বিনোদন ডেস্ক: নব্বই দশক থেকে হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনয় শুরু করেন রণিত রায়। হিন্দি, বাংলা, তামিল, তেলেগু সিনেমার পাশাপাশি হিন্দি ধারাবাহিকে কাজ করে লাভ করেছেন জনপ্রিয়তা। কিন্তু হঠাৎ করেই ক্যারিয়ার নিম্নমুখী হয়ে যায় এ অভিনেতার।
রণিতের ক্যারিয়ারে এমনও সময় আসে, যখন অভিনয়ের কোনো প্রস্তাব পেতেন না তিনি। এ কারণে উপার্জনের জন্য ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেন। হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত থাকায় বলিপাড়ার অনেক তারকার সঙ্গে পরিচিতি ছিল তার। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, অর্থ উপার্জনের জন্য তখন নিরাপত্তারক্ষীর কাজ শুরু করেছিলেন।
তার অভিনয় নিয়ে যেসব তারকারা প্রশংসা করতেন, তাদেরই নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করেছেন রণিত। প্রীতি জিনতা, শাহরুখ খান, সালমান খান, আমির খানের মতো তারকাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমি দ্রুত সাফল্য পেতে চাইতাম। বড় বড় গাড়ি কিনতে চাইতাম। মেয়েরা আমার নাম ধরে চিৎকার করুক, এমনটা স্বপ্ন ছিল আমার। ৫ থেকে ৬ বছর কোনো কাজ পাইনি। তখন বুঝেছিলাম যে ভালো অভিনেতা হওয়ার সঙ্গে জনপ্রিয়তার কোনো সম্পর্ক নেই।
আনন্দবাজার পত্রিকার খবর অনুযায়ী, এ অভিনেতা জানান, তিনি যে সময়টুকু আমির খানের নিরাপত্তারক্ষী হয়ে কাজ করেছিলেন, সে সময়টুকু দারুণ কেটেছে তার। টানা দু’বছর আমিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। তার ভাষ্যমতে, আমিরের নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করা আমার সৌভাগ্যের ব্যাপার। তখন হাতে কাজ ছিল না বলে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। কিন্তু দু’বছর তার নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করার মাধ্যমে তাকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি।
আমিরের কাজের ধরন কেমন, অভিনয়ের আগে কীভাবে প্রস্তুতি নেন, সেসব পর্যবেক্ষণ করেছিলেন রণিত। সেসব থেকে অনেক কিছু শিখেছেন বলেও জানান। তবে ধীরে ধীরে ব্যবসা থেকে লাভ করতে শুরু করেন। আর নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করতে করতে একটি সংস্থা চালু করেন। যেখান থেকে বলি তারকাদের জন্য নিরাপত্তারক্ষী নিযুক্ত করা হয়।
রণিতের সেই সংস্থা থেকে বলিউড তারকা অমিতাভ বচ্চন, মিঠুন চক্রবর্তী, শাহরুখ খান, করণ জোহর, সালমান খান, অক্ষয় কুমারের নিরাপত্তারক্ষী নিযুক্ত করা হয়েছে। তবে শুধু বলি তারকাই নয়, আইপিএল’র সাবেক চেয়ারম্যান ললিত মোদি ও তার ছেলে রুচির মোদির নিরাপত্তার দায়িত্বও ছিল তার সংস্থার।
এছাড়া হিন্দি সিনেমার শুটিংয়ের সময় সেটেও নিরাপত্তার জন্য এগিয়ে আসে অভিনেতা রণিতের সংস্থা। ‘লগান, ‘দিল চাহতা হ্যায়’, ‘ইয়াদে’, ‘না তুম জানো না হুম’, ‘সাথিয়া’ এবং ‘আরমান সিনেমার সেটে নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। তবে করোনা যখন মহামারিতে রূপ নেয়, তখন ব্যবসায় ভরাডুবি হয়। বলিউডের কোনো তারকাই ওই সময় পাশে দাঁড়াননি অভিনেতার।
এক সাক্ষাৎকারে রণিত জানান, বলি ইন্ডাস্ট্রির যেসব তারকারা তার সঙ্গে কাজ করেছিলেন, তারা সবাই সরে যান। শুধু অমিতাভ বচ্চন এবং অক্ষয় কুমার তার পাশে ছিলেন। রণিত বলেন, আমার সংস্থায় যতজন কাজ করতেন, তাদের কারও স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা, কারও মায়ের শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। সবার সংসার চালানোর অর্থ প্রয়োজন। আমাদের কাছে কোনো কাজ ছিল না। তবুও কাউকে সংস্থা থেকে বের করে দেইনি। সবাইকে নিয়মিত বেতন দিয়েছি।
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কর্মচারীদের মধ্যে অদ্ভুত আচরণ খেয়াল করেন রণিত। জানান, সংস্থায় মোট ১১০ জন কাজ করতেন। করোনার পর তাদের মধ্যে ৪০ জন আর কাজে ফেরেননি। এদিকে বলিউডের সেই তারকারাও আবার তাদের প্রয়োজনে রণিতের কাছে আসেন। রণিতের দাবি, তারকারা ফিরে এলেও তাদের সঙ্গে আর কাজ করতে রাজি হননি তিনি।
২০০২ সাল থেকে ‘কসৌটি জিন্দেগি কে’, ‘কিউ কি সাস ভি কভি বহু থি’ ধারাবাহিকে অভিনয় করে ফের সাফল্যে পৌঁছাতে থাকেন রণিত। এছাড়া টেলিভিশন ধারাবাহিক ‘আদালত’ এ প্রধান চরিত্র অ্যাডভোকেট কেডি পাঠকের ভূমিকায় অভিনয় করে খ্যাতি লাভ করেন তিনি। বর্তমানে হিন্দি সিনেমা, ধারাবাহিক ও ওয়েব সিরিজে অভিনয়ের পাশাপাশি নিরাপত্তারক্ষীদের সংস্থাও পরিচালনা করছেন। ২০১০ সাল থেকে শুরু করা এক দশকের এ ব্যবসায় অনেকটাই এখন সফল অভিনেতা রণিত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।