জুমবাংলা ডেস্ক : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আল বেরুনী হলের বর্ধিতাংশের লেকের পাড়ে প্রায় ‘পাঁচ শতাধিক’ গাছ কেটে চারুকলা অনুষদের ছয়তলা ভবন নির্মাণকাজ শুরুর উদ্যোগের অভিযোগ উঠেছে। এ ভবন নির্মাণের ফলে ওই স্থানের গাছপালার পাশাপাশি সংলগ্ন লেকের অস্তিত্ব হুমকিতে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নির্মাণকাজে বাধা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।
শনিবার (১৮মে) সকালে প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলাকালীন সাইট ঘেরাওয়ের কাজ বন্ধ করে নির্মাণাধীন এলাকার বেষ্টনী ভেঙে ফেলেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ণ করে নির্মাণকাজ শুরুর দাবি জানান। আন্দোলনকারী এবং স্টেট অফিস সূত্র থেকে প্রায় পাঁচ শতাধিক গাছ কাটার বিষয়টি জানা গেছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, মাস্টারপ্ল্যান ব্যতীত নির্মাণকাজের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়বে। প্রকল্প পরিচালক কতটুকু জায়গাজুড়ে নির্মাণ হবে, তার কোনো তথ্য দিতে পারেননি। প্রথমদিকে বাস্কেটবল কোর্টের একটু অংশ ভবনের মধ্যে পড়বে বললেও লেকের ধার পর্যন্ত নির্মাণের জন্য ঘিরে ফেলা হচ্ছে। ফলে নির্ধারিত জায়গার বাইরে থাকা ঘন জঙ্গল ও গাছপালা কাটা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া নতুন করে গাছ কেটে কোনো ভবন চান না তারা।
তাদের দাবি, প্রায় পাঁচ বছর যাবত একটি পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যানের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন তারা। চারুকলা ভবন নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থানটির পাশেই রয়েছে একটি সুবিস্তৃত লেক, যেখানে কিছুদিন আগেও সবচেয়ে বেশি পাখি আসতো। বহুতল ভবন নির্মাণ করা হলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে পরিযায়ী পাখির নিরাপদ আবাসস্থল।
পাশাপাশি ভবন নির্মাণকাজ চলাকালে ব্যহত হতে পারে পরিচায়ী পাখির বিচরণ। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান করে ভবনটি অন্যত্র স্থানান্তর করা উচিত। এছাড়া নির্ধারিত স্থানে ভবন নির্মাণের কারণে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক গাছ কাঁটা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ছাত্র ইউনিয়নের জাবি সংসদের সভাপতি আলিফ মাহমুদ বলেন, ‘আল বেরুনী এক্সটেনশনে এর আগেও প্রশাসন হল করার পাঁয়তারা করেছিলো। আমরা তা রুখে দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে যত্রতত্র অপরিকল্পিত ভবন হওয়ায় গত তিন দশকে ২৮ শতাংশ জলাশয় এবং স্থলভূমি নাই হয়ে গেছে। এ জায়গাটিতে পাঁচ শতাধিক গাছ আছে। পাশের যে লেক আছে এখানে ভবন হলে তা পরিযায়ী পাখির জন্য অনিরাপদ হবে। নতুন কলার এক্সটেনশন হলে এবং লেকচার থিয়েটার হলের কাজ শেষ হলে শ্রেণিকক্ষ সংকটের সুযোগ নেই। তাই মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া আমরা ভবন হতে দেব না।’
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগকে অনুষদে রূপান্তরিত করতে চান বিভাগীয় শিক্ষকরা। এ লক্ষ্যে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে অনুষদ ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এজন্য আল বেরুনী হলের বর্ধিতাংশের স্থানটি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভবন নির্মাণে বরাদ্দকৃত ৯৭ কোটি টাকার মধ্যে ৪৭ কোটি ৮৯ লাখ ১৭ হাজার টাকা বাংলাদেশ সরকার দেবে। বাকি টাকা ভারত সরকার অর্থায়ন করবে।
এদিকে মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া নতুন ভবন নির্মাণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঠেকাতে এবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভিন্ন পথ অবলম্বন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, গত ১০ মার্চ অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জীববিজ্ঞান অনুষদ এবং গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। প্রশাসন অনুষদ নির্মাণের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নির্মাণাধীন দুটি অনুষদভুক্ত সকলের বিভাগের শ্রেণি প্রতিনিধির (সিআর) সহযোগিতায় বিভাগগুলোর শিক্ষার্থীদের উপস্থিত হতে বলেন এবং ভবন নির্মাণ উপলক্ষ্যে সবাইকে নাস্তার প্যাকেট ধরিয়ে দেওয়া হয়।
এ সময় পরিবেশবাদী সংগঠন ও সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জোরালো আন্দোলনের মুখে তাদের ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। জীববিজ্ঞান অনুষদভুক্ত একটি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ১০ মার্চ ক্লাস শেষে শ্রেণি প্রতিনিধির মাধ্যমে তাদের বলা হয়, প্রতি ব্যাচ থেকে ১০ জন করে শিক্ষার্থীকে ভবন নির্মাণ উদ্ধোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। পরে সবাই মিলে সে অনুষ্ঠানে যোগ দেন তারা।
একইদিনে একইরকম কৌশল অনুসরণ করা হয় গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের ক্ষেত্রেও। অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প কর্তৃপক্ষের পরামর্শে এখানেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জড়ো করা হয়েছিল। এর পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল প্রগতিশীল সংগঠনসহ অন্যান্য সংগঠনগুলো আন্দোলনের হুমকি দিলে পুনরায় একই পথ অবলম্বন করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের নবাগত ডিন অধ্যাপক মো. আবদুর রব বলেন, আমি এখনও ডিনের দায়িত্ব গ্রহণ করিনি। তাছাড়া এ বিষয়ে আমি অবগত নয়। ডিনের দায়িত্ব নেওয়ার পর এ বিষয়ে আমি খোঁজ নিবো।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম এম ময়েজউদ্দীন বলেন, অংশীজনের মতামত নিয়েই ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। দীর্ঘদিনের ধরে অনেক কিছু ভেবেই এখানে ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। আর এখানে শুধু বিভাগ নয়, একটি পূর্ণাঙ্গ অনুষদ নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এখানে ছয়টি বিভাগের ক্লাসরুম হবে। আমাদের কাজ চলমান থাকবে। আশা করছি, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়টি তাদের বুঝাতে পারব।
শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা যারা ওখানে যাচ্ছে, নিজেদের ইচ্ছাতেই যাচ্ছে। আমাদের পক্ষ থেকে তাদের ওখানে যেতে বলা হয়নি। শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহারের প্রশ্নই আসে না।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।