জুমবাংলা ডেস্ক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের ৭৪ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে একজন ওই ইউনিয়ন জামায়াতের আমির।
শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংরক্ষিত মহিলা (৩১২ সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম শিউলী আজাদ। আয়োজক ছিলেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. সাইফুদ্দিন চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা পাওয়া ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মো. তাজুল ইসলাম ইতোপূর্বে নাশকতার মামলায় আসামি হয়ে একাধিকবার জেল খেটেছেন। প্রধান অতিথির কাছ থেকে তিনি সংবর্ধনার ক্রেস্ট ও ফুলের তোড়া বুঝে নেন।
এ নিয়ে সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীকে জানানো হয়েছে উল্লেখ করে রোববার বিকেলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এর দায়ভার আয়োজকদের নিতে হবে। আমি জানতাম না মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে এ ধরণের কাউকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। মন্ত্রী মহোদয়কে বলেছি, এমন হয়ে থাকলে যেন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকেই তার নাম বাদ দেওয়া হয়। অন্যথায় আমাদের নানাভাবে বিব্রত হতে হবে।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ শরীফপুর ইউনিয়ন কমান্ডের পক্ষে কমান্ডার ফয়েজ আহমেদ ফুল মিয়া ও ডেপুটি কমান্ডার এ কে এম সাদির এক প্রতিবাদপত্রে অনুষ্ঠান নিয়ে যারা বিতর্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়। তবে জামায়াত নেতার সংবর্ধনা নেওয়ার বিষয়ে প্রতিবাদপত্রে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানানো হয় ওই প্রতিবাদপত্রে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার বিকেলে শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে ওই ইউনিয়নের ৭৪ জনকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রয়াত ৪৩ জন ও ৩১ জন জীবিত। প্রয়াতদের পরিবারের সদস্যদের কাছে সংবর্ধনার ক্রেস্ট ও ফুল তুলে দেওয়া হয়। ইউনিয়ন পরিষদ সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম শিউলী আজাদ।
শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সাইফুদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ফয়েজ আহমদ ফুল মিয়া, এ.কে.এম ছাদির, মো. ছানাউল্লাহ, তাজুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান হাফ মিয়া, ইউপি সদস্য মো. ইকবাল হোসেন, ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি মোজ্জামেল হক তপন, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক রায় ভৌমিক এবং আশুগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সদস্য মো. সাজিদুল ইসলাম সাচ্চু।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সংবর্ধিত তাজুল ইসলাম পেশায় হোমিও চিকিৎসক। একইসঙ্গে তিনি শরীফপুর ইউনিয়ন জামায়াতের আমির। কয়েক বছর আগে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছেঁড়ার অভিযোগে হওয়া মামলায় তিনি জেলও খাটেন। এছাড়া নাশকতাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যে কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) এ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ফয়েজ আহমেদ ফুল মিয়ার কাছে জানতে চাইলে প্রথমে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তাজুল ইসলাম জামায়াতপন্থী। তাকে ওই অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। তিনি কীভাবে অনুষ্ঠানে এলেন জানি না। তবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকায় তার নাম রয়েছে।
তবে কিছুক্ষণ পর তিনি বলেন, দাওয়াতের ভার ডেপুটি কমান্ডারকে দেওয়া হয়। মূলত উনার কাছ থেকে দাওয়াত পেয়েই তিনি অনুষ্ঠানে এসেছেন।
তবে ডেপুটি কমান্ডারের সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সাইফুদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ইউনিয়নের যে তালিকা তাতে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাজুল ইসলামের নাম রয়েছে। উনি উপজেলার বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও যোগ দেন। তবে এখন রাজনীতিতে তিনি নিষ্ক্রিয়। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের মাধ্যমে উনাকে দাওয়াত দেওয়া হয়। এখন আমার বিরুদ্ধে থাকা কিছু লোকজন এ নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এদিকে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের দায়িত্বে থাকা আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরবিন্দু বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি এখন পর্যন্ত কেউ আমাকে জানায়নি। খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।