ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম : বন্দরনগরী চট্টগ্রামের উত্তর হালিশহরের আনন্দবাজার এলাকায় বে টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ১৪ হাজার ৯০৮ দশমিক ৮৩ কোটি টাকার একটি সহায়তা প্রকল্প অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সরকার।
বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (বিটিএমআইডিপি) শীর্ষক প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় একটি ব্রেকওয়াটার ও নেভিগেশন অ্যাকসেস চ্যানেল নির্মাণ করা হবে। এছাড়া কমন ফ্যাসিলিটিজ, সংযোগ সড়ক, রেলপথ, পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ স্থাপন, টার্মিনালের অভ্যন্তরীণ রাস্তা এবং একটি সার্ভিস জেটি নির্মাণ করা হবে এ প্রকল্পের আওতায়।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি ২০৩১ সালের জুনের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে আশা করা হচ্ছে তার আগেই তিনটি বে টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
তিনটি টার্মিনালের মধ্যে দুটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) ব্যবস্থায় নির্মিত হবে। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে পিপিপি কর্তৃপক্ষ এবং এন্টারপ্রাইজ অভ সিঙ্গাপুরের মধ্যে টার্মিনাল ১-এর জন্য একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়েছিল। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে টার্মিনাল ২ নির্মাণে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে আরেকটি এমওইউ সই হয়েছিল।
এছাড়া একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আবুধাবি পোর্টস গ্রুপের একটি এমওইউ সই হয়েছে গত বছরের মে মাসে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, প্রস্তাবিত অবকাঠামো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাজ শুরু না করলে পিপিপির আওতায় টার্মিনাল নির্মাণে আগ্রহী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো আস্থা হারাবে। এই করণে প্রকল্পটিতে গুরুত্ব দিচ্ছে বর্তমান সরকার।
এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক প্রাথমিকভাবে বিটিএমআইডিপির আওতায় ব্রেকওয়াটার ও নেভিগেশন চ্যানেল নির্মাণের জন্য ৬৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে। এই প্রকল্পের জন্য মোট ৮৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণের প্রয়োজন হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। অতিরিক্ত ঋণও বিশ্বব্যাংক দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বলে সম্প্রতি এই প্রকল্পটি নিয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা গেছে।
প্রকল্প প্রস্তাব অনুসারে, প্রস্তাবিত বিটিএমআইডিপিতে ব্রেকওয়াটার নির্মাণে ৮ হাজার ২৬৯.৮৫ কোটি টাকা, নেভিগেশন অ্যাকসেস চ্যানেল নির্মাণে ১ হাজার ৯৭৯.৪৫ কোটি টাকা, এইডস টু নেভিগেশন স্থাপনে ৫৭.৭০ কোটি টাকা এবং কমন ফ্যাসিলিটিজ ও অভ্যন্তরীণ সংযোগের জন্য ৩ হাজার ৪৩৪.৬৮ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে।
সরকার ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে বে টার্মিনাল নির্মাণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। একই বছরে জার্মানির হামবুর্গ পোর্ট কনসালট্যান্ট প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করে। এরপর ২০১৭ সালে পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও মাস্টারপ্ল্যান তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পরে ২০২১ সালে কুনহুয়া নামক একটি কোরিয়ান কোম্পানিকে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং মাস্টারপ্ল্যান তৈরির জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়, যা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।
ভবিষ্যতের চাহিদা মেটাতে এবং প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই), আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম এবং জাতীয় উন্নয়নকে সহায়তা করতে বে টার্মিনালটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) একনেকে অনুমোদন হওয়ার পরপরই বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের ঋণচুক্তি হবে। এরপর পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করবেন তারা। শিগগির মূল কাজ শুরু করতে পারবে চট্টগ্রাম বন্দর।
চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনাল প্রকল্পটি একনেকে উঠছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির প্রি–একনেক সম্পন্ন হয়েছে। একনেকে ডিপিপি অনুমোদনের পর বিশ্বব্যাংকের সাথে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এরপরই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ পুরোদমে শুরু হবে। অবকাঠামোগত সম্ভাবনার বিশাল এই প্রকল্পটির নকশা, অর্থায়ন, ভূমি অধিগ্রহণ ও প্রশাসনিক কাজ এগিয়েছে অনেক দূর।
জানা গেছে, প্রতিটি কাজের জন্য আলাদা আলাদা প্রকল্প করে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা চলছিল; কিন্তু কোনো কাজেই প্রত্যাশিত গতি তৈরি হয়নি।
প্রকল্পের তিনটি বড় কাজকে একই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করে ‘বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ (বিটিএমআইডিপি) গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটিতে সমুদ্র চ্যানেল খনন, ব্রেকওয়াটার নির্মাণ, রেল ও সড়ক সংযোগ এবং নৌ চলাচল অবকাঠামো উন্নয়নের কার্যক্রম রয়েছে। প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা দেবে বিশ্বব্যাংক। বাকি অংশ অর্থায়ন করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
প্রস্তাবিত বিটিএমআইডিপি প্রকল্পে ব্রেকওয়াটার নির্মাণে ৮ হাজার ২৬৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, নেভিগেশন অ্যাকসেস চ্যানেল নির্মাণে ১ হাজার ৯৭৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, নেভিগেশনে সহায়ক যন্ত্র স্থাপনে ৫৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং রেল ও সড়ক সংযোগসহ অন্যান্য স্থাপনার সাথে সংযোগ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪৩৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
২০২৮ সালের মধ্যে ব্রেকওয়াটার ও চ্যানেল নির্মাণ শেষ হবে। ২০৩১ সালের মধ্যে বে টার্মিনালে জাহাজ নোঙর করার আশা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।