সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তিতে ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে অপরিকল্পিত নগরায়ন, আবাসন বাড়ি-ঘর তৈরি, উন্নয়নমূলক কাজ, শিল্প কারখানা স্থাপন, রাস্তাঘাট নির্মাণ এবং প্রাকৃতিক কারণে প্রতিনিয়ত ভূমির প্রকৃতি ও শ্রেণিগত ব্যবহারের পরিবর্তন হচ্ছে। আবার দেশের বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষি জমি, বনভূমি, টিলা, পাহাড় ও জলাশয় বিনষ্ট হয়ে খাদ্যশস্য উৎপাদনের নিমিত্ত কৃষিজমির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে এবং পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এই বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় আইনটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে।
নতুন এই আইনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ন, আবাসন, বাড়ি-ঘর তৈরি, উন্নয়নমূলক কার্যক্রম, শিল্প-কারখানা ও রাস্তাঘাট নির্মাণরোধ করা; ভূমির শ্রেণি বা প্রকৃতি ধরে রেখে পরিবেশ রক্ষা ও খাদ্য শস্য উৎপাদন অব্যাহত রাখা; কৃষিজমি, বনভূমি, টিলা, পাহাড়, নদী, খালবিল ও জলাশয় সুরক্ষাসহ ভূমির পরিকল্পিত ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা; এবং ভূমির ব্যবহার নিশ্চিত করে পরিকল্পিত জোনিংয়ের মাধ্যমে ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহারে রাষ্ট্রীয় অনুশাসন নিশ্চিত করা।
এই আইনের মূল বিধানগুলির মধ্যে রয়েছে ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, ভূসংস্থান এবং উদ্দিষ্ট ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে জমিকে স্বতন্ত্র অঞ্চলে নিখুঁতভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং স্থল মূল্যায়নের মাধ্যমে, সরকার ডিজিটাল ল্যান্ড জোনিং ম্যাপ তৈরি করছে, যা সারা দেশে পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য একটি স্পষ্ট প্রতিচিত্র প্রদান করবে। ল্যান্ড জোনিং ম্যাপ তৈরি সংশ্লিষ্ট ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় চলমান প্রকল্পটির নাম ‘মৌজা ও প্লট ভিত্তিক জাতীয় ডিজিটাল ভূমি জোনিং প্রকল্প’।
বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং খাদ্য নিরাপত্তার মূলভিত্তি কৃষি জমির সুরক্ষার বিষয়টি আইনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। এই আইনে উর্বর জমির অননুমোদিত ব্যবহার থেকে রক্ষা করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যাতে টেকসই খাদ্য ফসল উৎপাদন নিশ্চিত করা যায়। উপরন্তু, জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিয়ে জলাভূমি, বন এবং নদী ব্যবস্থার মতো পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল অঞ্চলগুলি সংরক্ষণের জন্য বিশেষ বিধানগুলোর রূপরেখা দেয়া হয়েছে।
আইনের খসড়ায় ভূমি জোনিংয়ের জন্য ১০টি শ্রেণিবিন্যাসের প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, আবাদি, আবাসিক, বাণিজ্যিক, জলাভূমি, নদী, বন, পাহাড়, রাস্তা, শিল্প এবং ধর্মীয় স্থান।
প্রবিধানের বাস্তবায়ন, নিয়ন্ত্রণ, পরিবীক্ষণ ও হালনাগাদকরণের জন্য প্রস্তাবিত আইনে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি নিবেদিত ইউনিট প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়াটি, প্রশাসনিক প্রক্রিয়াগুলিকে সুবিন্যস্ত করবে, সমন্বিত পরিকল্পনা প্রচেষ্টাকে সহজতর করবে এবং দ্রুত এবং কার্যকর নিয়ন্ত্রক প্রয়োগ নিশ্চিত করবে।
এই আইনে নির্ধারিত ভূমি ব্যবহার বিধি লঙ্ঘনকারী ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রয়েছে। দণ্ডের মধ্যে জরিমানা থেকে শুরু করে কারাদণ্ড পর্যন্ত রয়েছে, যা শ্রেণি বহির্ভূতভাবে ভূমির অবৈধ ব্যবহার এবং অবৈধ ভূমি দখল রোধে সরকারের অঙ্গীকার। এই আইনের অধীনে অনধিক ২ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড, বা অনধিক ৫ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশের অধিকতর টেকসই ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হওয়ার পথে ভূমি জোনিং ও সুরক্ষা আইন, ২০২৪ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দেশের ভূমি সম্পদ রক্ষায় সরকারের অবিচল অঙ্গীকারের প্রমাণ।
উন্নয়নমূলক চাহিদা বাস্তবায়ন, আবার একই সাথে, পরিবেশ সুরক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় গৃহীত কার্যক্রমের মধ্যে এক সমন্বয়পূর্ণ ভারসাম্য বজায় রেখে এই আইনটি স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের পথ প্রশস্ত করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। একইসঙ্গে, ২০৪১ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের পথে ‘ভূমি জোনিং ও সুরক্ষা আইন, ২০২৪’ অন্যতম কার্যকরী আইন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়।