চ্যালেঞ্জ যত বড়, মজাটাও তত বড়!

বিনোদন ডেস্ক : নারীদের সার্ফিং নিয়ে প্রথমবারের মত বাংলাদেশে নির্মিত হলো ‘ন ডরাই’ ছবি। সত্য ঘটনা অবলম্বনে ছবির চিত্রনাট্য করেছেন বুনোহাঁস, পিংক ছবির চিত্রনাট্যকার কলকাতার শ্যামল সেনগুপ্ত এবং ছবিটি পরিচালনা করেছেন তানিম রহমান অংশু। সম্প্রতি প্রকাশিত পোস্টারে রীতিমত তাক লাগিয়ে দিয়েছে দর্শকদের মনে। এদিকে কান চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রদর্শিত হয়েছে ছবিটি। এরইমধ্যে ছবিটি তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

গেল নভেম্বরের দিকে শুরু হওয়া এই ছবিটির শুটিং শেষ হয়েছে চলতি বছরের মার্চ মাসে। সিনেমার প্রায় নব্বই শতাংশ দৃশ্যধারণ হয়েছে কক্সবাজারে। ছবিতে থাকছে চট্টগ্রামের ভাষা। এই ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটতে যাচ্ছে মডেল সুনেরাহ বিনতে কামালের। মডেলিং দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু হলেও দীর্ঘদিন পর নিজের মনের মত চরিত্র নিয়ে হাজির হতে যাচ্ছেন রুপালি পর্দায়।

সুনেরাহ বলেন, এটা আমার প্রথম ছবি। আমি খুবই নার্ভাস। এই প্রজেক্টটার জন্য আমি অনেক কষ্ট করেছি। এত কষ্ট আমি আমার জীবনেও করিনি। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের খুব শখ আমার। এতদিন পর্যন্ত মনের মত কোন প্রজেক্ট পাচ্ছিলাম না যে কাজ করবো। শতভাগ নিজের ভেতর থেকে অনুভব না করা পর্যন্ত আমি কাজ করতে চাই নি। এই প্রজেক্টটার গল্প ও চরিত্র আমার খুবই পছন্দ হয়েছে। এই ছবির স্ক্রিপ্টটা আমার কাছে আসার পর আমি সময় নিয়েছি।

ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে তারপর কাজটা করেছি। এখানে আমার চরিত্রের নাম আয়েশা। আয়েশা এমন একটা চরিত্র যে তার স্বপ্ন পূরণ করতে চায় কিন্তু পারিবারিক বা সামাজিক বাঁধার কারণে সেটা করতে পারে না। তার সে কষ্টটা ও জার্নিটা এখানে আছে। আমি মনে করি প্রত্যেকটা মেয়ের মধ্যেই এই আয়েশা চরিত্রটা আছে। সব মেয়ে এটার মাঝে নিজেকে খুঁজে পাবে। কারণ চলার পথে মেয়েদেরকে অনেক বাঁধা পেরিয়ে তারপর সামনে এগিয়ে যেতে হয়। এই ছবিটা আমার জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং কারণ চরিত্রটা পুরো আমার বিপরীত। বেসিক্যালি আমি একজন মডেল, একটা সম্ভ্রান্ত পরিবার থেকে এসেছি আর ছবির চরিত্রটা একদম লোকাল। আমার কাছে মনে হলো এটাই চান্স, এই চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করার।

তিনি বলেন, ছবিটির জন্য অনেক পরিশ্রম করেছি। টানা তিন মাস কক্সবাজারে সার্ফিংয়ের ট্রেনিং করেছি। নোংরা পানিতে সার্ফিং করেছি। শরীরে ফুসকা পরে গিয়েছিল। পরে মনে হলো কাজটা করবই না। আবার ভাবলাম এতদূর আসার পর যদি পিছনে ফিরে যাই তাহলে নিজের কাছেই নিজে হেরে যাব। এটাই সুযোগ নিজেকে প্রমাণ করার। স্কিনে ফুসকা পড়া একটা মেয়ের জন্য অনেক সমস্যা। আমার অনেক কষ্ট হয়েছিল। তারপর ফ্যামিলি ছেড়ে চাকরি ছেড়ে গিয়ে কাজটা করেছি। তারপর চাটগাইয়া ভাষা শিখেছি। তিনমাস ট্রেনিংয়ের পর আরও তিনমাস সময় লেগেছে চাটগাইয়া ভাষা শিখতে। চ্যালেঞ্জটা নিয়েছি। আসলে চ্যালেঞ্জ যত বড় হয়, মজাটাও তত বড় হয়। সব মিলিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা খুবই ভালো ছিল।

তিনি আরও বলেন, সিনেমাতে যেহেতু পা দিয়েছি অবশ্যই সাহস নিয়েই দিয়েছি। আমি মনে করি দর্শকরা আমাকে গ্রহণ করবেন। আমি যেহেতু মডেলিং করেছি সবসময় গ্ল্যামারাস লুকেই দেখা গিয়েছে আমাকে। এই ছবিতে আয়েশা যে চরিত্রটা সেটা একদমই গ্রামের একটা মেয়ে। আমার গ্ল্যামারাস লাইফ থেকে বের হয়ে গ্রামের একটা চরিত্রে নিজেকে প্রমাণ করতে চেষ্টা করেছি।

নিজেকে ভাঙ্গতে চেষ্টা করেছি। আমি মনে করি, গ্ল্যামারাস ওয়ার্ল্ডের বাইরে গিয়ে এমন একটা গ্রামের চরিত্রে কাজ করারটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। এখন পর্যন্ত আমি খুব ভালো সাড়া পেয়েছি ছবিটির জন্য। আমি আশা করছি দর্শকরা আমাকে মন থেকে ভালবেসে গ্রহণ করবেন। দর্শকরা যখন ছবিটা দেখবেন তখন বুঝবেন আমি কতটা কষ্ট করেছি। কাজ করার পুরো সময়টা আমি আয়েশা চরিত্রে ডুবে গিয়েছিলাম এবং এই আয়েশা থেকে সুনেরাহতে ফিরতে আমার অনেক সময় লেগেছে।

সুনেরাহ ছাড়াও এই ছবিতে অভিনয় করেছেন শরিফুল রাজ। এই ছবিতে থাকছে পাঁচটি গান। আগামী অক্টোবরে ছবিটি দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান ছবির নির্মাতা। সার্ফিং নিয়ে এই ছবির মধ্য দিয়ে প্রথমবার প্রযোজনায় এসেছেন স্টার সিনেপ্লেক্স। ছবিটির প্রযোজক হিসেবে আছেন স্টার সিনেপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান।

Previous Article

বোর্ড কিংবা অধিনায়কের জন্য মাঠে নামি না-রশিদ খান

Next Article

স্ত্রীর মন রাখতে বৃদ্ধা মায়ের সাথে এ কেমন আচরণ?

Write a Comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *