বয়স বাড়লে উচ্চতা বাড়বে। পেশি ও হাড় হবে সুগঠিত—এটাই চিরায়ত নিয়ম। কিন্তু পাশার দান উল্টে যায় যৌবন পেরিয়ে গেলে। ৮০ বা ৯০ বছর বয়সী মানুষদের দিকে খেয়াল করলে দেখবেন, যৌবনের সুঠাম দেহ জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে প্রায় অদৃশ্য হয়ে গেছে। সেখানে জায়গা করে নিয়েছে কোঁচকানো চামড়ার দুর্বল এক মানুষ।
উচ্চতাও কমে গেছে অনেকটা। মনে হবে যেন বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। একটু যেন দেহটা সংকুচিত হয়ে এসেছে। শুধু যে দেখতে এমন লাগে তা নয়, বাস্তবিক অর্থেই মানুষের দেহে এরকম পরিবর্তন ঘটে। প্রশ্ন হলো, কী সেই পরিবর্তন যার কারণে অশীতিপর মানুষের দেহ ক্রমাগত চুপসে যায়?
একথায় উত্তরটা হলো শরীরবৃত্তীয়। একটা সময় পর শরীরের বৃদ্ধি থেমে যায়। বয়স যত গড়াতে থাকে তত ক্ষয়ে যায় শরীরের হাড়। কার্টিলেজ বা নরম হাড়গুলো ক্রমশ পাতলা হয়। পেশির কোষ শুকিয়ে চিমসে যায়। এর প্রভাব পড়ে পুরো দেহে। তবে এই ঘটনা সবার ক্ষেত্রে সমান হারে ঘটে না। ব্যক্তির জিন, খাদ্যাভাস, দেহের সার্বিক পুষ্টি এবং জীবনযাপনের পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে পরিবর্তন দেখা যায়।
এ বিষয়ে চমৎকার মন্তব্য করেছেন হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের এপিডেমিওলজিস্ট ম্যারিয়ান হান্নান। তিনি বলেন, ‘সময়ের হিসেবে আমাদের বয়স এক হলেও জৈবিকভাবে সবার বয়স আলাদা।’ এর মানে হলো, একদম একই দিনে জন্ম নেওয়া একাধিক ব্যক্তির বায়োলজিক্যাল বা জৈবিক বয়স ভিন্ন হতে পারে তাঁদের শারীরিক পুষ্টি, জিন, খাদ্যাভাস এবং জীবনযাপনের পদ্ধতির কারণে।
তাই বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সবার উচ্চতা বা শরীরের সংকোচনের পরিমাণ সমান হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এজিংয়ের একটি জরিপে দেখা যায়, ৩০ বছরের পর থেকে মানুষের উচ্চতা কমতে শুরু করে। ৩৫ বছর ধরে ২ হাজার ৮৪ জন নারী-পুরুষের ওপর চালানো জরিপ থেকে এমন সিদ্ধান্তে এসেছে তারা।
জরিপে দেখা যায়, যেসব পুরুষদের বয়স ১৭ থেকে ৯৪ এর মধ্যে, তাঁরা গড়ে ১.২ ইঞ্চি বা ৩ সেন্টিমিটার এবং নারীদের ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৭০ বছর বয়সীদের গড়ে ২ ইঞ্চি বা ৫ সেন্টিমিটার করে উচ্চতা কমেছে। বয়স ৮০ এর পরে পুরুষেরা গড়ে ২ ইঞ্চি এবং নারীরা ৩ ইঞ্চি উচ্চতা হারায়।
এর কারণটা আগেই বলেছি। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের হাড় ক্ষয়ে যাওয়া শুরু করে। হাড়ের গঠন শুরু হয় মায়ের পেটে থাকা অবস্থায়, মানে ৮ সপ্তাহের মাথায়। ২০-এর কোঠা পর্যন্ত হাড়ে গঠন ক্রমাগত পরিপক্ক হতে থাকে। এছাড়া হাড়ের সঙ্গে যুক্ত মাংশপেশির ওজন বেড়ে গেলে হাড়ের গঠন অনেক মজবুত ও ঘন হয়। মাংসপেশি বেড়ে গেলে এখান থেকে কোলাজেন ফাইবার তৈরি হয়। এটা প্রসারিত হয়ে ওই এলাকায় রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। যেটা হাড়ের বৃদ্ধিতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।