বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামের সেই পুরোনো ছবিটা আজও অনেকের মনে গেঁথে আছে। কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লুইস এনরিকে, পাশে তাঁর ছোট্ট মেয়ে জানা, হাতে বার্সেলোনার লাল-নীল-হলুদ পতাকা। বাবার চওড়া হাসিতে ফুটে উঠেছিল গর্ব আর আনন্দের মিশেল।
দশ বছর পর, সেই এনরিকেকে দেখা গেল এক ভিন্ন রূপে—পিএসজির ডাগআউটে। মিউনিখের অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় শেষ বাঁশি বাজতেই দুই হাত তুলে আনন্দে আত্মহারা তিনি। কারণ, মাত্র কিছুক্ষণ আগেই তাঁর দল ইতিহাস গড়েছে—ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে প্রথমবারের মতো উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি)।
এই জয় কেবল ফুটবলের পরিসংখ্যান নয়, এক বাবার হারানো মেয়েকে ঘিরে নির্মিত এক নিঃশব্দ আবেগের পূর্ণতা।
২০১৫ সালের সেই ছবি যেখানে জানা বার্লার মাঠে বার্সার পতাকা পুঁতেছিল, আজ তা যেন ফিরে এসেছে নতুন রূপে। ২০১৯ সালে হাড়ের ক্যানসারে ৯ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে যাওয়া জানা আজ নেই, তবে তাঁর স্মৃতি বেঁচে আছে এনরিকে আর তাঁর প্রতিটি সাফল্যে।
সেই জানুয়ারিতে স্প্যানিশ দৈনিক মার্কা-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এনরিকে বলেছিলেন, ‘বার্লিনে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের পর আমার সঙ্গে তার একটি অবিশ্বাস্য ছবি মনে আছে। মাঠে বার্সেলোনার পতাকা পোঁতার ছবি। আশা করি, পিএসজির সঙ্গেও এটা করতে পারব।’
অদ্ভুতভাবে, সেই কথাই সত্যি হলো। ম্যাচ শেষে এনরিকের গায়ে ছিল ‘জানা ফাউন্ডেশন’-এর কালো টি-শার্ট, যার বুকজুড়ে বাবা–মেয়ের পিএসজির পতাকা পুঁততে দেখা যায় একটি স্কেচে। আর গ্যালারিতে ভেসে উঠল বিশাল এক তিফো, যেখানে দেখা গেল এনরিকে ও তাঁর প্রয়াত মেয়ে জানাকে—বাবা মাঠে পতাকা পুঁতছেন, পাশেই দাঁড়িয়ে ৮ বছর বয়সী জানা, গায়ে পিএসজির ৮ নম্বর জার্সি।
এই তিফো দেখে মিক্সড জোনে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি এনরিকে, ‘খুব ভালো লাগছে। সমর্থকেরা আমার পরিবারের জন্য যে ব্যানার করেছেন, সেটা খুবই আবেগপূর্ণ। তবে আমি সব সময় মেয়ের কথাই ভাবি।’
এরপর বলেন এমন কিছু কথা, যা প্রতিটি বাবার হৃদয়ে নাড়া দেয়, ‘মেয়েকে মনে রাখতে আমার চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের দরকার নেই। সে সব সময় আমাদের সঙ্গেই আছে, বিশেষ করে যখন আমরা হেরে যাই।’
জয়ের সময় জানা পাশে ছিল কি না, হয়তো কেউ জানে না। তবে এনরিকের চোখে–মনে সে তো ছিলই। হয়তো এ কারণেই কোচের হাত ধরে ইতিহাস গড়েছে পিএসজি। আর সে ইতিহাসে লেখা থাকবে এক বাবা ও হারিয়ে যাওয়া মেয়ের মধ্যকার ভালোবাসার এক নীরব কিন্তু গাঢ় অধ্যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।