আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ‘ভেগান ডিম’ কথাটা শুনলে স্বর্ণের পাথরবাটি মনে হতে পারে। তবে জার্মানিতে কিছু গবেষক ও স্টার্টআপ কোম্পানির কর্ণধাররা ঠিক সেই অসাধ্যসাধনের চেষ্টা করছেন। কাজটা কঠিন হলেও তারা হাল ছাড়তে নারাজ।
আমাদের অনেকের কাছে ময়দা ও ডিম আদর্শ উপকরণ। কিন্তু ভেগান হিসেবে বেক করতে গেলে ডিমের বিকল্পের খোঁজ করতে হয়। ময়দার তালে ডিমের সেরা বিকল্প কী হতে পারে? আপেলের সস? লুপিন ফ্লাওয়ার? নাকি শাক-সবজি সিদ্ধ করার পর অবশিষ্ট তরল? মিউনিখ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মারিউস হেংকেল মনে করেন, “সত্যি কথা বলতে কি আমার কাছে ডিমের সব বৈশিষ্ট্যের বিকল্প হিসেবে এর কোনওটাই সমাধানসূত্র হতে পারে না।”
ডিম অত্যন্ত জটিল প্রাকৃতিক পণ্য। ডিমের অনেক বৈশিষ্ট্য সহজে নকল করা সম্ভব নয়। কোষ বিজ্ঞানী হিসেবে মারিউস হেংকেলের কাছে সেটা একটা চ্যালেঞ্জ। কিন্তু তিনি সবকিছু খাদ্য শিল্পখাতের হাতে ছেড়ে দিতে প্রস্তুত নন।
কয়েকটি স্টার্টআপ কোম্পানিও সেক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে চায়। যেমন বার্লিনের ‘লাভলি ডে ফুডস’ কোম্পানি। কোম্পানির কর্ণধার লিডিয়া ফাবিয়ান বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি, যে পরিবেশের উপর আমাদের বর্তমান খাদ্য ব্যবস্থার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সেই মাত্রা অত্যন্ত বেশি। সেটা আর চলতে দেওয়া যায় না, কারণ আমরা আমাদের গ্রহ ধ্বংস করে ফেলছি।”
তাহলে ডিমের নিখুঁত বিকল্প কেমন দেখতে হবে এবং কী করবে?
ভেরোনিকা গার্সিয়া-আর্তেয়াগা মনে করেন, তার কাছে সেই প্রশ্নের জবাব রয়েছে। মেক্সিকোয় তার জন্ম৷ সেখানকার মানুষ প্রচুর ডিম খায়। ফলে তিনি সে বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছিলেন। ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউট ফর প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং-এ কাজ করতে করতে তিনি এমন এক ডিম সৃষ্টি করেন, যা পরিবেশ ও প্রাণিজগতের উপর কোনও প্রভাব রাখে না।
নামী বিনিয়োগকারীদের মদত নিয়ে তিনি বার্লিনে নেগস্ট নামের এক স্টার্টআপ কোম্পানি খোলেন। খাদ্য প্রযুক্তিবিদ হিসেবে তিনি প্রথম সম্পূর্ণ ভেগান ডিম উৎপাদনের ব্রত নিয়েছেন। সেই বিকল্পের এমনকি খোলসও থাকবে। তার টিম আপাতত ডিমের কুসুম আরও কিছুটা তরল করতে বিন ও রাঙালু থেকে প্রোটিন যোগ করছে। সেই ভেগান ডিমে এমনকি উদ্ভিদ-ভিত্তিক তেল ও ক্যালসিয়াম থেকে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডও থাকবে। সব মিলিয়ে ১৪টি উপাদান স্থিতিশীল এক অবস্থা সম্ভব করছে। সেই টিম বিশেষ করে ডিমের সাদা অংশের বিকল্প সৃষ্টির কাজে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে। ভেরোনিকা বলেন, “আমাদের এমন কিছুর সন্ধান করতে হয়েছিল, যা মুরগির ডিমের মতো স্বচ্ছ এবং প্রোটিনের সঠিক মাত্রা রয়েছে।”
ডিমের সাদা অংশ ও কুসুমের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখা ছিল এর পরের চ্যালেঞ্জ। দেখা গেল, ভেগান কুসুমের ক্যালসিয়াম এক অ্যালজির এক্সট্র্যাকটের সংস্পর্শে এলে মেমব্রেন বা পর্দা সৃষ্টি করে। অর্থাৎ উদ্ভিদভিত্তিক সেই অংশ মেমব্রেনে ঢাকা এক গোলক হয়ে উঠে এগ হোয়াইট থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে।
কিন্তু ডিমের বৈশিষ্ট্যগুলো কীভাবে অনুকরণ করা সম্ভব? প্রতিযোগী কোম্পানি হিসেবে বার্লিনেরই লাভলি ডে ফুডসও ডিমের সেই বৈশিষ্ট্য অনুকরণের চেষ্টা করছে। মূল ডিমে বিভিন্ন ধরনের প্রোটিনের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সেটা সম্ভব করে। বিকল্প হিসেবে ফেনা, জেল বা বাইন্ডের কথা ভাবা হচ্ছে। প্রযুক্তির সাহায্যে সেই সব প্রক্রিয়ায় রদবদল করা সম্ভব। লিডিয়া ফাবিয়ান বলেন, “আমরা প্রিসিশান ফার্মেন্টেশন নামের যে প্রযুক্তি ব্যবহার করছি, তা কাজ, গঠন ও মাত্রার নিরিখে ডিমের মতো হুবহু প্রোটিন উৎপাদন সম্ভব করছে। অনেকে বলছে, সেটা ডিমের তুলনায় আরও ভালো।”
কিন্তু এমন ভেগান ডিমের স্বাদ আসলে কেমন?
বার্লিনের নেগস্ট নামের স্টার্টআপ ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি ইভেন্টে মূল ও ভিগান ডিম চেখে দেখার সুযোগ দিয়েছে। ৮৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারীই নাকি দুইয়ের মধ্যে ফারাক বুঝতে পারেন নি। কিন্তু সেই ডিম মাফিন বা অন্য বেক করা পণ্যের মধ্যে ছিল। ডিম ভাজা বা পোচের ক্ষেত্রে এমন তুলনা এখনও করা হয়নি। সূত্র: ডয়েচে ভেলে C
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।