ইকবাল হোসেন : আদালতের নির্দেশে জব্দ হচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী থানার লালখান বাজার হাইলেভেল রোডের ১৪ নম্বর বাড়ি ‘পরশ মঞ্জিল’। বাড়িটির বর্তমান মালিক দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার আসামি প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তা ওসি শাহজাহানের স্ত্রী ফেরদৌসী আকতার। -খবর জাগো নিউজ।
ফেরদৌসী আকতারের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের হওয়া মামলায় বাড়িটি জব্দ হচ্ছে। এর মধ্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফেরদৌসী আকতারের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পদ জব্দের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। বাড়িটি বাদেও কক্সবাজার পৌরসভার চার কাঠা জমি, সৌদিয়া পরিবহনের মাধ্যমে পরিচালিত দুটি বাসসহ প্রায় দেড় কোটি টাকার বেশি সম্পদ জব্দের অনুমতি দেন আদালত। বাড়িটিতে রিসিভার নিয়োগের প্রক্রিয়াও শুরু করেছে দুদক।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, দুদকে দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে সম্পদের তথ্য গোপন ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে গত ২৮ জুলাই পুলিশ পরিদর্শক শাহজাহানের স্ত্রী ফেরদৌসী আকতারকে প্রধান আসামি করে মামলা করে দুদক। মামলার অভিযোগের সম্পদ অর্জনে স্ত্রীকে সহযোগিতা করায় ওসি শাহজাহানকেও আসামি করা হয়।
মামলায় ১ লাখ ৭১ হাজার ৭৩৪ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন, এক কোটি ৪৮ লাখ ৪ হাজার ৪১৩ টাকার মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন, হস্তান্তর ও রূপান্তরের অভিযোগ করা হয়েছে। মামলায় দুদক আইনের ২৬ (২), ২৭ (১), ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪ (২) ও ৪ (৩) এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারাসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সত্যতা পাওয়া যায়। পরে দুদকের পক্ষ থেকে ২০১৯ সালের ১৪ মার্চ ওসি মো. শাহজাহান ও তার স্ত্রী ফেরদৌসী আকতারের কাছ থেকে সম্পদ বিবরণী চেয়ে নোটিশ জারি করা হয়। ফেরদৌসী আকতার সম্পদ বিবরণীতে ৩ কোটি ২১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য দেন। তার স্বামীর কাছ থেকে ৪৩ লাখ ১০ হাজার ৮৬৭ টাকার স্থাবর সম্পদ হেবা (দান) হিসেবে পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেন।
ফেরদৌসী আকতার ২০০৬-০৭ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত ঘরভাড়া থেকে আয়, বৈদেশিক রেমিট্যান্স, ব্যবসার আয় ও অন্যান্য উৎস থেকে ২ কোটি ৪৩ লাখ ৫১ হাজার টাকা বৈধ আয় করেন বলে আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করেন। আয়কর রিটার্নে পোল্ট্রি ও মৎস্য খামার থেকে আয় দেখালেও দুদকের অনুসন্ধানে ওই ব্যবসা সম্পর্কিত সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী হিসেবে ব্যবসা করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি, মৎস্য ও পোল্ট্রি খামারে বিদ্যুৎ সংযোগের রেকর্ড, পরিবেশ ছাড়পত্র, খামারের লেনদেন সংক্রান্ত ব্যাংক স্টেটমেন্ট, মালামাল কেনাবেচার বিল ভাউচারসহ প্রামাণ্য রেকর্ডপত্র দেখাতে পারেননি। তার স্বামী ওসি মো. শাহজাহানের সহযোগিতায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি ও ঘুসের মাধ্যমে অর্জিত আয়কে পোল্ট্রি ও মৎস্য খামার থেকে আয় দেখিয়ে ২ কোটি ২৯ লাখ ৩০ হাজার ৭৩৫ টাকা ভুয়া আয় প্রদর্শন করেছেন বলে ওই মামলায় উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া ১ কোটি ৪৮ লাখ ৪ হাজার ৪১৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে ভোগদখলে রাখতে মানিলন্ডারিংয়ের অপরাধ করেছেন বলে মামলার আর্জিতে বলা হয়। এর আগে চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি ওসি মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপন করার অভিযোগেও আরেকটি মামলা করে দুদক।
পুলিশ পরিদর্শক মো. শাহজাহান বর্তমানে ট্যুরিস্ট পুলিশ চট্টগ্রাম অঞ্চলে কর্মরত। এর আগে তিনি লোহাগাড়া ও সন্দ্বীপ থানায় কর্মরত ছিলেন। মো. শাহজাহান কুমিল্লা জেলার লালমাই থানার কাতালিয়া গ্রামের সুলতান আহমদের ছেলে। বর্তমানে নগরের খুলশী থানার লালখান বাজার হাইলেভেল রোডের পরশ মঞ্জিলে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন।
অন্যদিকে, মামলার পর ওসি শাহজাহানের স্ত্রী ফেরদৌসী আকতার তার নামের বাড়ি, গাড়ি বিক্রির চেষ্টা করছেন। বিষয়টি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোপন সূত্রে জানতে পেরে গত ৩০ আগস্ট আদালতের নজরে আনেন। তদন্ত কর্মকর্তা আসামি ফেরদৌসী আকতারের অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ ফ্রিজ করার জন্য আদালতের অনুমতি চান। এর আগে দুদকের বিধিমালা অনুযায়ী কমিশনেরও অনুমতি চান তদন্ত কর্মকর্তা দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম।
তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ সেপ্টেম্বর ওসি শাহজাহানের স্ত্রী ফেরদৌসী আকতারের বাড়ি, জমি, দুটি বাস এবং ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ ফ্রিজ করার অনুমতি দেন চট্টগ্রাম মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ বেগম জেবুন্নেছা। বিষয়টি বহুল প্রচারিত দুটি বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশেরও নির্দেশনা দেন আদালত।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলামের কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, আদালতের অনুমতি পাওয়ার পর ওসি শাহজাহানের স্ত্রী ফেরদৌসী আকতারের লালখান বাজার হাইলেবেল রোডের ১৪ নম্বর বাড়ি পরশ মঞ্জিল, কক্সবাজার পৌরসভার ঝিলংজা মৌজার ৪ কাঠা জমি, দুই যাত্রীবাহী এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ওয়াসা মোড় শাখায় রক্ষিত কিছু নগদ টাকা ফ্রিজ করা হবে। বাড়িটিতে দুদক রিসিভার নিয়োগ করবে। এরই মধ্যে আদালতের আদেশের কপি চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার জেলার সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ওয়াসা শাখার ব্যবস্থাপক বিআরটিএ চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক বরাবরে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
হাইলেভের রোডের ‘পরশ মঞ্জিল’ নামের বাড়িটির নির্মাণের সময় ওসি শাহজাহান এবং তার স্ত্রী ফেরদৌসী আকতার যৌথ নামে কাজ শুরু করলেও পরে ওসি শাহজাহান তার মালিকানার অর্ধেক স্ত্রীকে হেবামূলে দান করেন। জমি ও নির্মাণ খরচ মিলে ৮৬ লাখ ২১ হাজার ৪৩৫ টাকা দেখানো হলেও ছয়তলা বাড়িটির বর্তমান বাজার মূল্য ৪ কোটি টাকার বেশি। সূত্র : জাগো নিউজ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।