Close Menu
Bangla news
  • Home
  • Bangladesh
  • Business
  • International
  • Entertainment
  • Sports
  • বাংলা
Facebook X (Twitter) Instagram
Bangla news
  • Home
  • Bangladesh
  • Business
  • International
  • Entertainment
  • Sports
  • বাংলা
Bangla news
Home জুমার দিনের বিশেষ দোয়ার ফজিলত ও গুরুত্ব
জাতীয় ডেস্ক
ইসলাম ও জীবন

জুমার দিনের বিশেষ দোয়ার ফজিলত ও গুরুত্ব

জাতীয় ডেস্কMd EliasJuly 26, 202516 Mins Read
Advertisement

ধীরে, গভীরভাবে মসজিদের মিহরাবের দিকে তাকিয়ে আছেন ইমাম সাহেব। জুমার খুতবা শেষ হওয়ার ঠিক আগের মুহূর্ত। শুক্রবারের দুপুর। হাজার হাজার মুসল্লির সমাবেশে এক অপার্থিব নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে। শুধু শোনা যায় কারো কারো মৃদু দরুদ পাঠের আওয়াজ, কারো নিঃশ্বাস। এই নিস্তব্ধতার ভেতরেই লুকিয়ে আছে সপ্তাহের সবচেয়ে মহিমান্বিত, সবচেয়ে আশার মুহূর্তগুলোর একটি – জুমার দিনের বিশেষ দোয়ার সময়। এটি কোনো সাধারণ সময় নয়। হাদিস শরীফে এসেছে, এই মুহূর্তে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের ডাকে সাড়া দেন, দোয়া কবুল করেন। কিন্তু কখন আসে এই মহামূল্যবান সময়? কী এর ফজিলত? কেনই বা এই মুহূর্তকে এত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে? আজ আমরা গভীরভাবে জানবো জুমার দিনের বিশেষ দোয়ার ফজিলত ও গুরুত্ব, হাদিস ও কোরআনের আলোকে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এর প্রয়োগ নিয়ে।

জুমার দিনের বিশেষ দোয়ার ফজিলত ও গুরুত্ব

  • জুমার দিনের বিশেষ দোয়ার ফজিলত ও গুরুত্ব: কেন এই সময় এত অনন্য?
  • জুমার দিনের বিশেষ দোয়ার সময় কখন? হাদিসের আলোকে স্পষ্টীকরণ
  • জুমার দিনের বিশেষ দোয়ার সময় কোন দোয়াগুলো পড়ব? কীভাবে করব?
  • জুমার দিনের অন্যান্য আমল ও ফজিলত: বিশেষ দোয়ার প্রস্তুতি
  • জুমার দিনের বিশেষ দোয়ার ফজিলত নিয়ে সাধারণ ভুল ধারণা ও সতর্কতা
  • জুমার দিনের বিশেষ দোয়া: ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও প্রভাব

জুমার দিনের বিশেষ দোয়ার ফজিলত ও গুরুত্ব: কেন এই সময় এত অনন্য?

জুমার দিন মুসলিম উম্মাহর সাপ্তাহিক ঈদের দিন। এই দিনের মর্যাদা ও ফজিলত অন্য সব দিন থেকে আলাদা। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা সরাসরি এই দিনের নামে একটি সূরা (সূরা আল-জুমুআ) নাজিল করেছেন, যা নিজেই এর গুরুত্বের সর্বোচ্চ প্রমাণ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনেই আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছিল, এই দিনেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল এবং এই দিনেই তাঁকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছিল।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৫৪)

কিন্তু এই মহিমান্বিত দিনের মধ্যেও আছে আরও একটি অতীব মূল্যবান সময় – যে সময়ে দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারে রাসূল (সা.)-এর সুস্পষ্ট বাণী রয়েছে। এটি হলো ইমামের মিম্বরে বসা থেকে সালাম ফিরানো পর্যন্ত সময়কাল, বিশেষত খুতবা শেষ হওয়ার পরপরই আসর নামাজের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যকার বিশেষ মুহূর্ত। এই সময়ের ফজিলত নিয়ে অসংখ্য সহীহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে:

  • আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
    “জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যে সময়টায় কোনো মুসলিম বান্দা আল্লাহর নিকট ভালো কিছু প্রার্থনা করলে, আল্লাহ তাকে তা দান করেন।”
    তিনি হাতের আঙ্গুল দিয়ে ইঙ্গিত করে সময়টির সংক্ষিপ্ততার কথা বোঝালেন। (সহীহ বুখারি, হাদীস নং ৫২৯৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৫২)
  • অন্য বর্ণনায় আছে:
    “এ সময়টি জুমার দিনের শেষ অংশে আসরের পর থেকে মাগরিবের আগ পর্যন্ত।” (সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ৪৯১, হাসান)

এই বিশেষ সময়ের অনন্য ফজিলতের কারণ কী?

  1. আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের মুহূর্ত: আল্লাহ তায়ালা এই সময়কে বিশেষভাবে দোয়া কবুলের জন্য মনোনীত করেছেন। এটি তাঁর অসীম রহমত ও করুণার প্রকাশ।
  2. উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক: জুমার নামাজে মুসলিম উম্মাহ এক স্থানে একত্রিত হয়। এই সম্মিলিত ইবাদত ও দোয়ার মুহূর্তে আল্লাহর দয়া বিশেষভাবে বর্ষিত হয়।
  3. সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত: জুমার দিন নিজেই ফজিলতপূর্ণ। তার ভেতর এই সময়টি হল ‘সময়ের মুক্তা’ বা ‘দোয়ার সোনালি সুযোগ’।
  4. রহমতের দরজা উন্মুক্ত হওয়া: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, জুমার দিন জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়। এই বিশেষ সময়টি সেই উন্মুক্ত দরজার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সর্বোত্তম সুযোগ।

জুমার দিনের বিশেষ দোয়ার সময় কখন? হাদিসের আলোকে স্পষ্টীকরণ

‘জুমার দিনের বিশেষ দোয়ার সময়’ কখন – এ নিয়ে উলামায়ে কেরামের মধ্যে কিছু মতভেদ আছে, যা মূলত বিভিন্ন সহীহ হাদিসের ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনার কারণে। এই মতভেদগুলো জানা জরুরি, যাতে আমরা সম্ভাব্য সব সময়েই দোয়ার প্রতি মনোনিবেশ করতে পারি:

  1. ইমামের মিম্বরে বসা থেকে সালাম ফিরানো পর্যন্ত: এটি সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ও ব্যাপকভাবে গৃহীত মত। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন:
    “জুমার দিনে দোয়া কবুলের সময়টি হল ইমাম (খুতবার জন্য) মিম্বরে বসা থেকে সালাত (জুমার নামাজ) শেষ করা পর্যন্ত।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৫৩)
    এই মতের পক্ষে শক্তিশালী দলিল থাকায় বেশিরভাগ আলেম (ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমদ প্রমুখ) এই সময়টাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। এটিই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ সময় হিসেবে বিবেচিত। এই পুরো সময়টাই দোয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে ইমাম খুতবা দিচ্ছেন এমন সময় চুপচাপ বসে থাকা এবং খুতবা শেষে নামাজ শুরু হওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

  2. আসর থেকে মাগরিবের আগ পর্যন্ত সময়: জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এই সময়ের উল্লেখ আছে (সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ৪৯১)। কিছু আলেম (ইমাম আবু হানিফার মতে কেউ কেউ) এই মতটিকে প্রাধান্য দেন। এটি মূলত জুমার নামাজ শেষ হওয়ার পরের সময়।

সিদ্ধান্ত ও প্রায়োগিক দিক:
বুদ্ধিমানের কাজ হল উভয় সময়ের সম্ভাবনাকে গুরুত্ব দেওয়া:

  • প্রধান সময়: ইমাম মিম্বরে বসা (খুতবা শুরু) থেকে জুমার নামাজের সালাম ফিরানো পর্যন্ত সময়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এই সময়ে:
    • খুতবা মনোযোগ দিয়ে শুনুন (এটিও ইবাদত)।
    • ইমামের দু’আর সময় ‘আমিন’ বলুন।
    • খুতবা শেষে নামাজের প্রস্তুতি নেওয়ার আগে এবং নামাজের রাকাতগুলোর মধ্যে সিজদা বা রুকুর পর নির্জন মুহূর্তে নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করুন।
  • সম্ভাব্য সময়: জুমার নামাজ শেষ হওয়ার পর, বিশেষত আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিবের আগ পর্যন্ত সময়টাও দোয়ার জন্য ব্যবহার করুন। এই সময়টাও ফজিলতপূর্ণ হতে পারে।

কার্যকরী পরামর্শ:

  • জুমার খুতবার সময়ে মোবাইল ফোন বন্ধ রাখুন বা সাইলেন্টে রাখুন। সব মনোযোগ খুতবা ও দোয়ার দিকে কেন্দ্রীভূত করুন।
  • জুমার নামাজের পর কিছু সময় মসজিদে বসে দোয়া, তাসবীহ, ইস্তেগফারে কাটান।
  • সম্ভব হলে আসরের নামাজ মসজিদে আদায় করুন এবং তারপর কিছুক্ষণ দোয়ায় মশগুল থাকুন।

জুমার দিনের বিশেষ দোয়ার সময় কোন দোয়াগুলো পড়ব? কীভাবে করব?

এই মহামূল্যবান সময়ে দোয়া কবুল হওয়ার আশা করা যায়। তবে শুধু সময়ের অপেক্ষায় বসে থাকলেই হবে না, দোয়াকে সঠিকভাবে আদায় করতে হবে। রাসূল (সা.)-এর সুন্নত মোতাবেক দোয়া করার কিছু মূলনীতি:

  1. খালেস নিয়ত ও একাগ্রতা (ইখলাস ও খুশু-খুজু): দোয়ার সময় মন-প্রাণ দিয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসুন। দুনিয়াবি চিন্তা ঝেড়ে ফেলে একাগ্রচিত্তে দোয়া করুন। আল্লাহ বলেন, “তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের পালনকর্তাকে ডাক…” (সূরা আল-আরাফ, আয়াত ৫৫)।

  2. সর্বোত্তম সময় ও অবস্থার সদ্ব্যবহার: ইতোমধ্যে আলোচিত জুমার দিনের বিশেষ দোয়ার সময় তো আছেই, এর সাথে দোয়ার জন্য উত্তম অবস্থাগুলো হলো:

    • সিজদার অবস্থা (রাসূল (সা.) বলেছেন, বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয় সিজদার অবস্থায় – সহীহ মুসলিম)।
    • বৃষ্টি পড়ার সময়।
    • আজানের সময়।
    • যুদ্ধের ময়দানে সৈন্যদের মুখোমুখি হওয়ার সময়।
  3. দোয়া শুরু ও শেষ করা দরুদ শরীফ দিয়ে: রাসূল (সা.) বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ দোয়া করবে, সে যেন প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করে, এরপর নবী (সা.) এর উপর দরুদ পাঠ করে, তারপর যা ইচ্ছা দোয়া করে।” (সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪৭৭, হাসান) দোয়া শেষেও দরুদ পড়া সুন্নত।

  4. দোয়ায় বিশ্বাস ও আল্লাহর রহমতের প্রতি আস্থা: দোয়া করতে হবে এই দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে যে, আল্লাহ অবশ্যই শুনছেন এবং উত্তম সময়ে, উত্তমভাবে তিনি কবুল করবেন। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, “আমি বান্দার ধারণা অনুযায়ী থাকি।” (সহীহ বুখারি, হাদীস নং ৭৪০৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৭৫)

  5. নিজের জন্য, অন্য মুমিনদের জন্য দোয়া করা: রাসূল (সা.) নিজে যেমন উম্মতের জন্য ব্যাপকভাবে দোয়া করতেন, তেমনি তিনি অন্যদের জন্য দোয়া করতে উৎসাহিত করেছেন। জুমার বিশেষ সময়ে নিজের পাশাপাশি:

    • পিতা-মাতার জন্য
    • সন্তান-সন্ততির জন্য
    • আত্মীয়-স্বজনের জন্য
    • শিক্ষক-মুরব্বিদের জন্য
    • দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য
    • সমগ্র মুসলিম উম্মাহর শান্তি, ঐক্য ও মঙ্গলের জন্য দোয়া করুন। এতে দোয়ার বরকত বৃদ্ধি পায়।
  6. কোরআন-সুন্নাহ থেকে শিখে নেওয়া দোয়াগুলো প্রাধান্য দেওয়া: কিছু মহিমান্বিত দোয়া:
    • সাইয়িদুল ইস্তেগফার (ক্ষমার শ্রেষ্ঠ দোয়া):
      “আল্লাহুম্মা আন্তা রাব্বি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা, খালাকতানি ওয়া আনা আবদুকা, ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাতাতু, আউযু বিকা মিন শাররি মা সানা’তু, আবুউ লাকা বি নি’মাতিকা আলাইয়া, ওয়া আবুউ লাকা বিযাম্বি, ফাগফিরলি, ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আন্তা।”
      (হে আল্লাহ! তুমিই আমার রব, তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ আর আমি তোমার বান্দা, আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী তোমার সঙ্গে কৃত ওয়াদা ও অঙ্গীকারের উপর প্রতিষ্ঠিত আছি। আমি আমার কৃত পাপের অনিষ্ট থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তোমার আমার উপর যে নিয়ামত রয়েছে, আমি তা স্বীকার করছি এবং আমার পাপও স্বীকার করছি। অতএব, তুমি আমাকে ক্ষমা কর। নিশ্চয়ই তুমি ছাড়া কেউ পাপ ক্ষমা করতে পারে না।) – (সহীহ বুখারি, হাদীস নং ৬৩০৬)
    • দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের দোয়া (সর্বাধিক ব্যবহৃত):
      “রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া কিনা আজাবান্নার।”
      (হে আমাদের রব! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর, আখেরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাদেরকে দোজখের শাস্তি থেকে রক্ষা কর।) – (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২০১)
    • কঠিন বিপদ-আপদ থেকে মুক্তির দোয়া:
      “লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বালিমিন।”
      (তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তুমি পবিত্র, নিশ্চয়ই আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছি।) – (সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত ৮৭ – হযরত ইউনুস (আ.)-এর দোয়া)
    • দুশ্চিন্তা, দুঃখ-কষ্ট দূর করার দোয়া:
      “আল্লাহুম্মা ইন্নি আবদুকা, ইবনু আবদিকা, ইবনু আমাতিকা, নাসিয়াতি বিয়াদিকা মাদিন ফিয়াল হুক্কুকি মা ইস্তাতাতু। আউযু বিকা মিন শাররি মা সানা’তু, আবুউ লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা, ওয়া আবুউ বিযাম্বি, ফাগফিরলি ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আন্তা।”
      (হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার বান্দা, তোমার বান্দার সন্তান, তোমার বান্দীর সন্তান। আমার চুল তোমার হাতের মুঠোয়, তোমার বিধান আমার জন্য চালু, তোমার ফায়সালা আমার জন্য ন্যায়সংগত। আমি তোমার কাছে ঐ নামে প্রার্থনা করছি, যা তুমি তোমার জন্য রেখেছ, কিংবা তুমি তোমার কোনো সৃষ্টিকে শিক্ষা দিয়েছ, অথবা তা তোমার গায়েবের জ্ঞানে আছে, কিংবা তুমি তোমার কিতাবে নাযিল করেছ, যেন তুমি কুরআনকে আমার অন্তরের শীতলতা, আমার বক্ষের আলো, আমার দুঃখ-দুর্দশা ও চিন্তা-ভাবনার দূরত্ব করো।) – এটি একটি বিস্তৃত দোয়া, এর পুরোটা শিখে নেওয়া ভালো (মুসনাদে আহমাদ)।
    • রিজিক, সুস্বাস্থ্য ও উত্তম আখলাকের জন্য দোয়া: নিজের ভাষায়, মনের গভীর থেকে চাওয়া। যেমন: “হে আল্লাহ! আমাকে হালাল রিজিক দান করুন, সুস্বাস্থ্য দান করুন, আমার চরিত্রকে সুন্দর করুন, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন এবং আমাকে আপনার নেক বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন।”

মনে রাখবেন: নিজের ভাষায়, সহজ-সরলভাবে, মনের গভীর আকুতি নিয়ে দোয়া করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ আপনার মনের ভাষা বোঝেন। দোয়ার সময় হাত তুলে বিনয়ের সাথে প্রার্থনা করুন (সুন্নত পদ্ধতি)।

জুমার দিনের অন্যান্য আমল ও ফজিলত: বিশেষ দোয়ার প্রস্তুতি

জুমার দিনের বিশেষ দোয়ার সময় এর ফজিলত পূর্ণতা পায় যখন পুরো জুমার দিনটাকেই ইবাদত-বন্দেগীর জন্য প্রস্তুত করা হয়। জুমার দিনের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল, যা দোয়া কবুলের পথ সুগম করে:

  1. গোসল করা (গোসলুল জুমুআ): রাসূল (সা.) জুমার দিন গোসল করাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। এটা ওয়াজিব বা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। (সহীহ বুখারি, হাদীস নং ৮৭৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৪৫)। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইবাদতের পূর্বশর্ত।

  2. সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করা: জুমার নামাজের জন্য সুন্দর ও পরিষ্কার পোশাক পরা মুস্তাহাব। এটি দিনের মর্যাদা ও সম্মানের প্রকাশ। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৫৪)

  3. তাজা মিসওয়াক করা: মুখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সুন্নত আদায়ের জন্য। (সহীহ বুখারি, হাদীস নং ৮৮৭)

  4. সূরা কাহফ তিলাওয়াত করা: জুমার দিন বা জুমার রাতে (বৃহস্পতিবার সূর্যাস্তের পর থেকে শুক্রবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত) সূরা কাহফ তিলাওয়াতের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। এটি নূর হবে কিয়ামতের দিন, কবিরা গুনাহ থেকে মুক্তি দেবে এবং দাজ্জালের ফিতনা থেকে হেফাজত করবে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮০৯; আল-মু’জামুল আওসাত, হাদীস নং ৬৪৭৬)

  5. অত্যধিক দরুদ শরীফ পাঠ করা: রাসূল (সা.) বলেছেন, “তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হল জুমার দিন। সুতরাং এই দিনে তোমরা আমার উপর অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ কর। কেননা তোমাদের পাঠ করা দরুদ আমার নিকট পেশ করা হয়।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১০৪৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১০৮৫)।

  6. জুমার খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা: খুতবা চলাকালীন কথা বলা, এমনকি কাউকে চুপ করানোর জন্যও কথা বলা নিষেধ। (সহীহ বুখারি, হাদীস নং ৮৯৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৫৭)। মনোযোগ সহকারে খুতবা শোনাও ইবাদত।

  7. জুমার নামাজে প্রথম সারিতে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করা: আগে এসে প্রথম সারিতে বসার চেষ্টা করা। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ৫০০)।

  8. জুমার পর বা আগে নফল নামাজ আদায় করা: জুমার নামাজের পর মসজিদে কিছু নফল নামাজ (২ রাকাত, ৪ রাকাত) আদায় করা সুন্নত। (সহীহ বুখারি, হাদীস নং ৮৮৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৮১)।

এই আমলগুলোর সাথে বিশেষ দোয়ার সম্পর্ক:
এই আমলগুলো জুমার দিনের পবিত্রতা ও গুরুত্বকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। এগুলো আমাদের অন্তরকে আল্লাহর দিকে ঝুঁকিয়ে দেয়, ইবাদতের জন্য প্রস্তুত করে। যখন অন্তর নরম হয়, খুশু-খুজু আসে, তখন দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। গোসল, পোশাক, মিসওয়াক ইত্যাদি শারীরিক ও বাহ্যিক পবিত্রতা আনার পাশাপাশি সূরা কাহফ তিলাওয়াত, দরুদ পাঠ ও খুতবা শোনার মাধ্যমে আমরা আধ্যাত্মিক পবিত্রতা ও জ্ঞানের খোরাক অর্জন করি। এই সম্মিলিত প্রস্তুতি আমাদেরকে জুমার দিনের বিশেষ দোয়ার সময়ে আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর জন্য অধিক যোগ্য করে তোলে।

জুমার দিনের বিশেষ দোয়ার ফজিলত নিয়ে সাধারণ ভুল ধারণা ও সতর্কতা

যেকোনো ফজিলতপূর্ণ বিষয়ের মতোই জুমার দিনের বিশেষ দোয়ার ফজিলত নিয়েও কিছু ভুল ধারণা ও বাড়াবাড়ি সমাজে প্রচলিত আছে। সতর্ক থাকা জরুরি:

  1. নির্দিষ্ট দোয়া/কালামের জিকির না করলে দোয়া কবুল হয় না?
    সত্য: না, এটা ভুল ধারণা। নির্দিষ্ট কোনো দোয়া বা জিকির পাঠ করা বাধ্যতামূলক নয়। নিজের ভাষায়, মনের গভীর থেকে, বিনয়ের সাথে আল্লাহর কাছে চাওয়াই মূল কথা। কোরআন-হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলো শ্রেষ্ঠ ও পরিপূর্ণ, সেগুলো শিখে নেওয়া উত্তম, কিন্তু সেগুলো না পড়লেই দোয়া কবুল হবে না – এমন নয়। আল্লাহ বান্দার আকুতি বুঝেন।

  2. শুধুমাত্র এক বিশেষ মুহূর্তেই (যেমন আজানের সময়) দোয়া কবুল হয়?
    সত্য: হাদিসে সময়টির সংক্ষিপ্ততা (হাতের আঙ্গুল দিয়ে ইঙ্গিত) এবং ভিন্ন বর্ণনা (ইমামের বসা থেকে সালাম, অথবা আসরের পর) উল্লেখ আছে। এর অর্থ এই নয় যে শুধুমাত্র ১ বা ২ মিনিটের জন্য দোয়া কবুল হয়। বরং উল্লিখিত সময়গুলো (বিশেষত ইমামের বসা থেকে সালাম পর্যন্ত সময়কাল) দোয়ার জন্য বিশেষভাবে মনোনীত। এই পুরো সময়টাই গুরুত্বপূর্ণ, শুধু কোনো একটি সংকীর্ণ মুহূর্ত নয়। সব সময়েই দোয়া কবুল হতে পারে, তবে এই সময়ে কবুল হওয়ার বিশেষ আশা করা যায়।

  3. জুমার দিনে দোয়া করলেই সব চাওয়া পূরণ হয়ে যাবে?
    সত্য: এটা একটি বাড়াবাড়ি ও ভুল ধারণা। দোয়া কবুল হওয়ার শর্ত আছে। হালাল উপার্জন, হালাল খাদ্য, দোয়ায় ইখলাস, আল্লাহর উপর দৃঢ় আস্থা, ধৈর্য ধারণ করা এবং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা জরুরি। আল্লাহ বান্দার কল্যাণেই অনেক সময় দোয়া কবুলে বিলম্ব করেন বা অন্য রূপে দান করেন। রাসূল (সা.) বলেছেন, “মুমিন বান্দার দোয়া সর্বদা কবুল হয়। হয় দুনিয়াতে তার চাওয়া মেটানো হয়, নয়ত তার জন্য আখিরাতে সঞ্চিত রাখা হয়, নয়ত তার থেকে অনুরূপ মন্দ দূর করা হয়।” (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১০৭৪৯, সহীহ)

  4. জুমার দিনে কোনো নির্দিষ্ট স্থানে (বিশেষ মসজিদ/মাজার) দোয়া করলে বেশি কবুল হয়?
    সত্য: না। দোয়া কবুল হওয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট স্থানের প্রয়োজন নেই। সবচেয়ে উত্তম স্থান হল মসজিদ, যেখানে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করা হয়। তবে কোনো বিশেষ মসজিদ বা মাজারে গিয়ে দোয়া করলেই তা বেশি কবুল হবে – এমন বিশ্বাস শিরক ও বিদআতের দিকে নিয়ে যেতে পারে। দোয়ার জন্য আল্লাহর দরবারই যথেষ্ট। তিনি সর্বত্র বিদ্যমান ও সর্বশ্রোতা।

  5. জুমার দিনে বিশেষ কিছু কাজ করলে (যেমন বিশেষ নামাজ, বিশেষ দান) দোয়া কবুলের গ্যারান্টি?
    সত্য: কোনো আমলই দোয়া কবুলের ‘গ্যারান্টি’ নয়। আমল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। ভালো আমল দোয়া কবুলের সম্ভাবনা বাড়ায়, কারণ তা বান্দাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে। তবে সবকিছুই আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আমাদের কর্তব্য হল সঠিক নিয়তে, সঠিক পদ্ধতিতে আমল করা এবং দোয়া করা। ফলাফল আল্লাহর হাতে।

সতর্কতা:

  • কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর দাবি যে তারা জুমার দিনের ‘বিশেষ মুহূর্ত’ জানেন এবং শুধু তাদের কাছে গেলে বা তাদের নির্দেশিত পদ্ধতিতে দোয়া করলে কবুল হবে – এমন বিশ্বাস থেকে দূরে থাকুন। এগুলো প্রায়ই ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিমূলক।
  • দোয়া কবুলের জন্য কোনো টাকা-পয়সা বা দান দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এটা শোষণের পথ।
  • দোয়া কবুলের জন্য আল্লাহর সাথে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করুন। কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন নেই।

জুমার দিনের বিশেষ দোয়া: ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও প্রভাব

[লেখকের পরিচয়: মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন, ইসলামিক স্টাডিজে স্নাতকোত্তর (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), ১৫+ বছর ধরে ধর্মীয় বক্তা ও লেখক। ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মোকাররম মসজিদের খতিবের অধীনে দীর্ঘকাল ধরে জুমার খুতবা ও ধর্মীয় বিষয়ে গবেষণা ও লেখালেখির সাথে জড়িত।]

জুমার দিনের বিশেষ দোয়ার ফজিলত ও গুরুত্ব শুধু তাত্ত্বিক বিষয় নয়, এটি আমার ব্যক্তিগত জীবনের গভীর অভিজ্ঞতায়ও প্রমাণিত। দীর্ঘদিন ধরে মসজিদে ইমামতি ও খুতবা প্রদানের সুবাদে আমি লক্ষ্য করেছি, যারা জুমার দিনের মাহাত্ম্য বোঝেন এবং বিশেষ সময়টির জন্য প্রস্তুতি নেন, তাদের জীবনে দোয়ার প্রভাব স্পষ্ট। অনেক মুসল্লি আমাকে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন:

  • একজন ব্যবসায়ী যিনি দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সংকটে ভুগছিলেন, তিনি নিয়মিত জুমার বিশেষ সময়ে ধৈর্য ধরে দোয়া করতে থাকেন। কিছু মাস পরই তার ব্যবসায় অপ্রত্যাশিত সাফল্য আসে, যা তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে দোয়া কবুলের নিদর্শন বলে মনে করেন।
  • একজন মা, যার সন্তান গুরুতর অসুস্থ ছিল, সে জুমার পর আসরের সময়ে কান্নাকাটি করে দোয়া করেছিল। অল্প দিনের মধ্যেই সন্তানের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে, ডাক্তাররাও যা আশা করেননি।
  • আমার নিজের অভিজ্ঞতায়, ব্যক্তিগত জীবনের কঠিন সিদ্ধান্তগুলোতে, পেশাগত চ্যালেঞ্জে, এই বিশেষ সময়ে দোয়া করাটা অদ্ভুত এক শান্তি ও আশ্বাস এনে দিয়েছে। এমনকি কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না পেলেও, এই বিশ্বাস দৃঢ় হয়েছে যে আল্লাহ শুনেছেন এবং আমার জন্য যা কল্যাণকর তাই দিয়েছেন বা দেবেন।

এই অভিজ্ঞতাগুলো শুধু ‘কাকতালীয়’ ঘটনা নয়। এগুলো আমাদের ঈমানকে শক্তিশালী করে যে, জুমার দিনের বিশেষ দোয়ার সময় সত্যিই একটি বরকতময় সুযোগ, যেখানে আল্লাহ বান্দার ডাকে সাড়া দিতে বিশেষভাবে ইচ্ছুক।

জেনে রাখুন (FAQs): জুমার দিনের বিশেষ দোয়া সম্পর্কে প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

  1. প্রশ্ন: জুমার দিনে দোয়া কবুলের সময় আসলে কখন? হাদিসে কি স্পষ্ট বলা আছে?
    উত্তর: হাদিসে মূলত দু’ধরনের বর্ণনা প্রসিদ্ধ:
    (ক) ইমামের মিম্বরে বসা (খুতবা শুরু) থেকে জুমার নামাজ শেষ (সালাম ফিরানো) পর্যন্ত সময়। (সহীহ মুসলিম)।
    (খ) জুমার নামাজের পর, বিশেষত আসরের পর থেকে মাগরিবের আগ পর্যন্ত সময়। (সুনানে তিরমিযী)।
    অধিকাংশ আলেম প্রথম মতটিকে (ইমামের বসা থেকে সালাম) সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও প্রাধান্য দেন। তবে সতর্কতা হিসেবে উভয় সময়েই দোয়া করা উত্তম।

  2. প্রশ্ন: জুমার খুতবার সময় কি দোয়া করা যায়? নাকি শুধু শুনতে হবে?
    উত্তর: খুতবার সময় চুপ করে মনোযোগ সহকারে খুতবা শোনা ওয়াজিব। এই সময় নিজে নিজে দোয়া পড়া, জিকির করা বা অন্য কোনো কথা বলা নিষেধ। তবে ইমাম যখন আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, তখন ‘আমিন’ বলা যায় এবং মনে মনে দোয়া করা যায়। দোয়ার মূল সময় হল খুতবা শেষ হওয়ার পর নামাজ শুরু হওয়ার আগের মুহূর্ত এবং নামাজের মধ্যকার নির্জন মুহূর্তগুলো (যেমন সিজদা, রুকু ও দু’রাকাতের মাঝে বসার সময়)।

  3. প্রশ্ন: জুমার দিনে কি বিশেষ কোনো দোয়া (দোয়া-এ-জুমুআ) পড়তে হয়? কোথায় পাব?
    উত্তর: জুমার দিনের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ‘অফিশিয়াল’ দোয়া বা ‘দোয়া-এ-জুমুআ’ বলে কিছু নেই। এটা প্রচলিত ভুল ধারণা। আপনি নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী, নিজের ভাষায়, অথবা কোরআন-হাদিসে বর্ণিত যে কোনো দোয়া পড়তে পারেন (যেমন সাইয়িদুল ইস্তেগফার, রাব্বানা আতিনা, দোয়ায়ে ইউনুস ইত্যাদি)। নির্ভরযোগ্য ইসলামিক ওয়েবসাইট (ইসলামকিউএ.ইনফো – https://islamqa.info বা বাংলায় আস-সুন্নাহ ট্রাস্টের প্রকাশনা) বা বিশুদ্ধ হাদিসের কিতাব (সহীহ বুখারি/মুসলিমের অনুবাদ) থেকে দোয়াগুলো শিখতে পারেন।

  4. প্রশ্ন: মহিলারাও কি জুমার দিনের বিশেষ দোয়ার ফজিলত পেতে পারেন? কিভাবে?
    উত্তর: অবশ্যই! জুমার দিনের ফজিলত ও বিশেষ দোয়ার সময়ের ফজিলত নারী-পুরুষ সব মুসলিমের জন্যই প্রযোজ্য। মহিলারা যদি মসজিদে গিয়ে জুমা আদায় করেন, তবে তারা মসজিদে বিশেষ সময়ের দোয়া করতে পারবেন। আর যদি বাসায় থাকেন, তবে বাসায় জোহরের নামাজ আদায়ের পর আসরের নামাজের আগ পর্যন্ত সময়টাকে বিশেষ দোয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারেন (দ্বিতীয় মত অনুযায়ী)। বাড়িতে একাগ্রতার সাথে দোয়া করলেও আল্লাহর রহমত পাওয়ার পূর্ণ আশা করা যায়। সূরা কাহফ তিলাওয়াত, দরুদ শরীফ পাঠ, ইস্তেগফার ইত্যাদি আমল বাড়িতেও করা যায়।

  5. প্রশ্ন: জুমার দিনে দোয়া করেছি, কিন্তু কবুল হলো না বলে মনে হচ্ছে। এর কারণ কী?
    উত্তর: দোয়া কবুল না হওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে:

    • হালাল-হারামের অসতর্কতা: হারাম রিজিক, হারাম পন্থায় উপার্জন দোয়া কবুলে বাধা সৃষ্টি করে।
    • অধৈর্য্য: দোয়ার পর ফলাফল চটজলদি না পেয়ে হতাশ হওয়া। আল্লাহ উত্তম সময়ে দেন।
    • গুনাহের প্রাবল্য: খোলাখুলি গুনাহ করা এবং তাওবা না করা।
    • দোয়ায় অনীহা/অবহেলা: দোয়া কবুলের ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাসের অভাব।
    • আল্লাহর হিকমত: অনেক সময় যা চাই, তা আমাদের জন্য অকল্যাণকর হতে পারে। আল্লাহ তার জ্ঞানে তার জন্য যা শ্রেয়, তাই দেন। হয়তো দোয়া কবুল হয়েছে, কিন্তু আমরা তা এখনো বুঝতে পারিনি, অথবা তার প্রতিদান আখিরাতে জমা হচ্ছে। দোয়া চালিয়ে যাওয়া এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখাই মুমিনের কাজ।

নির্দিষ্ট সময় বা স্থানের দাবি, অর্থের বিনিময়ে দোয়া কবুলের গ্যারান্টি দেওয়া – এসব থেকে সতর্ক থাকুন। দোয়া কবুল একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছাধীন।


জুমার দিনের বিশেষ দোয়ার ফজিলত ও গুরুত্ব শুধু একটি ধর্মীয় বিধান নয়; এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর বান্দাদের জন্য এক অফুরন্ত রহমতের ঝর্ণাধারা। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের হতাশা, সংকট ও অভাবের মাঝে আশার আলো জ্বালানোর এক অনন্য সুযোগ। প্রতিটি জুমা আসে আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আমাদের ডাক শোনার জন্য, আমাদের কান্নায় সাড়া দেওয়ার জন্য, আমাদের চাওয়াকে পূরণ করার জন্য একজন মহান রব আছেন। তিনি চান আমরা তাঁর দরবারে ফিরে আসি, একান্তে আমাদের গ্লানি, আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা তাঁর কাছেই তুলে ধরি। ইমামের মিম্বরে বসা থেকে সালাম ফিরানো পর্যন্ত সেই পবিত্র সময়টুকু, কিংবা আসরের পরের নির্জন মুহূর্তগুলো – এগুলোই হল সেই সোনালি সুযোগ, যখন আসমানের দরজাগুলো খুলে যায়, আল্লাহর রহমতের ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হয়। তাই, পরবর্তী জুমায়, ঢাকার বাইতুল মোকাররম হোক, চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ হোক, কিংবা গ্রামের ছোট্ট মসজিদ অথবা আপন ঘরের কোণ – সবাই নিজের জন্য, আপনার প্রিয়জনদের জন্য, এই ভঙ্গুর বিশ্ব ও উম্মাহর শান্তির জন্য দোয়ার হাত তুলুন। বিশ্বাস রাখুন, আপনার ডাক অবশ্যই পৌঁছবে। কারণ, তিনি তো শুনেই রয়েছেন – আস-সামীউল আলীম (সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ)।


জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।
‘ও ইসলাম গুরুত্ব জীবন জুমার জুমার দিনের বিশেষ দোয়ার ফজিলত ও গুরুত্ব দিনের দোয়ার ফজিলত বিশেষ
Related Posts
নামাজের সময়সূচি ২০২৫

নামাজের সময়সূচি: ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫

December 23, 2025
পবিত্র শবে মেরাজ

পবিত্র শবে মেরাজ কবে, জানা গেল তারিখ

December 22, 2025
নামাজের সময়সূচি ২০২৫

নামাজের সময়সূচি: ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫

December 22, 2025
Latest News
নামাজের সময়সূচি ২০২৫

নামাজের সময়সূচি: ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫

পবিত্র শবে মেরাজ

পবিত্র শবে মেরাজ কবে, জানা গেল তারিখ

নামাজের সময়সূচি ২০২৫

নামাজের সময়সূচি: ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫

নামাজের সময়সূচি ২০২৫

নামাজের সময়সূচি: ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫

ক্ষমা

কোরআন ও হাদিসের আলোকে ক্ষমার গুরুত্ব

নামাজের সময়সূচি ২০২৫

নামাজের সময়সূচি: ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫

নামাজের সময়সূচি ২০২৫

নামাজের সময়সূচি: ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

সম্পদ

কোরআন-হাদিসের আলোকে সম্পদ উপার্জনে নীতি

নামাজের সময়সূচি ২০২৫

নামাজের সময়সূচি: ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

নামাজের সময়সূচি ২০২৫

নামাজের সময়সূচি: ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫

  • About Us
  • Contact Us
  • Career
  • Advertise
  • DMCA
  • Privacy Policy
  • Feed
  • Editorial Team Info
  • Funding Information
  • Ethics Policy
  • Fact-Checking Policy
  • Correction Policy
© 2025 ZoomBangla News - Powered by ZoomBangla

Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.