জুমবাংলা ডেস্ক : অর্থবছরের মাঝামাঝিতে এসে জনগণের কাঁধে নতুন করে ভ্যাটের বোঝা চাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে স্বস্তি দেওয়ার পরিবর্তে মানুষের জীবন যাত্রার ব্যয় আরও এক ধাপ বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ভ্যাটের হার বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় বাড়বে খুবই সামান্য অথচ এর বিপরীতে ভোগান্তি বাড়বে অনেক বেশি। তাই ভ্যাটের হার না বাড়িয়ে ভ্যাটদাতার সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা। কেননা এখন ভ্যাট বাড়ানোর মতো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলে উচ্চ মূল্যস্ফীতির জাঁতাকলে পিষ্ট হওয়া মানুষের ভোগান্তি আরও এক ধাপ বাড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এমনিতেই মানুষের মধ্যে নানা ধরনের অনিশ্চয়তা কাজ করছে। এর সঙ্গে রয়েছে নির্বাচন ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। শিল্প খাতও থমকে আছে। নতুন কোনো বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান হচ্ছে না। মানুষের ব্যয় বাড়লেও আয় বাড়েনি। ফলে ভ্যাট চাপানোর এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গেলে সব শ্রেণির মানুষের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সবচেয়ে বেশি চাপের মুখে পড়বেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। কেননা খুচরা বাজার থেকে যে কোনো ধরনের পণ্যের সঙ্গে ভ্যাট যুক্ত থাকে। এসব পণ্যের বিক্রেতা পর্যায়ে ভ্যাট বাড়ালে বিক্রেতারা তা ক্রেতাদের কাঁধে চাপাবেন। এর ফলে অতিরিক্ত ভ্যাটের চাপটা স্বয়ংক্রিভাবে পড়বে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একটি
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্ত মানতে অসময়ে ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে ৪৩ পণ্য ও সেবায়। এতে করে আরও চাপে পড়বে জীবনযাপন। ভ্যাট বাড়ানো হলে হোটেল রেস্টুরেন্ট, পর্যটন, পোশাক পরিচ্ছদ কেনাকাটায় খরচ বাড়বে ভোক্তাদের। উদ্যোক্তারা বলছেন, এসব ব্যবসায় এমনিতেই মন্দা পরিস্থিতি বিরাজমান। এর সঙ্গে অর্থবছরের এমন মাঝামাঝি ও অস্থির, অনিশ্চিত রাজনৈতিক সময়ে ভ্যাটের হার বাড়ানো হলে মানুষ কেনাকাটা কমিয়ে দেবে। ব্যবসাবাণিজ্যের চলমান মন্দা পরিস্থিতি আরও দীর্ঘায়িত হবে। রেস্টুরেন্ট ও পোশাক পরিচ্ছদ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, পৃথিবীর কোনো দেশেই এত বেশি পরিমাণে ভ্যাট নেই। বর্তমানে যেটা ৫ বা ৭ শতাংশ আছে সেটাই তো অনেক।
আবার সেটাকে বাড়িয়ে এক লাফে ১৫ শতাংশ করা হলে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। তারচেয়ে বরং দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৭০ শতাংশ মানুষ ভ্যাটের বাইরে রয়েছেন তাদেরকে ভ্যাটের আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া সরকারি উচিত হবে চুরি চামারি বন্ধ করা। যারা সম্পদ লুট করেছে তাদের থেকে সম্পদ উদ্ধার করে শাস্তির আওতায় আনা। এতে করে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। কিন্তু এখন হঠাৎ করে ভ্যাট বাড়ানো হলে মানুষ আর খেয়ে পরে বাঁচতে পারবে না। তাতে সমাজে চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি বাড়বে বলে মনে করেন তারা।
এ বিষয়ে রেস্টুরেন্ট ওনার অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, এমন একটা অস্থির সময়ে ভ্যাট বাড়ানো হলে রেস্তোরাঁ খাত আরও সংকটে পড়বে। আগের স্বৈরাচারের সরকারের আমলারা এখনো বসে আছে প্রশাসনে। তারা এ রকম জনস্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত নিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে বাধ্য করছে। এদিকে হাতেম আলী নামক এক রিকশাচালকের কাছে ভ্যাট বাড়ানো বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। বলা হয় ভ্যাট বাড়লে খাবারের দাম বাড়বে। আপনি যেখানে খোলা আকাশের নিচে ভাত খান সেখানেও দাম বাড়বে। এতে করে অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাতেম আলী। তিনি বলেন, কোনো সরকারই সাধারণের কথা ভাবেন না। আমরা মরলে কেউই দেখে না। এনবিআর সূত্র জানায়, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে সরকারের রাজস্ব আদায়ে ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য ঘাটতি আগেও ছিল। ফলে সরকারের অতিরিক্ত অর্থের দরকার। তাই বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট ও শুল্ক বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তের ওপর খরচের চাপ কিছুটা বাড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এই ভ্যাট বাড়ানোর ফলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে না। আইটেমগুলো ভোক্তা মূল্য সূচকের ঝুড়ির বাইরেই রয়েছে। তার এই বক্তব্যকে আকাশ কুসুম চিন্তা বলে মনে করে সংশ্লিষ্টরা।
সাধারণ ভোক্তারা বলছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত মানুষের জীবন ধারণ অসহনীয় করে তুলবে। এমনিতেই উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। তার ওপর অতিরিক্ত ভ্যাট আরোপ করা হলে খেয়ে পরে বেঁচে থাকার মতো অবস্থা থাকবে না বলে মনে করেন রাজধানীতে বসবাসকারী ব্যাংক কর্মকর্তা খায়রুল হোসেন রাজু।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।