জুমবাংলা ডেস্ক : জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত-নিহতের তালিকার প্রথম ধাপের খসড়া চূড়ান্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরই মধ্যে সেই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে।
খসড়ায় নিহত হিসেবে ৮৫৮ জন এবং আহত হিসেবে ১১ হাজার ৫৫১ জনের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
শনিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেলের দলনেতা (অতিরিক্ত সচিব) খন্দকার জহিরুল ইসলামের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
সেখানে বলা হয়, জুলাই-আগস্টে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে নিয়ে প্রতিপক্ষের আক্রমণে নিহত বা আহতদের নামের তালিকা চূড়ান্ত করতে কাজ করছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ৬৪ জেলায় গঠিত জেলা কমিটি এবং গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল। এরই অংশ হিসেবে প্রথম ধাপের খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেলের ওয়েবসাইট musc.portal.gov.bd এই ঠিকানায়।
এই খসড়া তালিকা আগামী সোমবার পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
তালিকায় থাকা নিহত ও আহতদের নাম, ঠিকানা ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য যাচাই, সংশোধন ও চূড়ান্ত করতে সংশ্লিষ্টদের পরিবারের সদস্যদের মতামত চেয়েছে বিশেষ সেল। তাছাড়া এই দুটি তালিকার বিষয়ে কারও কোনও মতামত বা পরামর্শ থাকলে অথবা কিছু সংযোজন বা বিয়োজন করার মতো যুক্তিসঙ্গত তথ্য থাকলে তা সোমবারের মধ্যে গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেলের ইমেইল [email protected] এই ঠিকানায় জানাতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত ৭ অক্টোবর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে মোট ৭৩৭ জন নিহতের তথ্য পেয়েছে তারা। সেই সময় পর্যন্ত মোট ২২ হাজার ৯০৭ জন আহত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
সেদিন তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “গণআন্দোলনে নিহত এবং আহতদের তালিকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএসে (ম্যানেজমেন্ট অব ইনফরমেশন সিস্টেম) হালনাগাদ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে ৭৩৭ জন নিহতের তথ্য রয়েছে এবং এগুলো যাচাই করা হচ্ছে।”
জুলাইয়ের গণআন্দোলনে নিহত ও আহতদের তালিকা করার জন্য স্বাস্থ্যবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই কমিটি প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ৪২৩ জন নিহত হওয়ার তথ্য জানায়। তবে সেই তালিকাও চূড়ান্ত নয় বলে জানানো হয়েছিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে দেশে কোটাবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল জুলাইয়ের শুরুতে। সে মাসের মাঝামাঝিতে এসে আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পথে নেমে আসেন সাধারণ মানুষও। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস, কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ।
এক পর্যায়ে নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিও ছোড়া হয়। যার ফলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসতে থাকে মৃত্যুর খবর।
এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৮ আগস্ট দেশ পরিচালনার দায়িত্ব যায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।
নতুন এই সরকার আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা ও নিহতদের পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার জন্য নীতিমালা প্রণয়নের জন্য পূর্ণাঙ্গ তালিকা করার উদ্যোগ নেয়। সেজন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়।
সেই কমিটি একটি খসড়া নীতিমালা এবং আহত-নিহতদের একটা প্রাথমিক তালিকা মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছে বলে জানান নূরজাহান বেগম।
মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা তালিকা সর্বসাধারণের যাচাইয়ের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “দ্রুততম সময়ে ডাটাবেইজ তৈরির সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।”
আহত-নিহতদের তালিকা তৈরি করতে গিয়ে বেশ কিছু সমস্যারও মুখোমুখি হয়েছে মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, “সেই সময়ে অনেককেই মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। কারও কারও ডেথ সার্টিফিকেট দিতে পোস্টমর্টেম করতে হবে, পুলিশ কেইস করতে হবে বলা হয়েছিল।
“ফলে অনেকেই ঝামেলা এড়াতে বা ভয়ে মৃতদেহ নিয়ে চলে গিয়েছে। আবার অনেকে ভয়ে পরিবারের ঠিকানাও ভুল দিয়েছিল। ফলে সেই ভুল ঠিকানাতে গিয়েই কমিটিকে কাজ করতে হয়েছে। সেসব ঠিকানা ভেরিফাই করতে হয়েছে।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।