আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ধীরে হলেও করোনা সংক্রমণ আবার বেড়ে চলায় জার্মানিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে তর্কবিতর্ক চলছে৷ তবে করোনা টিকা না নেওয়া মানুষদের উপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মতবিরোধ আরো তীব্র হচ্ছে৷ খবর ডয়চে ভেলে’র।
অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে এখনই করোনা মহামারির চতুর্থ ঢেউয়ের প্রস্তুতি নিতে চায় জার্মানি৷ আসন্ন হেমন্তকালের শুরুতেই সংক্রমণের হার আবার অনেক বাড়তে চলেছে বলে একাধিক পূর্বাভাষ শোনা যাচ্ছে৷ এমন পরিস্থিতি এড়িয়ে যেতে যে কড়া পদক্ষেপের প্রয়োজন, রাজনৈতিক মতানৈক্যের কারণে তা আপাতত সম্ভব হচ্ছে না৷ বিশেষ করে সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আগে সাধারণ মানুষের কল্যাণের বদলে তাদের মন জয় করার চেষ্টা করছে রাজনৈতিক দলগুলি৷ ফলে হেমন্তকালের সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে বিভ্রান্তিও বেড়ে চলেছে৷
সুযোগ পেয়েও যারা এখনো করোনা টিকা নিতে প্রস্তুত নন, তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার সম্ভাবনাই জার্মানিতে আপাতত মূল বিতর্কের কারণ৷ একদল নেতা সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে তাঁদের গতিবিধি ও অধিকার সঙ্কুচিত করার প্রস্তাব দিচ্ছেন৷ শুধু করোনা পরীক্ষা করিয়ে টিকাপ্রাপ্ত ও করোনাজয়ীদের মতো সমান অধিকার প্রত্যাহার করতে চান তাঁরা৷ অন্যরা জনগণের মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার সঙ্কোচনের ঘোর বিরোধী৷ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের বিদায়ী মন্ত্রিসভার মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে৷ ছোট শরিক এসপিডি দলের সদস্য ও বিচারমন্ত্রী ক্রিস্টিনে লামব্রেশট করোনা টিকা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছেন৷ তবে সুযোগ পেয়েও টিকা না নিলে ভবিষ্যতে মানুষকে করোনা পরীক্ষার ব্যয় বহন করতে হতে পারে বলে তিনি মনে করেন৷ অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার টিকা না নিলে নিষেধাজ্ঞার পক্ষে সওয়াল করেছেন৷ তবে বিষয়টিকে শাস্তি হিসেবে গণ্য না করে বৃহত্তর সমাজের স্বার্থে সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখাতে চান তিনি৷
যেসব রাজনীতিক আপাতত টিকা না নেওয়া মানুষের উপর নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ভবিষ্যতে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে বিষয়টি নতুন করে ভেবে দেখতে প্রস্তুত৷ তার আগে তাঁরা শাস্তির বদলে অবশিষ্ট মানুষকে টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা চালাতে চান৷ করোনা ভাইরাসের ছোঁয়াচে ডেল্টা ভেরিয়েন্টের মোকাবিলা করতে যত বেশি সম্ভব মানুষকে টিকার আওতায় আনতে আরও পদক্ষেপের পক্ষে সওয়াল করছেন তাঁরা৷ উল্লেখ্য, জার্মানিতে করোনা টিকার সব প্রয়োজনীয় ডোজ নেওয়া মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ ছুঁতে চলেছে৷
জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান বিদেশে ছুটি কাটিয়ে দেশে ফেরা মানুষের জন্য করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা করছেন বলে সংবাদ মাধ্যমের একাংশ দাবি করছে৷ এখনো পর্যন্ত শুধু বিমানযাত্রী ও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত দেশের ক্ষেত্রে এই নিয়ম চালু আছে৷ মন্ত্রিসভায় নতুন বিধিনিয়ম নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বলে দাবি করা হচ্ছে৷ তবে সম্পূর্ণ টিকাপ্রাপ্ত ও করোনাজয়ীদের জন্য করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক নাও হতে পারে৷
হেমন্তকালে সংক্রমণের হার বাড়লেও করোনা ভাইরাসের আগের ঢেউগুলির মতো হাসাপাতালের উপর চাপ বাড়বে কিনা, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না৷ তবে বয়স্ক ও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের সিংহভাগ টিকা নেওয়ার ফলে এমন পরিস্থিতি এড়ানো যাবে বলে মনে করছেন কিছু বিশেষজ্ঞ৷ এমারজেন্সি ডাক্তারদের সংগঠনের প্রধান স্টেফান ক্লুগে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সংক্রমণের হার বাড়লেও হাসপাতালের আইসিইউ-র উপর আগের মতো চাপ পড়বে না বলে তিনি মনে করেন৷ তবে তা সত্ত্বেও তিনি ডেল্টা ভেরিয়েন্ট সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন৷ তাই মাস্ক পরা ও দূরত্ব বজায় রাখার মতো বিধিনিয়ম পুরোপুরি মেনে চলা উচিত৷
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।