টানা জনসংখ্যা হ্রাস মোকাবিলায় গর্ভনিরোধক সামগ্রীর ওপর ১৩ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপ করতে যাচ্ছে চীন সরকার। নতুন নীতি আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। ব্লুমবার্গ, নিউজউইকসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এর আগে ১৯৯৩ সাল থেকে কনডম, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ও অন্যান্য গর্ভনিরোধক সরঞ্জাম করমুক্ত ছিল। এক-সন্তান নীতির যুগে জন্মনিয়ন্ত্রণ বাড়াতে এ সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। তবে জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকায় এবার উল্টো পথে হাঁটছে সরকার।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে এক-সন্তান নীতি তুলে নেওয়ার পর চীনে জন্ম নেওয়া শিশুর সংখ্যা ছিল ১৮.৮ মিলিয়ন। কিন্তু ২০২৪ সালে তা নেমে আসে মাত্র ৯.৫৪ মিলিয়নে—যা প্রায় অর্ধেক। গত তিন বছর ধরে দেশটির মোট জনসংখ্যাও ক্রমাগত কমছে।
বিশেষজ্ঞদের অনুমান, বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালে চীনের মোট জনসংখ্যা কমে দাঁড়াতে পারে প্রায় ১.৩ বিলিয়নে, যা তরুণ শ্রমশক্তি ও সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি।
ইউয়া পপুলেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, চীনে একটি শিশুকে ১৮ বছর পর্যন্ত লালন-পালন করতে খরচ হয় প্রায় ৫ লাখ ৩৮ হাজার ইউয়ান (৭৬ হাজার ডলার)। ধীর অর্থনীতি ও চাকরি অনিশ্চয়তার কারণে অনেক তরুণ এ ব্যয় বহনে অনাগ্রহী হয়ে পড়ছেন।
নতুন নীতির অন্তর্ভুক্ত সুবিধাসমূহ:
গর্ভনিরোধকের ওপর কর বাড়ানোর পাশাপাশি অভিভাবকদের জন্য বেশ কিছু উৎসাহমূলক পদক্ষেপ চালু করা হচ্ছে।
শেনজেন ডেইলি জানিয়েছে, জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে বিক্রেতাদের ভ্যাট চালান দিতে হবে। অন্যান্য জন্ম-উৎসাহমূলক নীতির মধ্যে রয়েছে অভিভাবকদের আর্থিক সহায়তা, উন্নত শিশুসেবা এবং আরও বেশি পিতৃ ও মাতৃত্বকালীন ছুটি।
এছাড়া নতুন বছর থেকে সম্ভাব্য অভিভাবকদের জন্য নতুন প্রণোদনার মধ্যে রয়েছে শিশুসেবা, প্রবীণসেবা, প্রতিবন্ধী সেবা ও বিবাহ-সম্পর্কিত সেবায় কর অব্যাহতি। বয়স্ক ও কমতে থাকা জনসংখ্যার মুখোমুখি বেইজিং নগদ সহায়তা, উন্নত শিশুসেবা এবং বর্ধিত মাতৃত্ব ও পিতৃত্বকালীন ছুটির মতো সুবিধা দিচ্ছে।
বেইজিংয়ের ইউয়া পপুলেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জনসংখ্যাবিদ হে ইয়াফু বলেন, এসব পদক্ষেপ খুব একটা প্রভাব ফেলবে না, তবে এটি সন্তান জন্মদানে উৎসাহিত করা ও গর্ভপাত কমানোর জন্য একটি সামাজিক পরিবেশ তৈরির প্রচেষ্টাকে নির্দেশ করে।
আগে যেখানে চীন দম্পতিদের শুধু একটি সন্তান নেওয়ার ব্যাপারে কঠোর ছিল, সেখানে এখন গর্ভনিরোধক সামগ্রীর দাম বাড়ানো জনসংখ্যা হ্রাস ও বয়স্ক জনসংখ্যার অর্থনৈতিক চাপ মোকাবেলায় নীতিগত পরিবর্তনের অংশ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গর্ভনিরোধক সামগ্রীর বাড়তি খরচ বৃদ্ধিতে চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, এতে যৌনবাহিত রোগের হার বাড়তে পারে। একই সঙ্গে এটি সন্তান নেওয়ার প্রবণতায় কোনো পরিবর্তন আনবে কি না সে নিয়েও আলোচনা চলছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



