জুমবাংলা ডেস্ক : জেলার চারটি উপজেলায় প্রায় শতাধিক ক্লিনিক, প্যাথলজি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম চলছে। কিন্তু অনুমোদন আছে হাতেগোনা মাত্র কয়েকটির। অথচ বছরের পর বছর এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
কোনো জবাবদিহিতা নেই বলেই শহরের অলিতে গলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে অবৈধ ক্লিনিক প্যাথলজি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসায় মানুষের মৃত্যুর অভিযোগও রয়েছে। কিন্তু এসব দেখার যাদের দায়িত্ব সেই স্বাস্থ্য বিভাগও রহস্যজনক কারণে চুপ রয়েছে। খবর-ইউএনবি’র
অনুসন্ধানে দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসের সামনেই বিশাল সাইনবোর্ড। নাম আঁখিতারা জেনারেল হাসপাতাল। বহুতল ভবনের এই ক্লিনিকটির মালিক এক ডাক্তার দম্পতি। যাদের একজন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. হোসনে জারি তহমিনা আঁখি। ক্লিনিকটিতে প্রসূতি মায়েদের সিজার, জরায়ু ও পিত্তথলির পাথর অপারেশনসহ জটিল কঠিন রোগের অপারেশন চালিয়ে আসছেন বেশ কিছুদিন থেকে। কিন্তু এই ডাক্তার দম্পতির ক্লিনিকের নেই কোনো বৈধ অনুমোদন।
চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন ক্লিনিক প্যাথলজি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সরেজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে চোখে পড়ে ভয়াবহ অনিয়মের চিত্র। বিশাল সাইনবোর্ড লাগিয়ে নামকরা সব বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নাম-পদবী লেখা রয়েছে। তারা নাকি এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত রোগী দেখেন এবং অস্ত্রো্পচারও করে থাকেন। কিন্তু এদের বেশির ভাএগরই নেই স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন। যেসব বড় বড় ডাক্তারদের নাম লেখা রয়েছে তারাও বসেন না ক্লিনিকগুলোতে। অনেক ক্লিনিকে গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনও করানো হচ্ছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াই। যার কারণে এসব অবৈধ ক্লিনিকগুলোতে প্রতিনিয়ত ভুল চিকিৎসায় মানুষের মৃত্যুর তালিকাও বেশ দীর্ঘ।
অনুসন্ধানে আরও দেখা যায়, দুয়েকটি ক্লিনিকের অনুমোদন থাকলেও তারাও সরকারি কোনো নিয়ম কানুন মানছেন না। ১০ শয্যার অনুমোদন নিয়ে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে ২৫-৩০ শয্যা আসন দিয়ে। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রোপচারের রুমগুলোরও অবস্থা করুন।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জনের অফিসের প্রাপ্ত তালিকায় দেখা গেছে, জেলার চারটি উপজেলাতে ক্লিনিকের সংখ্যা আছে মোট ৪৯টি। এর মধ্যে সদরে ১৪টি, আলমডাঙ্গা উপজেলাতে ১৭টি, দামুড়হুদায় ৯টি ও জীবননগর উপজেলায় ৯টি। কিন্তু এই ৪৯টির মধ্যে অনুমোদন আছে মাত্র ১৩টি ক্লিনিকের। যদিও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তালিকার সাথে বাস্তব অবস্থার কোনো মিল নেই।
এদিকে প্যাথলজি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অবস্থা আরও ভয়াবহ। যত্রতত্র ছোট ছোট ঘরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই চলছে সাধারণ মানুষের শরীরের নানান ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। প্যাথলজি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্টের থাকার কথা থাকলেও কিন্তু দায়িত্ব পালন করেন হাতুড়ে লোকজন। ফলাফল প্রতিনিয়ত ভুল রিপোর্ট। প্রতিবাদে ভাঙচুর হাতাহাতির ঘটনাও নিত্যদিনের চিত্র।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বলছে, জেলার চারটি উপজেলাতে মোট ৬৬টি প্যাথলজি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কার্যক্রম চালাচ্ছে। কিন্তু অনুমোদন রয়েছে মাত্র ১৩টির। এখানেও সরকারি তালিকার চেয়ে বাস্তবের চিত্র আকাশ-পাতাল। প্রশ্ন হচ্ছে অনুমোদন না নিয়ে কীভাবে এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের পর বছর তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে।
জেলার প্রবীণ সংবাদকর্মীর শরীফ উদ্দীনের অভিযোগ, ‘গত কয়েক বছরে চুয়াডাঙ্গা জেলাতে এসব অবৈধ ক্লিনিকগুলোতে ভুল চিকিৎসায় অসংখ্য রোগী মারা গেছে। রোগীর শরীরের মধ্যে গজ ব্যান্ডেজ রেখে সেলাই করে রোগীকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়ার ঘটনাও বিভিন্ন গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে।’ তারপরও কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতি প্রশ্ন এই গণমাধ্যমকর্মীর।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহবুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের উদাসীনতায় আমরা চরমভাবে উদ্বিগ্ন। মানুষের জীবন মরণের প্রশ্নের বিষয়টি নিয়ে যারা বা যেসব প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে তাদের জবাবদিহিতার একটা জায়গা অবশ্যই আছে। কিন্তু চুয়াডাঙ্গার স্বাস্থ্য বিভাগ দুঃখজনকভাবে সেই জায়গাটিতে অকৃতকার্য হচ্ছেন। যা কোনোভাবেই আমাদের কাম্য নয়।’
সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান বলেন, ‘অভিযোগটি সত্যিই দুঃখজনক। কিন্তু আমি চুয়াডাঙ্গায় সদ্য যোগদান করেছি। এখনও সব কিছু ভালো করে বুঝতেই পারেনি।’
তবে তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, ‘কোনোভাবেই অনিয়ম বরদাশত করা হবে না। খুব শিগগিরই তালিকা করে এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।