এম এম মুজাহিদ উদ্দীন : সামান্য মৌমাছি, পিঁপড়াও ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করে। আর আমরা মানুষ; আমাদের রয়েছে নানা রকম শখ, চাহিদা, স্বপ্ন। এগুলো পূরণ করতে হলে টাকার প্রয়োজন। কিন্তু ‘সময়মতো টাকা হাতে থাকে না, খরচ হয়ে যায়। তা ছাড়া, কিছু টাকা সঞ্চয় থাকলে বিপদের সময়ও কাজে লাগে।
বিশ্ববিদ্যালয়-জীবন পার করার পরপরই অভিভাবকেরা মনে করেন তাদের সন্তান চাকরিতে ঢুকবে। কিন্তু দেশের প্রেক্ষাপটে সহসা চাকরি পেতে বেগ পেতে হয়। ঠিক ওই বেকার সময়ে অনেকের জন্য পরিবারের আর্থিক সাপোর্টও বন্ধ হয়ে যায়। একদিকে ক্যারিয়ারের চিন্তা অন্যদিকে আর্থিক কষ্ট—এসব থেকে নিজেকে চিন্তামুক্ত না রাখলে চাকরির জন্য ভালো করে প্রস্তুতি নেওয়াও কষ্টকর হয়। তাই ছাত্রজীবন থেকে কিছু টাকা সঞ্চয় রাখলে আত্মবিশ্বাস থাকে। এই টাকা দিয়ে চাকরি না করেও ব্যবসা শুরু করা যায়।
কোথায় সঞ্চয় করবেন
সঞ্চয় করার জন্য সবচেয়ে ভালো হয় ব্যাংকে স্টুডেন্ট সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলে তাতে প্রতি মাসে টাকা জমা রাখা। দেশের অনেক ব্যাংকে স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। এই অ্যাকাউন্টে বেশ কিছু সুবিধা আছে। ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে না চাইলেও মাটির ব্যাংক বা কাঠের বাক্সেও টাকা জমা রাখা যায়। তবে ব্যাংকে টাকা রাখলে হারিয়ে যাওয়া বা চুরি হওয়ার আশঙ্কা নেই।
যেভাবে সঞ্চয় করবেন
অতিরিক্ত খরচ পরিত্যাগ করা: অনেকেরই অভ্যাস আছে বন্ধু-বান্ধবী নিয়ে প্রায় দিনই ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়ার। ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টে খেলে সাধারণত কমপক্ষে ৪০০-৫০০ টাকা বিল আসে। নিয়মিত ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টে না গিয়ে আপনার কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের বাদাম, ঝালমুড়ি, চা, বিস্কুটও তো খাওয়া যায়। এতে আপনার বেশ কিছু টাকা বেঁচে যাবে। আবার শহরের অল্প কিছু পথ যাওয়ার জন্য বিভিন্ন শেয়ার রাইডিং অ্যাপস ব্যবহার করে বাইক ভাড়া করে থাকেন, তাতে খরচ বেশি হয়। এটা না করে পাবলিক বাসেও কিন্তু যাওয়া যায়। এ ছাড়া রিকশায় কম উঠে অল্প দূরত্ব হলে হেঁটেও যাওয়া যায়। এভাবে নানা উপায়ে অতিরিক্ত খরচ থেকে বেঁচে থাকা যায়। আর সেই টাকা আপনি ব্যাংকে রেখে দিতে পারেন।
ধূমপান পরিত্যাগ করা
বর্তমান সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীকে দেখা যায়, ধূমপান করে থাকেন। ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্যও যে ভীষণ ক্ষতিকর; এটা আমরা সবাই জানি। ধূমপান করা মোটেও উচিত নয়। ধূমপান পরিত্যাগ করতে পারলে প্রতি মাসে বেশ কিছু টাকা বেঁচে যাবে। এই বেঁচে যাওয়া টাকা সঞ্চয় করা যেতে পারে।
টিউশনির টাকা জমানো
শিক্ষার্থীরা অনেকেই টিউশনি করে ছাত্রজীবন থেকেই আয় করে থাকেন। কিন্তু দেখা যায়, বছরের পর বছর টিউশনি বা অন্য কোনো উপায়ে অনেকে আয় করছেন, তবে তাঁর কোনো সঞ্চয় নেই। তাই প্রতি মাসে টিউশনি বা অন্য কোনো উপায়ে আয় করা অর্থ থেকে কিছু টাকা সঞ্চয় করে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
আয় নাই সঞ্চয় কীভাবে হবে
শিক্ষার্থীরা অনেকেই বলতে পারেন নিজের কোনো আয় নাই। পরিবার থেকে যে টাকা দেয়, তা দিয়ে চলতেই আমার হিমশিম খেতে হয়। সঞ্চয় করব কীভাবে? আমি তাঁদের বলব, ছাত্রজীবন থেকেই কিছু টাকা আয় করা শিখুন। এখন আয় করার অনেক উপায় আছে। বর্তমানে আপনার যদি নিজের আয় নাও থাকে তবুও সঞ্চয় করুন। সঞ্চয় করার জন্য শুধু ইচ্ছাশক্তিও যথেষ্ট। আমি একজন বুয়ার (বাসায় রান্না করে) কথা জানি; যিনি সঞ্চয় করে গ্রামে জমি কিনেছেন। নিজের খরচের টাকা কমিয়ে অথবা দুই-এক দিনের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে মাসে ১০০ টাকা হলেও সঞ্চয় করুন। বর্তমান মুদ্রাস্ফীতির যুগে সঞ্চয় করার কোনো বিকল্প নেই। তিক্ত হলেও সত্য হলো, আপনার টাকা নাই মানে এই পৃথিবীতে আপনি ভীষণ অসহায়। টাকা জীবনের সবকিছু না—এটা ঠিক, কিন্তু টাকা জীবনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক: প্রভাষক, নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলোজি, খুলনা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।