জুমবাংলা ডেস্ক : চাঁদপুর মৎস্য আড়তে পদ্মা-মেঘনার সুস্বাদু রুপালি ইলিশ কিনতে গেলেন সাংবাদিক দম্পতি। সঙ্গে নিয়ে গেলেন ২ শিশু সন্তানকে। আড়তে গিয়ে তারা হয়ে যান হতাশ। ইলিশের আড়তে ইলিশের হাহাকার। এক কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রয় হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়। যা’সাধারণ ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে বিক্রি হচ্ছে।
চাঁদপুর জেলা সাংবাদিক ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্থানীয় দৈনিক চাঁদপুর পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কে এম মাসুদ ও তার স্ত্রী ব্যাংকার সিগমা আহসান যখন ইলিশ ক্রয় করতে না পেরে চিন্তায় মগ্ন। তারা বলেন, এ ভরমৌসুমে আড়তগুলোতে থাকতো রুপালি ইলিশে ভরপুর, দামও থাকতো সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা মধ্যে। এ বছর তার ভিন্নরূপ দেখা যায় চাঁদপুর মৎস্য আড়তে।
এরই মধ্যে শনিবার দুপুরে মৎস্য আড়তের আনোয়ার গাজীর আড়তে প্রচুর পোয়া মাছ আসে। আর তখনই আসে মেঘনা নদীর অনেক বড় আকারের ২টি পোয়া মাছ। পোয়া মাছ ২টির ওজন মাপার পর দেখা গেল, পোয়া মাছ ২টি ২ কেজি ১০০গ্রাম ওজন।
এ বছর এই প্রথম ২টি বড় আকারের পোয়া মাছ মৎস্য আড়তে উঠে। যা বিগত কোনো সময় এত বড় পোয়া মাছ চাঁদপুরের মেঘনায় কখনো জেলেদের জালে মেলেনি।
এ ২টি পোয়া মাছের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন সাংবাদিক পুত্র শাহরিয়ার সিয়াম। বয়স তার মাত্র ৬ বছর। সে এ ২টি মাছ ক্রয় করার জন্য তার পিতা কেএম মাসুদকে অনুরোধ জানান ও বায়না ধরে এ ২টি মাছ ক্রয় করার জন্য।
তখনই আড়তটিতে দরকষাকষি চলতে থাকে। পাইকারিভাবে মাছের ডাক উঠে ১২০০ থেকে শুরু করে ২০০০ টাকা পর্যন্ত। পরে অন্য এক ক্রেতা ২টি পোয়া ২৩০০ টাকা মূল্য ওঠান।
মৎস্য আড়তের ব্যবসায়ী সম্রাট বেপারী সাংবাদিক পুত্রের আবদার রক্ষায় ২টি পোয়া মাছ অন্য ক্রেতাকে নাদিয়ে তাদেরকে ২৩০০ টাকায় শিশু সিয়ামের জন্য মাছ ২টি বিক্রয় করেন। তবে বাজার দরযাচাই করে দেখা যায়, এ ভরমৌসুমে বিগত বছর ১ কেজি ইলিশই সর্বোচ্চ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১০০০ হাজার টাকায়। তাই কি দেখা গেল ইলিশের দামে এখন পদ্মা-মেঘনার পোয়া মাছ বিক্রি হলো।
অন্য আড়তের এক জন ব্যবসায়ী বাবুর জমাদার জানান, বিগত সময় এ ধরনের পোয়া মাছ ৫০০ টাকাও কখনো বিক্রি হয়নি। নদীতে ইলিশের আকাল হওয়ায় এ সময় ইলিশ যে দামে বিক্রি হতো তার চাইতেও চড়া দামে পোয়াসহ বিভিন্ন প্রকার মাছ বিক্রি হচ্ছে। পদ্মা-মেঘনায় এ বছর বেশি ধরা পড়ছে, পাঙ্গাস, আইড়, বোয়াল, রিডা, বাগাইড় ও পোয়া মাছ।
চাঁদপুর নৌ-সীমানায় এ বছর ব্যাপক আকারে ও আবাধে জাটকা নিধন হওযায় ইলিশের ব্যাপক আকাল চলছে বর্তমান এ সময়টিতে। এখন পুরো ভরা মৌসুমেও চাঁদপুর মাছ ঘাটে আশানুরুপ ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। শনিবার শেষ বিকেলে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ৩ হাজার ৫০০ টাকায়, এক কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৩ হাজার ১০০ টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ ৩ হাজার টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৮০০ টাকা এবং ছোট আকারের ইলিশ ৭০০ থেকে ৯ শ’ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
পদ্মা-মেঘনা নদীতে,এবার মেঘনায় ইলিশের পরিবর্তে ধরা পড়ছে বড় আকারের পোয়া মাছ। এ ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। তবে বিগত বছর বর্তমান ইলিশের ভরমৌসুমে ইলিশের যে পরিমান দাম দেখা যেত, সেই পরিমাণ দাম ছাড়িয়েও বেশি দামে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ক্রয়-বিক্রয় হতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সাধারন সম্পাদক শবেবরাত সরকার এ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘ইলিশের মৌসুম প্রায় আড়াই মাস হতে চলছে, কিন্তু এ মাছ ঘাটে প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ মণের বেশি ইলিশ আসছে না। অথচ এসময় ৩০০ থেকে ৪০০ মণ ইলিশ আমদানী হতো। নদীতে ইলিশের আকাল হলেও প্রচুর পরিমানে পাঙ্গাস,আইড়,বোয়াল,রিডা,বাগাইড় ও পোয়া মাছ ধরা পড়ছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান জানান, আমরা বলতে পারছিনা এই ভরা মৌসুমে ইলিশের এত সংকট ও আকাশচুম্বী দাম কেন তার রহস্য খুঁজে পাচ্ছি না। এ বছর জাটকা নিধনও এর একটা কারন হতে পারে। তিনি বলেন, জেলে ও ব্যবসায়ীরা জানান, অন্য প্রজাতির প্রচুর পরিমানে পাঙ্গাস,আইড়,বোয়াল,রিডা,বাগাইড় ও পোয়া মাছ আড়ত গুলোতে আসছে,তবে ইলিশ আসছে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।