বিশ্বজুড়ে অজানা আতঙ্কের মেঘ জমেছে। কারণ, জাপানের একজন রহস্যময় মানুষ — যাঁকে সকলে ‘জাপানের বাবা ভাঙ্গা’ বলে ডাকে — নতুন এক ভবিষ্যদ্বাণী করে আবারও সাড়া ফেলে দিয়েছেন। রায়ো তাতসুকি নামের এই ব্যক্তি মূলত একজন শিল্পী ছিলেন, তবে তার রহস্যময় স্বপ্ন এবং সেগুলি থেকে নির্গত ভবিষ্যদ্বাণীর জন্যই তিনি আজ বিশ্বব্যাপী পরিচিত। ‘জাপানের বাবা ভাঙ্গা’ এই শব্দটি এখন শুধু কৌতূহলের নয়, বরং আতঙ্কের উৎসও বটে।
জাপানের ‘বাবা ভাঙ্গা’ কে? তার পরিচয় ও ভবিষ্যদ্বাণীর ইতিহাস
রায়ো তাতসুকির যাত্রা শুরু হয়েছিল একজন চিত্রশিল্পী হিসেবে। তিনি তার কমিকস বইয়ের মাধ্যমে পরিচিতি অর্জন করেন, তবে ১৯৮০ সালের পর থেকে তার জীবন একেবারেই অন্য পথে মোড় নেয়। সে বছর থেকেই তিনি স্বপ্নে বিভিন্ন ধ্বংস, দুর্যোগ ও মানবিক বিপর্যয়ের ছবি দেখতে শুরু করেন। সেগুলি তিনি তার চিত্রকলায় ফুটিয়ে তোলেন এবং সময়ের সঙ্গে সেগুলি বাস্তবে রূপ নেয়।
Table of Contents
১৯৯৯ সালে রায়ো জানিয়েছিলেন, জাপানে এক ভয়াবহ দুর্যোগ আসবে যা বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটাবে। এবং সত্যিই সেই বছর এমন ঘটনা ঘটে যা তার কথাকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে। এর পরে ১৯৯১ এবং ২০১১ সালের সুনামি ও ভূমিকম্পের আগাম আভাসও তিনি দিয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়।
এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলি প্রায়ই বাস্তবে রূপ নিয়েছে বলে অনেকেই তাকে “জাপানের বাবা ভাঙ্গা” বলে ডাকে, যার তুলনা করা হয় পূর্ব ইউরোপের ভবিষ্যদ্বক্তা বাবা ভাঙ্গার সঙ্গে।
২০২৫ সালের জন্য নতুন সতর্কবার্তা: কী বললেন রায়ো তাতসুকি?
এবার ২০২৫ সাল নিয়ে ভয়ানক এক ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন রায়ো তাতসুকি। তার মতে, জুলাই মাসে জাপান এক ভয়ঙ্কর সুনামির সম্মুখীন হতে চলেছে। তার ভাষ্য মতে, সমুদ্রের নিচে থাকা আগ্নেয়গিরির জেগে ওঠার ফলে এই দুর্যোগ ঘটবে।
তিনি আরও বলেন, “আমি স্বপ্নে হীরের মতো এক আকৃতি দেখেছি জাপানের উপরে,” যার ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছেন এই দুর্যোগ কেবল জাপানেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটি তাইওয়ান, ইন্দোনেশিয়া, মারিনা দ্বীপ এবং হাওয়াই পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।
এই সতর্কবার্তা শুনে অনেকেই আতঙ্কিত, কারণ অতীতে রায়োর ভবিষ্যদ্বাণীগুলি প্রায়ই মিলে গেছে। বিশেষ করে ২০১১ সালের সুনামি সম্পর্কে তার আগাম সতর্কবার্তা বহু মানুষকে বাঁচাতে পারত, যদি তখন কেউ গুরুত্ব দিত।
বিজ্ঞানীদের প্রতিক্রিয়া এবং যুক্তি
যদিও তার দাবি বহুবার বাস্তবের সঙ্গে মিলে গেছে, তবে বিজ্ঞানীরা রায়ো তাতসুকির এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলিকে পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। তারা বলেছেন, এগুলি শুধুই অনুমানভিত্তিক এবং বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। ভূতত্ত্ব, আবহাওয়া বিজ্ঞান এবং সমুদ্রতত্ত্বে এমন কোনো পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয় যা এক ব্যক্তির স্বপ্ন থেকে নির্ধারিত হয়।
এই প্রসঙ্গে জানিয়েছে, ভবিষ্যদ্বাণী সাধারণত অনুমান, ধর্মীয় ব্যাখ্যা বা মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে এবং বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ থেকে অনেকটাই আলাদা।
তবে সাধারণ মানুষ অনেক সময়ই বিজ্ঞান এবং অনুভূতির মাঝামাঝি এক অবস্থানে দাঁড়িয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। অতীতের অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান আতঙ্ক একত্রে মিলে রায়োর কথা গুরুত্ব দেওয়ার মতো অবস্থান তৈরি করেছে।
রায়ো তাতসুকির ভবিষ্যদ্বাণী ও জনমনে প্রতিক্রিয়া
জাপানের মানুষজনের মধ্যে রায়ো তাতসুকির প্রতি এক ধরনের মিশ্র অনুভূতি বিরাজ করছে। একদিকে যেমন তার কথা উপেক্ষা করে অনেকে তাকে ভণ্ড ভাবছেন, অন্যদিকে বহু মানুষ আবার তার ভবিষ্যদ্বাণীকে গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নজর দিচ্ছেন।
বিশ্বব্যাপী মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এই আলোচনা উত্তাল। ইউটিউব, টুইটার এবং সংবাদ মাধ্যমগুলিতে তার নতুন সতর্কবার্তা ছড়িয়ে পড়েছে আগুনের মতো।
তবে সরকারিভাবে এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো সতর্কতা বা ঘোষণা আসেনি। জাপানের সরকার এবং ভূতত্ত্ব বিভাগ অবশ্য সমুদ্রপৃষ্ঠের পর্যবেক্ষণ জোরদার করেছে, তবে সেটা নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবেই গণ্য করা হচ্ছে।
ভবিষ্যৎ: কী করা উচিত আমাদের?
বিশ্বাস করা বা না করা — এটি প্রতিটি ব্যক্তির নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তবে অতীত থেকে আমরা যা শিখেছি, তা হল সতর্কতা সবসময় ভালো। যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে আগাম সতর্কতা পাওয়া যায় এবং তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়, তাহলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই রোধ করা সম্ভব।
বিশেষ করে বিশ্ববাজারের প্রভাব ও প্রযুক্তির অগ্রগতির এই সময়ে, আমাদের উচিত তথ্যকে মূল্যায়ন করা এবং নিজস্ব প্রস্তুতি রাখা।
রায়ো তাতসুকির কথা মেনে চলা হোক বা না হোক, সচেতনতা এবং প্রস্তুতি — এই দুই-ই হতে পারে আমাদের রক্ষাকবচ।
রায়ো তাতসুকি যেভাবে ‘জাপানের বাবা ভাঙ্গা’ নামে পরিচিত হয়েছেন, তা আমাদের দেখিয়ে দেয় অজানা ভবিষ্যতের প্রতি মানুষের চিরন্তন আগ্রহ। ২০২৫ সালের জন্য তার ভবিষ্যদ্বাণী আমাদের সতর্ক করে, আর তাই আমরা যতটা সম্ভব তথ্য ও প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করতে পারি।
FAQs: জাপানের ‘বাবা ভাঙ্গা’ সম্পর্কে সাধারণ প্রশ্নোত্তর
‘জাপানের বাবা ভাঙ্গা’ কে?
রায়ো তাতসুকি একজন জাপানি চিত্রশিল্পী ও স্বপ্নদ্রষ্টা, যিনি বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে আগাম ভবিষ্যদ্বাণী করে পরিচিতি অর্জন করেছেন।
তার কোন ভবিষ্যদ্বাণীগুলি সত্যি হয়েছে?
তার ভবিষ্যদ্বাণীগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ১৯৯৯ সালের জাপানি বিপর্যয়, ১৯৯১ সালের ভূমিকম্প এবং ২০১১ সালের সুনামি — যেগুলি অনেকটাই বাস্তবে রূপ নিয়েছিল।
২০২৫ সালের জন্য তার ভবিষ্যদ্বাণী কী?
তিনি জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের জুলাই মাসে একটি বড় ধরনের সুনামি ঘটবে যা জাপান সহ বেশ কিছু দ্বীপে ক্ষয়ক্ষতি ডেকে আনবে।
বিজ্ঞানীরা তার ভবিষ্যদ্বাণীকে কীভাবে দেখছেন?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, তার ভবিষ্যদ্বাণীগুলি বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে সত্য নয় এবং এগুলি অনুমান বা মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যার উপর নির্ভর করে।
মানুষ কেন তার কথা গুরুত্ব দেয়?
তার অতীতের কিছু ভবিষ্যদ্বাণী মিলে যাওয়ায় মানুষ তাকে গুরুত্ব দেয়, এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য দুর্যোগ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী থাকে।
এই ভবিষ্যদ্বাণীর পরে কী প্রস্তুতি নেওয়া উচিত?
যদিও এটা অনুমানভিত্তিক, তবুও সজাগ থাকা, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মানা এবং প্রয়োজনে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি রাখা উচিত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।