নিজেস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার দস্যু নারায়ণপুর গ্রামের ছোয়াঁ এগ্রো ফিড প্রোডাক্ট লিমিটেড কারখানায় কর্মরত ১৭ জন শ্রমিকের শরীরে করোনাভিইরাস বা কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ১৩ জন এখানো কারখানার ভিতরে আইসোলেসনে রাখা হয়েছে। বাকি চরজন পার্শ্ববর্তী শ্রীপুরে নিজ নিজ বাড়ীতে রয়েছে। কারখানার আক্রান্ত শ্রমিকদের পরিবার অসহায় অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে, কিন্তু মালিকপক্ষ তাদের কোন খোঁজ খবর নিচ্ছে না।
কারখানার মালিক ও শ্রমিক সূত্রে জানা যায়, কারখানাটিতে পশু খাদ্য তৈরী হয়। কারখানাটিতে কর্মকর্তা ও কর্মচারী মিলিয়ে মোট ২৩৬ লোক কাজ করেন। এদের মধ্যে ১৩০ জন শ্রমিক কারখানার ভিতরে থেকে কাজ করে। বাকী আরও ১০৬ জনের মতো শ্রমিক কারখানার বাইরে শ্রীপুর ও কাপাসিয়া বিভিন্ন এলাকা থেকে গিয়ে কারখানায় কাজ করে। কারখানায় কাঁচামাল হিসাবে নারায়ণগঞ্জ থেকে সয়াফিড (খৈল) ও আটা আনা হতো। ধারণা করা হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ থেকে আনা কাচাঁমাল বা ট্রাকের চালক ও শ্রমিকদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস কারখানায় প্রবেশ করেছে। কারণ কাঁচামাল পরিবহনের ট্রাক কারখানার ভিতরে নিয়ে যেত এবং ট্রাকের চালক ও শ্রমিক কারখানার শ্রমিকদের সাথে মেশার সুযোগ পেত।
গত ১০ এপ্রিল এ কারখানার একজন শ্রমিক প্রথম করোনায় আক্রান্ত হয়। কাপাসিয়া উপজেলায় সেই প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী। তার বয়স আনুমানিক ৩৪ বছর। সে উপজেলার দস্যু নারায়নপুর এলাকার বাসিন্দা। করোনা রোগী শনাক্ত হবার পর স্থানীয় প্রশাসন ঐ কারখানাসহ দস্যুনারায়নপুর পুরো গ্রাম লকডাউন ঘোষণা করে। কারখানার ভিতরে সকল শ্রমিককে করোনা পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়। বুধবার পর্যন্ত দুই দফায় শতাধিক শ্রমিকের করোনা পরীক্ষা হয়েছে। বাকীদের পরীক্ষা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ইতিমধ্যে মধ্যে দুই দফায় ৬ জন করে মোট ১২ জন শ্রমিকের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী শ্রীপুর উপজেলার লতিফপুর গ্রামের কিছু শ্রমিকের করোনা পরীক্ষা করা হলে সেখানেও ৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। আক্রান্তদের মধ্যে প্রথম শ্রমিককে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছে। বাকীদের মধ্যে কারখানার ভিতরে রয়েছে ১২ জন এবং লতিফপুরের ৪ শ্রমিক নিজ নিজ বাড়ীতে আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা চলছে। তাদের শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় স্থানান্তরের কথা রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন, দেশে করোনা সংক্রমণের শুরু হবার পর জরুরী খাদ্য উৎপাদন করা হয় এমন কারণ দেখিয়ে কারখানাটি চালু রাখা হয়। কিন্তু সরকারের নির্দেশিত শ্রমিকদের সংক্রামক ব্যাধি সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য যথাযথ নিরাপত্তা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কারখানার ভিতরে সামাজিক দুরত্ব বঝায় রাখার কোন ব্যবস্থা ছিল না। শ্রমিকদের কারখানার ভিতরে একরুমে তিনজন করে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। বাথরুম অপ্রতুল। কারখানা কর্তৃপক্ষের সরকারি নির্দেশনা অম্যান্য করা এবং দায়িত্বে অবহেলার কারণে কারখানার ভিতরে শ্রমিকদের মধ্যে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।
কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো: টিপু সুলতান এসব বিষয়ে জানান, নারায়ণগঞ্জ থেকে সেখান থেকে ট্রাকে মাল আনা হয়। কারখানার ভিতরে ট্রাকে জীবানু নাশক ছিটানো হতো। কারখানার ভিতরে শ্রমিকদের জন্য হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ছিল, তাদের মাস্ক ব্যবহার করতে দেয়া হয়। তবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার সরঞ্জামাদি আমরা পাইনি ও কারখানার ভিতরে সামাজিক দুরত্ব বঝায় রাখার কোন ব্যবস্থা ছিল না। তিনি জানান, আক্রান্ত শ্রমিকদের কারখানার ভিতরে রাখা হয়েছে, তাদের খাবার দাবার আমরা সরবরাহ করছি। আক্রান্ত শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরা অসহায় অবস্থায় ঘরবন্ধি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের খাবার বা অন্য কোন প্রয়োজন মেটানোর কোন ব্যবস্থা করেছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি নিজেও লক ডাউনের মধ্যে আছি। তাই আক্রান্ত শ্রমিকদের পরিবারের খোঁজ খবর বা তাদের কোন আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক বলেন, পশুখাদ্য উৎপাদন না করলে আমরা আগেই কারখানা বন্ধ করে দিতাম। দায়িত্বে অবহেলা ছিল বলেই এত শ্রমিক আক্রান্ত হয়েছে। আমরা দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আরো বেশী মানুষ সংক্রমিত হতো। আক্রান্ত শ্রকিদের ও তাদের পরিবারের ভরণ পোষণের জন্য কারখানার মালিকপক্ষকে বলা হয়েছে। যদি তারা তা না করে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।