মোস্তাফিজুর রহমান সুমন: সারাদেশে ছোট নদী, খাল ও জলাভূমি পুনঃখনন প্রকল্পের আওতায় জরিপ প্রযুক্তিবিষয়ক বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম ক্রয় প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই অনিয়মের অভিযোগ খোদ প্রকল্প পরিচালকে বিরুদ্ধে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) এ কাজে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পছন্দের ঠিকাদারকে নিবাচন করার লক্ষ্যে সাতবার দরপত্র সংশোধন করেছে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লেখা এক চিঠিতে এই অভিযোগ করা হয়। একই বিষয়ে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) মহাপরিচালকের (ডিজি) কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্রেই এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তবে অভিযোগ তদন্তের আগেই পাউবো এ্যাডভ্যান্স টেকনোলজি কনসোর্টিয়াম লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়ার জন্য মনোনীত করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
অভিযোগ উঠেছে, পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ সুবিধা দিতে ‘৬৪ জেলায় ছোট নদী, খাল ও জলাভূমি পুন:খনন (প্রথম পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) এই অস্বাভাবিক কাজ করেছেন।
পাউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তারিক আহমেদ আল ফাইয়াজ সাড়ে ৪ কোটি টাকার এ কাজের পিডি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মূল প্রকল্পের আওতায় নদীর হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভের জন্য আরটিকে-ডিজিপিএস (প্রশিক্ষণসহ সার্ভে সংক্রান্ত যাবতীয় যন্ত্রপাতি ও সহায়ক যন্ত্রাংশ, কেবিনেট, সফ্টওয়্যার এবং মাঠপর্যায়ের অফিসের প্রয়োজনীয় যন্ত্র) সরবরাহের লক্ষ্যে গত বছরের ২৯ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র জমার শেষ তারিখ ছিল ২১ সেপ্টেম্বর। এরপর অজ্ঞাত কারণে অস্বাভাবিকভাবে সাতবার দরপত্র সংশোধন করা হয়। গত ১১ অক্টোবর ছিল সর্বশেষ সংশোধিত দরপত্র জমা ও উন্মুক্ত করার তারিখ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সাড়ে ৪ কোটি টাকার এ কাজে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হাইড্রোল্যান্ড সলিউশন সর্বনিন্ম ২ কোটি ৯৮ লাখ ৮০ হাজার টাকার দরপত্র জমা দেয় এবং তাদের স্পেসিফিকেশনও (দরপত্রের শর্ত) ঠিক ছিল। দরপত্র জমা দেয়া অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- আইটি সোল ইন্টারন্যাশনাল ৩ কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজার, মেরিন ইলেক্ট্রনিক্স সার্ভিস ৩ কোটি ৫৫ লাখ ৪৬ হাজার ৫২৪, এ্যাডভ্যান্স টেকনোলজি কনসোর্টিয়াম লিমিটেড ৩ কোটি ৭৫ লাখ ১২ হাজার এবং ওএমসি লিমিটেড ৩ কোটি ৯৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পানিসম্পদ সচিব ও সিপিটিইউর ডিজি বরাবর হাইড্রোল্যান্ড সলিউশনের লেখা চিঠিতে বলা হয়, সর্বনিন্ম দরদাতা প্রতিষ্ঠানের মালামাল বিশ্বমানের। চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটির মালিক জানান, এ ধরনের মালামাল বিআইডব্লিউটিএ, পাউবো, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি অনেক দপ্তরে ইতোপূর্বে সরবরাহ করেছেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পানি উন্নয়ন বোর্ডের আরেকজন সরবরাহকারী (ঠিকাদার) এ প্রসঙ্গে বলেন, পছন্দের কাউকে মনোনীত করার জন্য দরপত্রের শর্তাবলী অস্বাভাবিকভাবে সাতবার সংশোধন করা হয়েছে। তার আশঙ্কা, এর ফলে সরকারি অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় হবে না। বিষয়টি যথাযথ তদন্তেরও দাবি জানান এই ঠিকাদার।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক পাউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তারিক আহমেদ আল ফাইয়াজের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি সাড়া দেননি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।