নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর লালবাগে শিক্ষানবিস এক নারী চিকিৎসককে মারধর ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় করা মামলায় একজনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ভুক্তভোগীর অভিযোগ ও অন্যান্য আনুসঙ্গিক বিষয় সামনে রেখে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিকভাবে মারধরের শিকার নারীর অভিযোগ ও জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য যাচাই করা হবে। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। পলাতক অন্য দুই আসামিকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
তদন্ত শেষে প্রকৃত ঘটনা বলা যাবে বলে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর লালবাগ বেড়িবাঁধ সড়কে সুমাইয়া নাজিম (২৫) নামের ওই নারী চিকিৎসককে প্রাইভেট কারে করে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়। ওই সময় তাকে মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে চারজনের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় একটি মামলা করেন।
ভুক্তভোগী নারীর ভাষ্য, এক পরিচিতজনের ব্যবসা থেকে ধাপে ধাপে ১১ লাখ টাকা চুরির বিষয়টি ধরিয়ে দিলে ক্ষোভ থেকে তার ওপর হামলা করে মারধর ও শ্লীলতাহানি করা হয়। হামলাকারীরা সবাই পূর্বপরিচিত। ঘটনার পর নাজমুল হাসান ও মেহেদী হাসান আকাশ নামে দুজনকে গ্রেফতার করা হলে আদালত একজনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ও অন্যজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ ঘটনায় ওই নারীর অভিযোগ সংক্রান্ত একটি ভিডিও বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী সুমাইয়ার বাসা লালবাগ এলাকায়। তার বাবার নাম নাজিম উদ্দিন। অন্যদিকে, আসামিরা হলেন- রাব্বি হাসান খান (৩২), নাজমুল হাসান (২৭), মেহেদী হাসান আকাশ (২৭) ও মশিউর রহমান খান (৩৮)। মামলায় তাকে মারধর, শ্লীলতাহানি, সোনার অলংকার, নগদ টাকা ও এক লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন।
মামলার এজাহারে ওই নারী বলেন, হামলাকারীরা সবাই তার পূর্বপরিচিত। রাস্তায় কথা বলতে চাইলে তারা টেনে গাড়ির ভেতরে নিয়ে পেছনের আসনে বসান তাকে। এসময় তার ছোট ভাইকে রিকশা থেকে লাথি মেরে ফেলে দেওয়া হয়। তখন আশপাশে কেউ ছিল না। পরে গাড়ির দরজা দিয়ে তিনি নিচে পড়ে যান। একপর্যায়ে পাশের গ্যারেজের লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করেন। হামলা ও মারধরে কারণে তার কাপড় ছিঁড়ে গেছে এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম হয়েছে।
ভিডিওতে ওই নারী চিকিৎসক বলেন, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন শেষে রিকশায় লালবাগের বাসায় ফিরছিলেন। সঙ্গে তার ছোট ভাইও ছিলেন। এ সময় একটি প্রাইভেট কার এসে তাদের রিকশার গতি রোধ করে। নাজমুল ও আকাশ নামের দুজন গাড়ি থেকে নেমে তাকে রিকশা থেকে টেনে নামান। তখন গাড়ির ভেতরে হাসান ও মশিউর অবস্থান করেন। তারা সবাই তার পূর্বপরিচিত।
ভিডিওতে ওই নারী চিকিৎসক বলেন, এক সময় তিনি তার এক কাজিনের ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। হাসান ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ছিলেন। তিনি হাসানের চুরির ঘটনা ধরিয়ে দিলে হাসান ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এসব ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় কয়েকটি চুরির মামলা হয়, যেগুলোতে তিনি সাক্ষী ছিলেন।
মারধরের শিকার নারী চিকিৎসক সুমাইয়া বলেন, এক সময় তিনি তার কাজিনের ব্যবসার হিসাব দেখাশুনা করতেন। হিসাব মিলিয়ে দেখতে পান বিভিন্ন সময় ধাপে ধাপে ১১ লাখ টাকা সরিয়ে নিয়েছে হাসানসহ অন্যরা। তিনি বিষয়টি মালিককে ধরিয়ে দিলে হাসানদের বিরুদ্ধে মামলা হয় ও চাকরিচ্যুত করা হয়। এ কারণেই মূলত ক্ষুব্ধ হয়ে তার ওপর হামলা করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লালবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আনিছুর রহমান বলেন, ভুক্তভোগী নারীর মামলার পরিপ্রেক্ষিতে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত বৃহস্পতিবার হাসানকে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। শুক্রবার তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ শনিবার হাসনকে আদালতে হাজির করা হবে। এছাড়া বাইরে থাকা দুই আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রিমান্ডে ওই নারীর অভিযোগ ও পূর্ববর্তী চুরির ঘটনাসহ সামগ্রিক বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হামলার কারণ, ইন্ধনদাতাসহ নানা বিষয় জানার চেষ্টা করা হয়। খুব শিগগির এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো যাবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।