আন্তর্জাতিক ডেস্ক : হাসপাতালের বেডে মোটামুটি সুস্থ অবস্থাতেই ছিলেন করোনা আক্রান্ত রোগী। অথচ সেই রোগীকে ‘মৃত’ জেনে তার পরিবারের লোকজন হাসপাতালের বাইরে বসে কান্নাকাটি করছিলেন। তাদের হাতে তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ইস্যু করা ওই রোগীর ডেথ সার্টিফিকেট! চাঞ্চল্যকর এমন ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের নদীয়ার কল্যাণীর নেতাজি সুভাষ স্যানেটোরিয়াম কোভিড হাসপাতালে।
দেশটির সংবাদমাধ্যম ‘সংবাদ প্রতিদিন’ এক প্রতিবেদনে জানায়, সুব্রত কর্মকার নামে ওই রোগীর ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করার পর হাসপাতালের পক্ষ থেকেই খবর দেওয়া হয়েছিল ডোমকে। খবর দেওয়ার প্রায় ঘণ্টাখানেক পর সৎকারের জন্য লোক এসে মৃতদেহ আনতে যান। মৃতদেহ আনতে গিয়ে তারা দেখেন হাসপাতালের ঘোষণা করা ‘মৃত’ রোগী তখন বেডের ওপর বসে আছে। তা দেখে স্বভাবতই কিছুটা বিরক্ত হয়ে পড়েন ডোম। বাইরে এসে তিনি তার বিরক্তি প্রকাশ করেন ওই রোগীর লোকজনের কাছে। মেজাজ হারিয়ে বলেন, ‘আপনাদের রোগী তো বেঁচে রয়েছে। অযথা আমাদের ডাকলেন।’
ডোম হাসপাতাল থেকে চলে গেলে রাগ আর বিস্ময়ে ওই রোগীর লোকজনের ক্ষোভ গিয়ে পড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ওপরে। এতে টনক নড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। পরিস্থিতি সামাল দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর লোকজনকে হাসপাতালের ওয়ার্ডে নিয়ে গিয়ে রোগীকে দেখানোর ব্যবস্থা করে। রোগীকে জীবিত দেখে প্রথমটায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে পরিবার। কিন্তু পরক্ষণেই একরাশ আতঙ্ক গ্রাস করে তাদের।
তারা আর রোগীকে এই হাসপাতালে রাখতে রাজি হননি। কারণ যে হাসপাতাল জীবিতকে মৃত বলে ঘোষণা করতে পারে, সেখানকার চিকিৎসা সেবা নিয়ে সত্যিই প্রশ্ন থেকে যায়। শুক্রবার রাতেই তারা রোগীকে বাড়ি নিয়ে আসেন। তবে আতঙ্কের কারণ শুধু সেটিই নয়; জীবিত রোগীকে মৃত দেখিয়ে যে ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছে, সেই ডেথ সার্টিফিকেটে ওই রোগীর জীবিত বাবাকেও মৃত বলে লেখা হয়েছে!
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ওই রোগীর নাম সুব্রত কর্মকার। বয়স ২৬ বছর। বাড়ি ধানতলা থানার হিজুলির ঘোষের মোড় এলাকায়। জ্বর ও বুকে ব্যথা নিয়ে সুব্রতকে ১০ মে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ১২ মে রাতে তাকে কল্যাণীর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন পরিবারের সদস্যরা।
সুব্রতর ভাই সঞ্জীব কর্মকার জানান, ১৪ মে সকালে ওই হাসপাতাল থেকে এক নার্স তাদের ফোন করে জানান, দাদা মারা গেছে। শুনেই দ্রুত গাড়ি নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যান। কিন্তু তার ভাইয়ের দেখা মেলেনি। সন্ধ্যার দিকে সুব্রতর ডেথ সার্টিফিকেট পরিবারের হাতে দেওয়া হয়। তার কিছুক্ষণ পরেই আসে ডোম। ডোম দেখে এসে সুব্রত বেঁচে আছে।
সঞ্জীবের কথায়, ‘একজন জীবিত রোগীকে মৃত দেখিয়ে আমাদের যেভাবে হয়রানি করা হয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ডেথ সার্টিফিকেটে আমার জীবিত বাবাকেও মৃত বলে লেখা হয়েছে। যদিও আতঙ্কে আমরা আর দাদাকে ওই হাসপাতালে রাখার সাহস পাইনি। এই ভেবে, যদি ওরা কোনও ওষুধ খাইয়ে বা ইঞ্জেকশন দিয়ে দাদাকে মেরে ফেলে। তাই আমরা দাদাকে বাড়িতে নিয়ে আসি।’
সুব্রতর বাবা সত্যরঞ্জন কর্মকার বলছেন, ‘ছেলে মারা যাওয়ার খবর পেয়ে আমরা সকলে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জন্য আমাদের চরম ভোগান্তি হলো।’
কীভাবে এমন মারাত্মক ভুল হলো- সে বিষয়ে কল্যাণীর মহকুমাশাসক হীরক মণ্ডল জানান, ‘বিষয়টা আমি শুনেছি। আমি জেলার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে বলেছি, বিষয়টা আমাকে বিস্তারিত জানাতে।’
এ বিষয়ে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় ভুল স্বীকার করে তার কারণ ব্যখ্যা করেন। বলেন, ‘হ্যাঁ, একটা ভুল হয়েছে। তার কারণ একই নামে দুজন রোগী প্রায় একই সময়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। যার ফলে এই ঘটনা ঘটেছে। এটা একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা।’ তবে এটা হওয়া উচিত ছিল না বলেও জানান তিনি।
যদিও প্রশ্ন উঠছে, জীবিত সুব্রত কর্মকারের বাবার নাম ও ঠিকানাও কি অন্য লোকের সঙ্গে মিল ছিল? তবে, সেই উত্তর মেলেনি বলে জানায় ওই সংবাদমাধ্যমটি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।