জগদীশচন্দ্র বসুর পৈতৃক বাড়ি ছিল ঢাকা জেলার বিক্রমপুরে। তাঁর বাবা ভগবানচন্দ্র ছিলেন বিক্রমপুরের রাঢ়ীখাল গ্রামের সম্ভ্রান্ত বসু পরিবারের সন্তান। তিনটি কন্যার পর ভগবানচন্দ্র ও বামাসুন্দরী দেবীর চতুর্থ সন্তান জগদীশচন্দ্র বসুর জন্ম ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর, ময়মনসিংহে। ময়মনসিংহ শহরে ইংরেজ সরকার তখন প্রথম ইংরেজি স্কুল স্থাপন করেছে। ভগবানচন্দ্র ছিলেন সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। জগদীশচন্দ্রের জন্মের কয়েক বছর পর ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে ফরিদপুরে চলে আসেন ভগবানচন্দ্র। ফরিদপুরেই কাটে জগদীশচন্দ্রের শৈশব এবং কিছুটা কৈশোর।
পাঁচ বছর বয়সে স্কুলের পড়াশোনা শুরু হলো জগদীশচন্দ্রের। ফরিদপুরে তখন দুটো স্কুল। একটি ইংরেজি মাধ্যম, অন্যটি বাংলা মাধ্যম। জগদীশচন্দ্রকে ভর্তি করানো হলো বাংলা স্কুলে। ১৮৬৯ সালে ভগবানচন্দ্র সহকারী কমিশনার হয়ে বর্ধমানে বদলি হয়ে যান। এদিকে জগদীশচন্দ্রের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ হয়েছে। কলকাতার হেয়ার স্কুলে ভর্তি করানো হলো জগদীশচন্দ্রকে।
কিন্তু প্রথম দিনই স্কুলে সহপাঠীরা তাকে ‘গাঁইয়া’ বলে খ্যাপাতে লাগল। সহপাঠীদের সঙ্গে মারধর করতে হলো তাঁকে। তিন মাসের মাথায় হেয়ার স্কুল ছেড়ে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে ভর্তি হতে হলো জগদীশচন্দ্রকে। ১৮৭৫ সালে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে বিজ্ঞানশিক্ষা শুরু হলো জগদীশ বসুর। ১৮৭৭ সালে জগদীশচন্দ্র এফএ পাস করেন দ্বিতীয় বিভাগে।
এরপর ১৮৮০ সালে বিজ্ঞান বিভাগে সাধারণ মানের বিএ। ইতিমধ্যে তাঁদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে গেছে। বাবাকে ঋণমুক্ত করার উপায় খুঁজতে শুরু করলেন জগদীশচন্দ্র। ঠিক করলেন ইংল্যান্ডে গিয়ে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দেবেন। চাকরি পেলে আর্থিক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু বাবা চান না তাঁর ছেলে ইংরেজ সরকারের অধীন চাকরি করুক। আইসিএস অফিসার হওয়ার চেয়ে অনেক ভালো ডাক্তারি পড়া।
বাবা ছেলেকে ডাক্তার বানাতে চাইলেও বাদ সাধলেন মা। ‘কালাপানি’ পার হয়ে ছেলে বিলাত যাবে, তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না বামাসুন্দরী দেবী। কিন্তু জগদীশচন্দ্র যাবেনই। বাবার আর্থিক অবস্থা ফেরানোর জন্য, ঋণ শোধ করার জন্য তাঁকে বিলাতে যেতেই হবে। মাকে বোঝালেন। শেষ পর্যন্ত বামাসুন্দরী দেবী শুধু যে রাজি হলেন তা নয়, নিজের গয়না বিক্রি করে ছেলের বিদেশ যাওয়ার টাকা জোগাড় করার ব্যবস্থা করলেন।
১৮৮০ সালে জগদীশচন্দ্র ডাক্তারি পড়ার জন্য ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অন্তর্ভুক্ত একটা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু একদিন অ্যানাটমির ক্লাসে মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন। শব ব্যবচ্ছেদের পরিবেশ সহ্যই হলো না তাঁর। শরীরও খারাপ। এ অবস্থায় শারীরবিদ্যার অধ্যাপক তাঁকে পরামর্শ দিলেন চিকিৎসাবিজ্ঞান বাদ দিয়ে অন্য কোনো বিষয়ে পড়াশোনা করার। একটা বছর নষ্ট হলো জগদীশচন্দ্রের।
পরের বছর কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির ক্রাইস্ট কলেজে ভর্তি হলেন তিনি। কেমব্রিজে তিন বছর পড়াশোনার পর ১৮৮৪ সালে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও উদ্ভিদবিদ্যার সমন্বয়ে ন্যাচারাল সায়েন্সে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন জগদীশচন্দ্র। কেমব্রিজের রেজাল্টের ভিত্তিতে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বিএসসি ডিগ্রি লাভ করলেন। সেই সময় এ রকম ব্যবস্থা ছিল। লেখাপড়া সম্পন্ন করার উপযুক্ত প্রমাণপত্র দাখিল করলে, তা ডিগ্রির জন্য গৃহীত হতো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।