২০২৫ সালের মার্চ মাসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা জারি হতে যাচ্ছে—এমন একটি বিভ্রান্তিকর গুজব। এই গুজব রাতারাতি ভাইরাল হয়ে পড়ে, যেখানে বলা হয় সেনাবাহিনী রাজধানী দখল করেছে, রাজনৈতিক নেতারা গৃহবন্দী, এমনকি “আপা” নাটকীয়ভাবে দেশে ফিরে এসেছেন।
এ প্রেক্ষিতে ২৫ মার্চ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ঢাকায় সেনানিবাসে এক অফিসার্স অ্যাড্রেস বৈঠকে স্পষ্ট ভাষায় জানান: “দেশে কোনো জরুরি অবস্থা জারি করা হয়নি।” তিনি বলেন, গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্যে সেনাবাহিনী কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাবে না এবং দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সেনা সদস্যদের পেশাদারভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন।
Table of Contents
বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব ও মার্কিন সিনেটরের প্রশংসা, রোহিঙ্গা ইফতার আয়োজন ও আহত শিক্ষার্থীদের জন্য মানবিক সহায়তার বিষয়গুলোও উঠে আসে। সেনাপ্রধান সবাইকে ধৈর্য, সততা ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখার বার্তা দেন।
জরুরি অবস্থা নিয়ে গুজব: কী ঘটল হঠাৎ করে?
২০২৫ সালের মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশে হঠাৎ করেই ছড়িয়ে পড়ে, সরকার “জরুরি অবস্থা” জারি করতে যাচ্ছে। সোশাল মিডিয়ার বিভিন্ন ভেরিফায়েড ও অখ্যাত আইডি থেকে এই খবর ভাইরাল হয়ে যায়।
ছড়ানো গুজবের কিছু উদাহরণ:
-
রাজধানীতে সেনাবাহিনীর ট্যাংক নামানো হয়েছে
-
‘আপা’ নাটকীয়ভাবে দেশে ফিরে এসেছেন
-
মধ্যরাতে সেনা অভ্যুত্থান হয়ে গেছে
-
জরুরি বৈঠকে সেনাপ্রধান ক্ষমতা নিচ্ছেন
নেটদুনিয়ায় এইসব খবর নিয়ে তৈরি হয় বিভ্রান্তি, ভয় এবং চরম হাস্যরসের পরিবেশ। এমনকি মজার ছলে পোস্ট করা হলেও, কেউ কেউ একে বাস্তব ধরে শেয়ার করতে থাকেন।
সেনাপ্রধানের ভাষ্য: “দেশে কোনো জরুরি অবস্থা জারি হয়নি”
২৫ মার্চ ২০২৫, ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স অ্যাড্রেস বৈঠকে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান স্পষ্ট ভাষায় জানান:
“নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে; কিন্তু দেশে কোনো জরুরি অবস্থা জারি করা হয়নি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি পেশাদার বাহিনী। সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে সরকার জানে, জনগণও জানে।”
তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর মূল দায়িত্ব দেশের নিরাপত্তা ও জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা। কোনো প্রকার বিভ্রান্তিকর অপপ্রচারে সেনাবাহিনী জড়াবে না।
গুজবের বিরুদ্ধে সতর্ক বার্তা: ধৈর্য ধরুন, প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না
সেনাপ্রধান কর্মকর্তাদের বলেন—
“অপপ্রচারে কান দেবেন না। এমন কিছু করবেন না যাতে উসকানিদাতাদের লক্ষ্য পূরণ হয়। সেনাবাহিনীর অগ্রাধিকার হলো দেশ ও জনগণ।”
তিনি সকল সেনা সদস্যকে ধৈর্য, পেশাদারিত্ব এবং ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেন।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রশংসা
বৈঠকে সেনাপ্রধান জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সফরের কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান:
-
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেছেন
-
৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতি দক্ষতার সঙ্গে সামাল দেওয়ার জন্য বাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা হয়েছে
-
রামু সেনানিবাসকে এক লাখ রোহিঙ্গার ইফতার আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর গ্যারি পিটারসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ নিয়েও আলোচনা করেন তিনি, যেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হয়।
আহত শিক্ষার্থীদের পাশে সেনাবাহিনী
সেনাবাহিনীর মানবিক ভূমিকাও তুলে ধরেন জেনারেল ওয়াকার। তিনি জানান, জুলাই অভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থীদের জন্য সেনা মালঞ্চে বিশেষ ইফতার আয়োজন করা হয়েছে।
সোশাল মিডিয়ায় গুজব: কারা ছড়াচ্ছে এবং কেন?
সাধারণ জনগণের প্রশ্ন এখন— এই গুজবগুলো কে ছড়াচ্ছে?
অনেকে বলছেন, পলাতক রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা বিদেশ থেকে সোশাল মিডিয়ায় গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে,
-
রাজনৈতিক ফায়দা তোলার উদ্দেশ্যে
-
দলের কর্মীদের চাঙা রাখার কৌশল হিসেবে
-
জনগণের মাঝে সরকারবিরোধী মনোভাব ছড়াতে
FAQ: জরুরি অবস্থার গুজব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
Q: দেশে কি সত্যিই জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে?
✅ না। এটি সম্পূর্ণ গুজব। সেনাপ্রধান নিজেই জানিয়েছেন, এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
Q: সেনা বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে?
✅ জাতীয় নিরাপত্তা, গুজব প্রতিরোধ, সেনাবাহিনীর দায়িত্ব এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক আলোচনা হয়েছে।
Q: সোশাল মিডিয়ার গুজব কিভাবে প্রতিহত করা যায়?
✅ যাচাই না করে কোনো তথ্য শেয়ার না করা, সরকার ও সেনাবাহিনীর অফিসিয়াল স্টেটমেন্ট ফলো করা, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া।
গুজবে নয়, সত্য-তথ্যে ভরসা রাখুন
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে গুজব ও অপপ্রচারে কান না দেওয়ার জন্য নাগরিকদের সচেতন হতে হবে।
সেনাপ্রধানের বক্তব্যে পরিষ্কার যে, দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়নি এবং সেনাবাহিনী দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।