বাড়ির ছাদে বোরো ধানের বীজতলা
জুমবাংলা ডেস্ক : পাবনার বেড়া উপজেলা কৃষি ক্লাবের সভাপতি এম আর এম ফিরোজ এলাকায় ‘কৃষকবন্ধু’ নামে পরিচিত। কৃষি সংক্রান্ত ব্যাপারে স্থানীয় কৃষকদের নানা পরামর্শ ও বিনামূল্যে কৃষিসামগ্রী দিয়ে আনন্দ পান তিনি। আধুনিক তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণার মাধ্যমে কৃষিতে নতুন কোনো পদ্ধতি চালু করে তাতে কৃষকদের আগ্রহী করাই তার কাজ। এবার তিনি বাড়ির ছাদে বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করে এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। শুধু তাই নয়, তার দেখানো পথে ছাদে বীজতলা তৈরি করেছেন স্থানীয় আরো ছয় থেকে সাত জন। ছাদে বীজতলা তৈরির বিষয়টি নানা দিক দিয়ে লাভজনক হওয়ায় সাড়া ফেলেছে কৃষকদের মধ্যে।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সমবায়ভিত্তিক সমলয় পদ্ধতির চাষ চলছে। ফিরোজসহ উপজেলার ৫০ জন কৃষক এই পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি ও ধান চাষের জন্য মনোনীত হয়েছেন।
এ পদ্ধতিতে বীজতলা থেকে চারা তোলা, চারা রোপণ ও ধান কাটা সব প্রক্রিয়া যন্ত্রের সাহায্যে একই সময়ে করা হবে। ধান আবাদ করতে হলে চারা তৈরি করতে হবে ট্রেতে। ট্রেতে চারা উত্পাদনে জমির অপচয় কম হয়। রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার দিয়ে চারা একই গভীরতায় সমানভাবে লাগানো যায়। কৃষক তার ফসল এক সঙ্গে মাঠ থেকে ঘরে তুলতে পারেন। এসব কারণে সমলয় পদ্ধতিতে যন্ত্রের ব্যবহার সহজতর ও বৃদ্ধি হওয়ায় ধান চাষে সময়, শ্রম ও খরচ কম লাগে। এতে লাভবান হন কৃষক।
এই পদ্ধতিতে বাড়ির আঙিনায় অথবা কৃষিজমিতে ট্রে বসিয়ে তাতে বীজতলা তৈরি করা হয়ে থাকে। কিন্তু ফিরোজ নিজের চিন্তা-ভাবনা থেকে বীজতলা তৈরির কাজটি করেছেন বাড়ির ছাদে। শুধু তিনি নিজেই নন, তার পরামর্শে বেড়া পৌর এলাকার আরও ছয় থেকে সাত জন কৃষক ছাদে এই সমলয় পদ্ধতির বীজতলা তৈরির মাধ্যমে চারা উৎপাদন করেছেন।
ফিরোজসহ ছাদে চারা উৎপাদনকারী কৃষকেরা জানান, ছাদে বীজতলা তৈরি করার সুবিধা অনেক। জমিতে বীজতলা তৈরিতে জায়গা লাগে অনেক বেশি। অনেকের আবার বীজতলা তৈরির জায়গাও থাকে না। অথচ খুব অল্প জমিতে ট্রের মাধ্যমে ছাদে বীজতলা তৈরি করা যায়। এ পদ্ধতিতে চারা ২০ দিনেই রোপণের উপযোগী হয়ে যায়। উত্পাদিত চারার কোনোটিই রোপণের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় না বা শিকড় ছিঁড়ে যায় না। ফলে ধানের ফলন অনেক বেশি হয়। আবার জমিতে তৈরি করা বীজতলায় কৃষি শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। কিন্তু ছাদে বীজতলা তৈরি করা হলে কৃষি শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না বলে অর্থ সাশ্রয় হয়। ছাদে বীজতলা তৈরি করায় বাড়ির মেয়েরাও অবসর সময়ে এ বীজতলা তৈরি করতে পারেন। তৈরি করা বীজতলায় শুধু সকাল-দুপুর ও সন্ধ্যায় পানি দিলেই চলে। আবার খুব সহজে মেশিনের সাহায্যে চারা রোপণ করা যায়। চারা পুষ্ট হয় বলে গাছের বাইল শক্তিশালী হয়। ছড়ায় ধান বেশি আসে। তাছাড়া জমিতে বীজতলা তৈরি করলে অসময়ের বৃষ্টি বা বন্যায় বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে। বীজতলা থেকে চারা চুরি হতে পারে, গরু-ছাগল খেয়ে ফেলতে পারে। কিন্তু বাড়ির ছাদে এসবের ভয় থাকে না।
বেড়া কৃষিক্লাবের সভাপতি এম আর এম ফিরোজ বলেন, ‘সমলয় পদ্ধতির ধান চাষ কৃষকের জন্য বেশ লাভজনক হবে বলে বুঝতে পারছি। তবে ছাদে বীজতলা তৈরির চিন্তা-ভাবনাটি মূলত আমার। আমার উদ্যোগেই সমলয় পদ্ধতির কৃষকদের মধ্য থেকে আমরা ছয়-সাত জন ছাদে বীজতলা তৈরি করেছি। যাদের পাকা ভবনের ছাদের বাড়ি আছে তাদের জন্য এই পদ্ধতি অনেক সাশ্রয়ী ও লাভজনক।’
বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূরে আলম বলেন, ‘সমবায়ভিত্তিক সমলয় পদ্ধতির ধান চাষের ব্যাপারে কৃষকেরা আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এবার ৫০ জন কৃষক দিয়ে এই পদ্ধতির শুরু হলেও আগামীতে এই সংখ্যা অনেক বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে বাড়ির ছাদ, উঠান বা পড়ে থাকা জায়গাতেও বীজতলা তৈরি করা যায়। তবে এম আর এম ফিরোজ ছাদে যে বীজতলা তৈরি করেছেন তা খুব ভালো হয়েছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।