আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভাগ্য বদলের জন্য কোনো জাদুর কাঠি নয়, প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রমের। সেই কথাটিই যেন আবার প্রমাণ করলেন জ্যোতিনা নামে ভারতের এক নারী। ছিলেন দিনমজুর। মাত্র পাঁচ টাকার মজুরিতে সারা দিন কাজ করতেন তিনি। অথচ সেই জ্যোতি পরিশ্রম করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে আজ কোটিপতি।
ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ১৯৭০ সালে তেলঙ্গানার ওয়ারাঙ্গলের অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্ম জ্যোতির। পাঁচ ভাইবোনের দ্বিতীয় তিনি। ৯ বছর বয়সে তাকে অনাথ-আশ্রমে রেখে এসেছিলেন বাবা। সঙ্গে তার এক বোনও ছিল। দুই মেয়ের যাতে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোটে, সেই আশাতেই আশ্রমে রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন তাদের বাবা। কিন্তু কিছু দিন পরই জ্যোতির বোন অসুস্থ হয়ে পড়েন। আশ্রম কর্তৃপক্ষ তাকে মা-বাবার কাছে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু জ্যোতি সেখানেই রয়ে যান। অনাথ হওয়ার অভিনয় করে যেতেন তিনি।
ওই আশ্রম থেকেই দশম শ্রেণি পাস করেন তিনি। তারপর ১৬ বছর বয়সে স্যামি রেড্ডি নামে এক যুবককে তিনি বিয়ে করেন। নিজের বলতে ছোট জমি ছিল স্যামির। সেই জমিতে ফসল ফলিয়েই সংসার চালাতেন। দুই সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীর সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন জ্যোতিও। নিজেও মাঠে কাজ করতে শুরু করেছিলেন। টানা ১০ ঘণ্টা কাজ করে দিনে ৫ টাকা উপার্জন ছিল তার।
পড়াশোনার প্রতি অদম্য আগ্রহ থাকায় সব সংসার-সন্তান-চাকরি সামলে ডক্টর বিআর আম্বেডকর মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন জ্যোতি। এরপর একটি স্কুলে মাসে ৩৯৮ রুপি বেতনে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।
১৯৯৫ সালে ২ হাজার ৭৫০ রুপি বেতনে মণ্ডল গার্ল চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসেবে কাজে যোগ দেন তিনি। তার কাজ ছিল স্কুলে স্কুলে পরিদর্শন করে কন্যাশিশুর শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয় দেখা। এই কাজ করতে করতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও অর্জন করেন তিনি। ১৯৯৭ সালে স্নাতকোত্তর পাস করেন জ্যোতি।
২০০১ সালে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন জ্যোতি। এক ননদের সঙ্গে সেখানে থাকতে শুরু করেন তিনি। পেট চালানোর জন্য সেই ননদই তাকে ১২ ঘণ্টার একটি কাজ জুটিয়ে দিয়েছিলেন। তার বেতন ছিল ৬০ ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় চার হাজার ৪৫২ টাকা। এর বাইরে কখনও বেবিসিটার, কখনও সেলসগার্লের কাজও করতেন বাড়তি উপার্জনের জন্য।
এ ভাবে দেড় বছর কাটানোর পর দেশে ফিরে আসেন সন্তানদের দেখার জন্য। তারপর জমানো পুঁজি নিয়ে নিজের ব্যবসা শুরু করেন জ্যোতি। খোলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রসেসিংয়ের কনসাল্টিং প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্রেও তার প্রতিষ্ঠানের শাখা খোলেন জ্যোতি।
প্রথম বছরেই ১ কোটি ২৪ লাখ ৬৭ হাজার ৫৯৯ রুপির ব্যবসা করেন জ্যোতি।
এখন একশ’ কর্মী রয়েছে তার অধীনে। হায়দরাবাদে একটি এবং যুক্তরাষ্ট্রে চারটি বাড়ি রয়েছে জ্যোতির। বছরে ১১১ কোটি রুপির বেশি ব্যবসা করে তার এই কনসাল্টিং প্রতিষ্ঠান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।