সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ: নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই আবাসিক এলাকায় চলছে ফিউচার ফাইভ নামের একটি কারখানা। পরিবেশের ছাড়পত্র, ফায়ার লাইসেন্স, শ্রম আইন, বর্জ্য নিষ্কাশন অথবা ইটিপি প্ল্যান্ট ব্যবহার না করেই এই কারখানাটি চললেও তেমন নজরদারি নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
জানা গেছে, ২০১৭ সাল থেকে মানিকগঞ্জের জাগীর ইউনিয়নের শিল্প নগরীর পাশে গোলড়া চরখন্ড এলাকা গার্মেন্টস এক্সেসরিজ কারখানা তৈরী করে উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে আসলেও এখন পর্যন্ত পরিবেশের ছাড়পত্র, ফায়ার লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় অনুমোদনের কাগজপত্র নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। প্রয়োজনীয় লাইসেন্স ও পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই বিগত পাঁচ বছর ধরে এ কারখানায় উৎপাদন করা হচ্ছে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ। কারখানাটিতে গ্যাস সংযোগ না থাকায় অবৈধভাবে কাঠ পুড়িয়ে চালানো হচ্ছে বয়লার মেশিন। আগুনের তীব্রতাপ ও ধোঁয়ার কারণে মারাত্মকভাবে পরিবেশের বিপর্যয় হচ্ছে। অপরদিকে, আশপাশের ফসলি জমি ও ফলজ গাছপালা বিনষ্ট হচ্ছে। এতে ওই এলাকার বাসিন্দাদের বেড়েছে ভোগান্তি। দুর্বিষহ জীবন কাটছে তাদের। তবে অদৃশ্য কারণে অবৈধ এ কারখানাটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এছাড়া কারখানার মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের মজুরি প্রদান না করার অভিযোগও রয়েছে। কারখানাটির শ্রমিকদের নেই আন্তর্জাতিক শ্রম আইন অনুযায়ী কোন সুযোগ সুবিধা। সাধারণ শ্রমিকদের দিয়ে ৮ ঘন্টার বদলে ১২ ঘন্টা ডিউটি করানো হলেও এরজন্য দেওয়া হয়না কোন অতিরিক্ত পারিশ্রমিক। তবুও পেটের দায়ে মালিকপক্ষের শর্ত অনুযায়ী শ্রম দিতে হচ্ছে তাদের।
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কারখানাটির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় চলতি বছরের শুরু দিকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় এবং কারখানাটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করেন পরিবেশ অধিদপ্তর। অথচ সেই নির্দেশ অমান্য করে দিব্যি সচল রেখে উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, কিছুদিন আগে পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করলেও বন্ধ হয়নি কারখানাটি।
কারখানাটির পাশের বাড়িতে বসবাসকারী গৃহিনী শিল্পী আক্তার বলেন, গত চার পাঁচ বছর ধরেই আমরা খুব ভোগান্তিতে আছি। আগুনের তাপ ও বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে আমাদের বাড়ির আশপাশের গাছপালাগুলোও মরে যাচ্ছে। এতে আমরা পরিবেশগতভাবে হুমকির মধ্যে রয়েছি। এই কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় পাশের খালে ফেলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে।
কারখানাটির নারী শ্রমিক রুবিয়া আক্তার বলেন, আমাদের দিয়ে ৮ ঘন্টা ডিউটি করার কথা থাকলেও ১২ ঘন্টা ডিউটি করানো হয়। অতিরিক্ত ৪ ঘন্টার কোন পারিশ্রমিক আমরা পাইনা। তবুও পেটের দায়ে মুখ বুজে কাজ করতে হয়।
মো: রনি নামের আরেক শ্রমিক জানান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বয়লার মেশিনের কাজ করি। এখানে জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। তবুও জীবিকার তাগিদে নামমাত্র বেতনে ১২ ঘন্টা কাজ করতে হচ্ছে। আমাদের মত গরীব মানুষের জন্য কোন আইন নেই। আমাদের দু:খ দেখারও কেউ নাই।
এ বিষয়ে ফিউচার ফাইভ কারখানাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল খায়ের বলেন, পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছি। টাকাও জমা দিয়েছি। কিন্ত এখনো ছাড়পত্র পাইনি, তবে ফায়ার লাইসেন্স নেওয়া আছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাঝে মাঝে কারখানা পরিদর্শনে আসেন। আর শ্রমিকদের তো জোর করে কাজ করতে বলিনি। যার ভালো লাগবে কাজ করবে, যার ভালো লাগবে না সে করবে না। আমি তো কাউকে কাজের জন্য বাধ্য করিনি।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নূর আলম বলেন, ইতোমধ্যে আমরা কারখানাটি পরিদর্শন করেছি। প্রতিষ্ঠানটির পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। চলতি বছরের জানুয়ারীতে কারখানার মালিককে ২ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং কারখানাটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি নির্দেশ অমান্য করে কারখানাটির কার্যক্রম চালিয়ে থাকে তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।