার বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি এবং মেধাস্বত্ব আইন মেনে চলার গ্যারান্টির বিনিময়ে চীনের দাবি পূরণ হতে পারে।
ওয়াশিংটনের শুল্ক প্রত্যাহার সম্পর্কে বিষয়সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তি বলেন, চীনা পণ্যে আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহার করে নিতে ট্রাম্প প্রস্তুত। এছাড়া মধ্য ডিসেম্বর থেকে চীনা পণ্যে নতুন করে শুল্কারোপের সিদ্ধান্তও বাতিল করতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে বেইজিং কর্তৃপক্ষ বড় ধরনের ছাড় দিলেই ১৫ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হতে যাওয়া সম্ভাব্য ১৫ হাজার ৬০০ কোটি ডলার শুল্কারোপ বাতিল করতে পারে ওয়াশিংটন।
এদিকে দুপক্ষের দরকষাকষি সম্পর্কে ওয়াশিংটনে আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটে কর্মরত চীনা বিশেষজ্ঞ ডেরেক সিজারস বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট চীনের সঙ্গে বড় চুক্তি করতে আগ্রহী, যেখানে অনেকগুলো সুযোগ থাকবে। এ বিশেষজ্ঞ বলেন, চীনের সঙ্গে আলোচিত সীমিত আকারের চুক্তির চেয়ে বড় চুক্তি করতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন।
মার্কিন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শক হিসেবে কর্মরত সিজারস জানান, বাণিজ্যযুদ্ধের শুরু থেকে চীনা পণ্যে আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহার করা বা না করাটা ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্ত কেবল তখনই নেয়া হতে পারে, যদি ট্রাম্প মনে করেন তা থেকে আগামী নির্বাচনে তিনি উপকৃত হতে পারবেন। অন্যদিকে চীনা পণ্যে আরোপিত শুল্ক কতটা প্রত্যাহার করা হবে, তা চীন কী পরিমাণ মার্কিন কৃষিপণ্য কিনবে তার সুনির্দিষ্ট রূপরেখার ওপর নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউজের কয়েকজন উপদেষ্টা।
চীনের মার্কিন কৃষিপণ্য ক্রয়ের বিষয়টা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কৃষিপণ্য নিয়ে চীনের সঙ্গে কী চুক্তি হচ্ছে তা ওহাইও, মিশিগান, পেনসিলভানিয়ার মতো কৃষিপ্রধান রাজ্যে জেতার জন্য মুখ্য ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে বেইজিং কী পরিমাণ মার্কিন কৃষিপণ্য কিনতে চায়, তার সুনির্দিষ্ট রূপরেখা চাওয়া সত্ত্বেও এ সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু বলেননি চীনা বাণিজ্য প্রতিনিধিরা। তবে নিজেদের চাহিদার ভিত্তিতে মার্কিন কৃষিপণ্য কেনার কথা ইশারা-ইঙ্গিতে জানিয়েছে চীন।
যুক্তরাষ্ট্রকে কী কী সুবিধা বা ছাড় দেয়া হবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে না বললেও ওয়াশিংটনের কাছে নিজেদের দাবি স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করেছে বেইজিং। সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে নিজেদের পণ্যে ১৫ শতাংশ হারে আরোপিত ১২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার শুল্ক প্রত্যাহার চায় চীন। এছাড়া দেশটির শিল্প ও ভোক্তা পণ্যে ২৫ শতাংশ হারে আরোপিত আড়াই হাজার কোটি ডলারেরও খানিকটা প্রত্যাহার চান বেইজিংয়ের বাণিজ্য প্রতিনিধিরা।
অন্যদিকে ওয়াশিংটনভিত্তিক এক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, চীন বছরে ৪-৫ হাজার কোটি ডলার মার্কিন কৃষিপণ্য কিনতে সম্মত হলে বাণিজ্যযুদ্ধের শুরু থেকে দেশটির ওপর আরোপিত সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহার করে নিতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন। প্রসঙ্গত, অক্টোবরে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ট্রাম্প।
উল্লেখ্য, ট্রাম্প ও চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী লিয়ু হি অক্টোবরে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নিজেদের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার ঘোষণা দিলেও এখনো তা সম্ভব হয়নি। এদিকে প্রথম পর্যায়ের বাণিজ্য চুক্তি আগামী বছরের আগে সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
খবর : বণিক বার্তা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।