জুমবাংলা ডেস্ক : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত শিক্ষক সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সানওয়ার সিরাজ। একই বিভাগের ওই ছাত্রী নিপীড়নের প্রতিকার না পেয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় ২৬টি ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে জানা গেছে। পরে তাকে সাভারের একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
লিখিত অভিযোগে ওই ছাত্রী জানান, ২০১৮ সালে তিনি তার তৃতীয় পর্বের একটি কোর্সের মানোন্নয়ন পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য তিনি কোর্স শিক্ষক অভিযুক্ত সানওয়ার সিরাজের শরণাপন্ন হন। তখন তিনি ওই ছাত্রীর ফোন নম্বরর নেন এবং যেকোনো সমস্যায় যোগাযোগ করতে বলেন। পরদিন শিক্ষক নিজেই ওই ছাত্রীকে ফোন করে পরীক্ষা কেমন হয়েছে জানতে চান। সেদিন রাতে শিক্ষক সানওয়ার সিরাজ ছাত্রীর ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করে তার সঙ্গে ঘোরাফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, ‘হঠাৎ করে তার এমন আচরণে আমি বিস্মিত হই। পরবর্তীতে আমি বিভাগে গিয়ে তার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছিল কি না জানতে চাই। কিন্তু তিনি নিশ্চিত করেন, আইডি হ্যাক হয়নি। তিনি নিজেই ওসব মেসেজ পাঠিয়েছেন।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘ওই শিক্ষক আমাকে তার সঙ্গে সময় কাটানো ও ঘোরাঘুরির প্রস্তাব দেন। তার এমন আচরণে আমি বিব্রত বোধ করতে থাকি। ফলে বারবার ফেসবুক আইডি ডিএক্টিভ (অকার্যকর) করি। কিন্তু তিনি অব্যাহতভাবে আমাকে উত্যক্ত করতে থাকেন।’
এসব ঘটনার পর ওই ছাত্রী শিক্ষক সানওয়ার সিরাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সিদ্ধান্ত নেন। ঘনিষ্ঠজনদের বিষয়টি জানালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষা সামনে রেখে তারা তাকে অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকতে বলেন এবং কৌশলে ওই শিক্ষককে এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন।
ওই ছাত্রী বলেন, ‘পরীক্ষা চলাকালে ওই শিক্ষক আমাকে জামা উপহার, রেস্টুরেন্টে খাওয়া, রাতে একসঙ্গে ঘুরতে যাওয়া এবং স্ত্রীর অনুপস্থিতে তার বাসায় রাত যাপনের প্রস্তাব দেন। একপর্যায়ে চরম আপত্তিকর কথাবার্তা বলেন এবং কুপ্রস্তাব দেন। পরে তিনি ব্যর্থ হয়ে তার কোর্সে আমাকে কম নম্বর দেন। আমি তার ধারাবাহিক অত্যাচারে মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি।’
পরে বিভাগীয় এক সেমিনারে ওই ছাত্রী যৌন নিপীড়নের বিষয়টি উত্থাপন করলে তৎকালীন বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক সামসুন্নাহার খানম তার ওপর ক্ষিপ্ত হন এবং তথ্যপ্রমাণসহ তার কাছে লিখিত অভিযোগ করতে বলেন। অন্যথায় উল্টো ছাত্রীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন।
এ বিষয়ে ওই ছাত্রী বলেন, ‘আমি যখন যৌন নিপীড়নের তথ্যপ্রমাণসহ তৎকালীন বিভাগীয় সভাপতির কাছে হস্তান্তর করি তখন তিনি আমাকে সহানুভূতি জানিয়ে এসব ভুলে গিয়ে ক্যারিয়ারের দিকে নজর দিতে বলেন।’
এ বিষয়ে তৎকালীন বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক সামসুন্নাহার খানম বলেন, ‘আমাকে কোনো ধরনের লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি। আমার নামে মিথ্যা ও বানোয়াট কথা বলা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে নতুন বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা বলেন, গত ১৯ সেপ্টম্বর লিখিত অভিযোগটি হাতে পেয়েছি। পরে তথ্যপ্রমাণসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক সানওয়ার সিরাজের মন্তব্য জানতে তার সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করেও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। বিভাগের তার কক্ষটি তালাবদ্ধ রয়েছে এবং তার মুঠোফোন নম্বরটিও বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলের প্রধান অধ্যাপক ড. রাশেদ আখতার বলেন, ‘অভিযোগটি হাতে পেয়েছি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাই এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করার সুযোগ নেই।’ সূত্র : আলোকিত বাংলাদেশ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।