প্রবাসী ডেস্ক: বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণ উদ্যোক্তা ফাহিম সালেহকে হত্যার ঘটনায় তার ব্যক্তিগত সহকারী টাইরেস ডেভন হসপিলকে গ্রেফতার করেছে নিউইয়র্ক পুলিশ। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।
স্থানীয় সময় শুক্রবার ভোরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ফাহিম হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে। ২১ বছর বয়সী টাইরেস ফাহিমের এক লাখ মার্কিন ডলার ( বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮৫ লাখ) চুরি করেছিলেন।
বিষয়টি ফাহিম জেনে যাওয়ায় তাকে হত্যা করেন তার ব্যক্তিগত সহকারী টাইরেস।
এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, টাকা চুরির ঘটনা পুলিশকে অবহিত করেননি ফাহিম। তিনি চুরি করা অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তার সহকারী টাইরেসকে একটি পরিকল্পনা দেন। ফাহিমের ক্ষুদে বার্তায় এই আলোচনার একাংশ পাওয়া গেছে।
গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, ফাহিম সালেহর বোন যখন ওই অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকছিলেন, হত্যাকারী তখন লাশ টুকরো করছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকালে ম্যানহাটানের লোয়্যার ইস্ট সাইডে ৩৩ বছর বয়সী ফাহিমের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে তার খণ্ড-বিখণ্ড লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
বাংলাদেশের পাঠাওয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে নাইজেরিয়ায় লাগোসে যৌথ উদ্যোগে অ্যাপভিত্তিক মোটরবাইক রাইড সার্ভিস ‘গোকাডা’ চালু করেন। গত বছর সাড়ে ২২ লাখ ডলারে ইস্ট হিউস্টন স্ট্রিটের ওই বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন তরুণ এই মিলিয়নেয়ার।
পুরো একদিন ফাহিমের কোনো সাড়া না পেয়ে মঙ্গলবার ওই অ্যাপার্টমেন্টে গিয়েছিলেন তার বোন। ভেতরে ঢুকে তিনি ভয়ংকর এক দৃশ্য দেখতে পান। ফাহিমের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ ছিল কেটে টুকরো করা।
কিছু টুকরো বড় আকারের গার্বেজ ব্যাগেও ভরে রাখা হয়েছিল। পাশেই ছিল একটি বৈদ্যুতিক করাত, তখনও সেটির তার ছিল সকেটের সঙ্গে যুক্ত। এক পুলিশ কর্মকর্তার বরাতে নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, ব্যক্তিগত সহকারী টাকা চুরি করেছেন বুঝতে পেরেও পুলিশে কোনো অভিযোগ করেননি ফাহিম সালেহ, বরং ওই টাকা ফেরত দেয়ার জন্য সময় বেঁধে দিয়েছিলেন।
তদন্তকারীদের ধারণা, যেদিন ফাহিমের লাশ পাওয়া যায়, তার আগের দিন তাকে হত্যা করেন হসপিল। পরদিন তিনি ওই অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে গিয়েছিলেন লাশ টুকরো টুকরো করে ব্যাগে ভরে সরিয়ে ফেলার পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের চিহ্ন মুছে ফেলার জন্য।
কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার আগেই ফাহিমের বোন ওই ভবনে উপস্থিত হন এবং লবি থেকে কলিং বেল চাপেন। সে শব্দেই ঘাতক সবকিছু ফেলে ভবনের পেছনের দরজা ও সিঁড়ি ব্যবহার করে পালিয়ে যান। ওই অ্যাপার্টমেন্ট ভবন এবং আশপাশের সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখে তদন্তকারীদের ধারণা হয়েছে, ফাহিমের পিছু নিয়ে সোমবার ওই ভবনের এলিভেটরে উঠেছিলেন খুনি।
সে সময় তার পরনে ছিল তিন প্রস্থের কালো স্যুট, কালো শার্ট আর কালো টাই। তার মুখও কালো মুখোশে ঢাকা ছিল, হাতে ছিল একটি ডাফল ব্যাগ। অ্যাপার্টমেন্টে ঢোকার পর বৈদ্যুতিক স্টানগান ব্যবহার করে ফাহিম সালেহকে সে অচল করে ফেলে এবং পরে ছুরি মেরে তাকে হত্যা করে।
এলিভেটরের সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা গেছে, ব্যাটারিচালিত একটি ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ছিল খুনির সঙ্গে। নিজের উপস্থিতির চিহ্ন মুছে ফেলতে সেটা খুনি ব্যবহার করতে চেয়েছিল বলে পুলিশের ধারণা।
ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শেষে নিউইয়র্ক সিটির মেডিকেল এক্সামিনার বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, ঘাড় ও শরীরের ঊর্ধ্বাংশে একাধিক ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয় ফাহিমকে। আর যেভাবে তার লাশ টুকরো করা হয়েছে, তা দেখে একজন পুলিশ কর্মকর্তা নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছিলেন, এ কাজ কোনো পেশাদার খুনির বলে তারা সন্দেহ করছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।