জুমবাংলা ডেস্ক : এক সময় গ্রামগঞ্জের অভাব-অনটনে থাকা মানুষের পেটের ক্ষুধা মেটানোর খাবার ছিল সবজি জাতীয় খাদ্য শালুক। তখন বর্ষা মৌসুম এলেই এক রকম শালুক সিদ্ধ খেয়েই জীবন বাঁচাতেন তারা। তবে বড়লোকেরা সেই সময় শালুক সিদ্ধ খেতেন শখ করে।
কিন্তু গরিবের ক্ষুধা নিবারণের সেই খাবার শালুক এখন গরিব-বড়লোকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যে কারণে সুস্বাদু খাবার শালুকের দামও বেপরোয়া।
এরই ধারাবাহিকতায় ফরিদপুরের সালথা ও নগরকান্দা উপজেলার বেশ কয়েকটি হাট-বাজার গিয়ে চড়া দামে শালুক বিক্রি করতে দেখা গেছে। প্রতি কেজি শালুক বিক্রি করছেন ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে। ফলে উভয় উপজেলার একাধিক কৃষক বাড়তি আয় করার সুযোগ পেয়েছেন।
সালথা ও নগরকান্দার কৃষকরা জানিয়েছেন, শালুক উৎপাদনের কোনো খরচ নেই। মূলত বর্ষা মৌসুমে প্রাকৃতিকভাবেই বিল-বাঁওড়, নিচু জমি ও জলাশয় অবহেলা-অযত্নে বেড়ে ওঠে শালুকের গাছ (শাপলা)। বর্ষা মৌসুম শেষের দিকে সেসব শাপলা গাছের গোড়ায় একাধিক গুটির জন্ম হয়। সেখান থেকে ধীরে ধীরে বড় হলে উৎপাদন হয় শালুক। শুধু কষ্ট করে পানির নিচ থেকে সেই শালুকগুলো সংগ্রহ করতে পারলেই তা বিক্রি করা যায় চড়া দামে। কৃষকরাও সেই সুযোগ হাত ছাড়া করেন না। বাড়তি আয়ের জন্য জলাশয় থেকে প্রতিদিন শালুক সংগ্রহ করে বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন তারা। শালুকের ডাটাও (শাপলা) বাজারের বিক্রি করেন।
সালথা বাজারে শালুক বিক্রি করতে আসা কৃষক আবুল হোসেন, হারুন শেখ ও তৈয়াব মিয়া বলেন, আমরা নিজেরাই ২-৩ দিন ধরে বিভিন্ন জলাশয় থেকে শালুক তুলে এনে বাড়িতে সংগ্রহ করে রাখি। পরে সংগ্রহ করা সেই শালুক গরম পানিতে সিদ্ধ করে বিভিন্ন হাট-বাজারে নিয়ে যাই। শুধু গ্রামের হাট-বাজারের নয়, বেশি শালুক তুলতে পারলে সেগুলো সিদ্ধ করে মাঝে মধ্যে বস্তায় ভরে শহরে নিয়ে বিক্রি করি। গ্রামের চেয়ে শহরে আরও বেশি দামে বিক্রি করা যায়। গ্রামের হাট-বাজারে প্রতি কেজি শালুক ৮০ থেকে ১২০ টাকা দামে বিক্রি করছি। আর শহরে নিতে পারলে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করে থাকি। এতে আমাদের প্রতিবছর অন্তত ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বাড়তি আয় হয়।
শালুক কিনতে আসা মোজাম্মেল হোসেন ও আব্দুর বর বলেন, এক সময় এই শালুক খেয়ে ক্ষুধা মেটাতেন অভাবী মানুষেরা। যুগের পরিবর্তনে এখন অভাবী মানুষের শালুক খেয়ে ক্ষুধা মেটাতে হয় না। তবে বর্তমানে সুস্বাদু ফল হিসেবে শালুক খাচ্ছেন মানুষ। যে কারণে বাড়ি থেকে বাজারে আসার সময় পরিবারের সদস্যরাও বায়না ধরে সিদ্ধ শালুক কিনের আনার। তাই যত দামই হোক শখ করে অল্প হলেও বাজার থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শাপলা ফুলের মাঝামাঝি অংশে জন্মানো এক ধরনের সবজি জাতীয় খাদ্য শালুক হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। দ্রুত ক্ষুধা নিবারণ করে এবং শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি জোগায়। এটি একটি ভালো সবজি হিসেবে সমাদৃত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চুলকানি ও রক্ত আমাশয় নিরাময়ের জন্য ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। যে কারণে শালুকের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।