আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউক্রেনে আক্রমণের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে আন্তর্জাতিক আহ্বান ক্ষোভের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছে রাশিয়া। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি রেজুলেশন পাস হওয়ার পর এই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালো রাশিয়া। ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রাশিয়াকে ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ আক্রমণের পরিণতি ভোগ করতে হবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এই রেজুলেশনের প্রতীকী গুরুত্ব রয়েছে। তবে এটি কার্যকর বা বাস্তবায়নের আবশ্যকতা নেই।
রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিন বলেছে, পশ্চিমাদের জব্দকৃত রাশিয়ার আন্তর্জাতিক রিজার্ভ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া ঠেকানোর জন্য কাজ করবে মস্কো।
ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ অভিযোগ করেছেন, পশ্চিমারা ডাকাতিকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন করছে।
সোমবার পাস হওয়া এই প্রস্তাবে ইউক্রেনে আগ্রাসনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জন্য রাশিয়াকে জবাবদিহি করার আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে যুদ্ধের ফলে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির জন্য কিয়েভকে ক্ষতিপূরণ দিতে মস্কোকে বাধ্য করার কথা বলা হয়েছে।
ইউক্রেনের পক্ষ থেকে ১৯৩ সদস্যের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে খসড়া প্রস্তাবটি তোলা হয়। সোমবার এর ওপর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রস্তাবের পক্ষে ৯৪টি ভোট পড়ে। বিপক্ষে পড়ে ১৪টি ভোট। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানসহ ৭৩টি দেশ ভোটদান থেকে বিরত ছিল।
নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, মিসর, ইসরায়েল, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলোও ভোটদানে বিরত ছিল। রাশিয়া এবং দেশটির মিত্র বেলারুশ, চীন, কিউবা, উত্তর কোরিয়া, ইরান ও সিরিয়া প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে।
প্রস্তাবে আরও সুপারিশ করা হয়েছে ইউক্রেনের সহযোগিতায় সদস্য রাষ্ট্রগুলো একটি আন্তর্জাতিক রেজিস্টার তৈরি করে প্রমাণ নথিবদ্ধ করার জন্য।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই রেজুলেশনকে স্বাগত জানিয়েছেন। বলেছেন, রাশিয়া যে ক্ষতিপূরণ করবে তা এখন আন্তর্জাতিক আইনি বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত ভালিসি নাবেনজিয়া এই রেজুলেশনকে আইনগতভাবে বাতিল এবং অকার্যকর বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, পশ্চিমারা এই সংঘাতকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
এর আগে যুদ্ধের পর ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেওয়ার ঘটনা রয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বর্তমান আর্থিক মূল্যে ৩০০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ মিত্রবাহিনীকে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আগামী কয়েক বছর যাতে করে জার্মানি আর কোনও যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে না পারে সে জন্য এই উচ্চ ক্ষতিপূরণ ধার্য করা হয়েছিল।
তবে ইতিহাসবিদরা বলছেন, এতে বিপরীত ঘটনা ঘটেছে। ক্ষতিপূরণের ভারে বিপর্যস্ত এবং জার্মানিকে যুদ্ধে ‘দোষী’ সাব্যস্ত করার কারণে জার্মানি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগিয়ে গেছে।
জার্মানি ও অপর অক্ষ শক্তিগুলোকে যুদ্ধের পর ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। তবে ওই ক্ষতিপূরণ আদায়ের মূল লক্ষ্য ইউরোপে ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ, জার্মানিকে দেশটির পদক্ষেপের জন্য শাস্তি দেওয়া নয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।