জুমবাংলা ডেস্ক: মনে প্রশান্তির জন্য অনেকে পর্যটকের কাছেই প্রিয় কক্সবাজার। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত ছাড়াও এখানে রয়েছে বিনোদনের জন্য অফুরন্ত ব্যবস্থা। বিশেষ করে টেকনাফের বাহারছড়া উপকূল ঘেঁষে, পাহাড় এবং সমুদ্রের কোলে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা শতবর্ষী গর্জন বাগান দেখতে বর্তমানে ছুটে আসতে শুরু করেছেন প্রচুর সংখ্যক পর্যটক।
কক্সবাজার শহর থেকে মেরিনড্রাইভ সড়ক দিয়ে ৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শতবর্ষী গর্জন বাগান। সারি সারি গর্জন গাছ। যার এক একটির বয়স শত বছর পেরিয়ে গেছে। এই বাগানে ৫ হাজার ৭৭২টিরও বেশি গর্জন গাছ রয়েছে। গাছগুলো লম্বায় ৭০ থেকে ৮০ ফুট এবং বেড় ১০ থেকে ১২ ফুট বলে জানান বাগানটির দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা হাবিব হোছাইন।
পর্যটকদের বিনোদনের মাত্রা বাড়াতে ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল ৭২ হেক্টর জায়গায় নিরাপত্তা এবং পর্যটকদের বিশ্রাম ও বিনোদনের ব্যবস্থা রেখে এই বাগানকে ‘প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্র’ হিসেবে উদ্বোধন করা হয়। টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নে শিলখালী রেইঞ্জের অধীনে জাহাজপুরা এলাকায় অবস্থিত বলে এই বাগানকে ‘জাহাজপুরা গর্জন বাগান’ বলে পরিচিত লাভ করে। অনেকে আবার ‘জাহাজপুরা ইকো পার্ক’ বলেও অবিহিত করেন এই বাগানকে।
হাবিব হোছাইন বলেন, ‘এই গাছগুলো দেখার জন্য দূর দূরান্ত থেকে পর্যটকরা আসেন। এমনকি বিদেশ থেকেও এই বাগান পরিদর্শন করতে লোকজন আসেন। তারা আনন্দ ভ্রমণসহ পিকনিক করতে পাহাড়ি সৌন্দর্যের কারণে এদিকে চলে আসেন। এত বড় লম্বা এবং সোজা গাছগুলো দেখলে অবাক হয়ে যান তারা। তাদের অনেকেই বলেন, এর আগে কখনো এত বড় লম্বা গাছ দেখেননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই বাগান রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছি আমরা। গর্জন গাছগুলো যেন কেউ চুরি করে কেটে নিতে না পারেন তাই অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও পাহারা দিয়ে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে বন বিভাগ সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে।’
সবুজে মোড়া দণ্ডীয়মান এই বাগানে মনোরম পরিবেশ বিরাজ করছে। স্থানীয়রা বলছেন, এই গর্জন বন রক্ষা করতে গিয়ে অনেকে দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হয়েছেন। এমনকি জীবনও উৎসর্গ করেছেন। এখানে পর্যটন স্পট করায় গর্জন গাছগুলো রক্ষা হবে। এছাড়া স্থানীয় লোকজনের জন্য তৈরী হবে কাজের ক্ষেত্র। এতে করে এলাকায় দারিদ্রতা কমবে এবং দূর হবে বেকারত্ব।
গাজীপুর থেকে আসা পর্যটক মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘এমন বড় সোজা এবং লম্বা গাছের বাগানে সজ্জিত মনোমুগ্ধকর পরিবেশ আগে দেখা হয়নি। কক্সবাজার এসে সমুদ্র দেখতে দেখতে অনেকটা বিরক্ত। তবে এই গর্জন বাগানের সুন্দর পরিবেশ আমার ভ্রমণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। প্রকৃতির এমন সৌন্দর্য উপভোগ করে মনটা ভরে উঠেছে।’
কুমিল্লা মুরাদনগর থেকে সপরিবারে বেড়াতে আসা শামশুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবছর কক্সবাজার আসা হলেও এবার শহর থেকে দূরে কোথাও ঘুরে বেড়ানোর জায়গা খুঁজছিলাম। তখন অনেক পরিচিত লোক বলেছিলেন জাহাজপুরা গর্জন বাগান খুব সুন্দর একটি জায়গা। এখানে এসে তাদের কথার সত্যতা পেলাম। মনটা একদম সবুজের মধ্যে হারিয়ে গেলো। ছেলে-মেয়েরাও খুশি।’
চট্টগ্রামের রাউজান থেকে আসা মনসুর কাজী বলেন, ‘টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের শেষটা দেখতে যাওয়ার পথে পাহাড় ঘেঁষে বড় বড় গাছ দেখে থেমে গেলাম। গাছগুলো কাছ থেকে দেখার ইচ্ছে হলো। অবশেষে এখানে এসে দেখি কত সুন্দর পর্যটন স্পট। এটি আরো অনেক সুন্দর করা যাবে। যদি সংশ্লিষ্টরা এই বাগানকে বড় পরিসরে পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলেন তবে শহর থেকে পর্যটকরা এই সবুজ পরিবেশে ছুটে আসবে।’
সচেতন মহল বলছে, কক্সবাজারের ইকোট্যুরিজম বিকাশে নতুন মাত্রা যোগ করেছে এই গর্জন বাগান। নতুন এই বিনোদন কেন্দ্রের ফলে, পর্যটন খাতে অর্থ বাড়ার পাশাপাশি রক্ষা পাবে বন। এছাড়া ওই বনের উপর নির্ভরশীল লোকজন পাবে কাজের ক্ষেত্র।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মর্কতা মো. সরওয়ার আলম বলেন, ‘টেকনাফে শিলখালী রেইঞ্জের অধীনে জাহাজপুরায় যে গর্জন বাগান আছে এটি একটি ঐতিহ্যবাহী বাগান। বাগানটির প্রায় শতবর্ষ। এই বাগানকে ঘিরে এখানে একটা ছোট পার্ক নিয়ে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। দেশি বিদেশি লোকজন মাঝেমধ্যে ওই বাগানে বেড়াতে যান। এই বাগানকে ঘিরে একটা পর্যটন পরিকল্পনা আমাদের আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই গর্জন বাগানের ইতিহাস এবং গাছগুলো সম্পর্কে মানুষকে আরো বেশি কিছু জানাতে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। পর্যটকরা যাতে এখানে যেতে পারে পাহাড়ে হাঁটতে পারে সে বিষয়ে আমরা সরকারিভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছি। সরকার এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।