নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের ২১৭জন সদস্য। তাদের মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও রয়েছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তারা সবাই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন।
পুলিশ হেডকোয়ার্টাসের সর্বশেষ (২২ এপ্রিল) তথ্যানুযায়ী, করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ১১৭জন, গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) ২৬জন, নারায়ণগঞ্জে ১৬ জন, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) ২জন, নরসিংদীতে ৬জন, শেরপুরে ৩ জন, বিশেষ শাখার ৫জন এবং সিভিল স্টাফ ৪জন।
গত রবিবার পর্যন্ত ডিএমপিতে করোনায় আক্রান্ত ছিলেন ৩৪ জন। সোমবার আরও ৪৬ জন বেড়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮০ জনে। এরপর মঙ্গলবার তা দাঁড়ায় ১০১ জনে। বুধবার তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১১৭ জনে। সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা অন্য সদস্যদের আলাদা করা হয়েছে। এক হাজারের অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।
করোনায় প্রত্যেক পুলিশ সদস্যকে সুরক্ষিত রেখে দায়িত্ব পালন করতে ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
গতকাল তিনি একটি জনপ্রিয় জাতীয় দৈনিককে বলেছেন, করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার জন্য সাড়ে ছয়শ’ বেডের হাসপাতাল প্রস্তুত রয়েছে। পুলিশের নিজস্ব হাসপাতালে শয্যা আছে আড়াইশ’। আর সাড়ে চারশ’ বেডের দু’টি হাসপাতাল ভাড়া নেওয়া হয়েছে। ভাড়া করা ওই দুই হাসপাতাল হলো- মহানগর হাসপাতাল ও সিরাজুল ইসলাম হাসপাতাল। এছাড়া পিসিআর ল্যাব বসাচ্ছে পুলিশ। তখন করোনা পরীক্ষার জন্য অন্য কোথাও যেতে হবে না।
আইজিপি আরও জানান, পুলিশের জন্য ৫০টি আইসিইউ শয্যাও প্রস্তুত। এছাড়া ভাড়া করা দুই হাসপাতালের আইসিইউতে পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। যে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পুলিশ পিছপা হবে না।
ইতোমধ্যে সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয়ের জন্য বিভিন্ন ইউনিটকে পর্যাপ্ত আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। পুলিশ সদস্যদের জন্য ভিটামিন সি, ডি এবং জিংক ট্যাবলেট কেনা হচ্ছে। শিগগিরই তা বিভিন্ন ইউনিটে পাঠানো হবে।
ঢাকা মহানগর কমিশনার শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের যে সদস্যরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা সবাই বাইরে দায়িত্ব পালনে গিয়েছিলেন। অসাবধানতাবশত মানুষের কাছাকাছি চলে যাওয়ায় তাঁরা সংক্রমিত হয়েছেন বলে তাঁরা মনে করছেন।
দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ সদস্যদের আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষায় প্রথম থেকেই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। সেগুলো এখন আরও জোরদার করা হচ্ছে। সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে, এমন পুলিশ সদস্যদের আলাদা করে ফেলা হচ্ছে। তাঁদের জন্য ডেমরার অস্থায়ী পুলিশ লাইনসে ১০০টি বিছানার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজারবাগ মেহমানখানা এবং মিরপুর মেহমানখানায়ও কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
পেশাজীবীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত একক হিসাবে পুলিশেই আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এর পরই রয়েছেন চিকিৎসকরা। নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী যুক্ত করলে অবশ্য সে সংখ্যা সবার ওপরে। পুলিশে আক্রান্তদের অনেকেই তরুণ ও অবিবাহিত।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশজুড়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত ও লকডাউন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য পুলিশ সদস্যরা নিয়মিত টহল দিচ্ছেন। এ ছাড়া রাস্তায় জীবাণুনাশক ছিটানো, শ্রমজীবী মানুষকে সহায়তা করা, চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া এবং কোয়ারেন্টাইন থেকে পালানো ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার কাজ করছেন তাঁরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।