১৬৩৯ সালের এক মেঘলা বিকেল। যুগান্তকারী কাজ করে ফেললেন ইংরেজ জ্যোতির্বিদ জেরেমায়া হরকস। সেদিন বিকেলে এ মানুষটি নির্ভুলভাবে পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্ব বের করেন। এ ছাড়া পূর্বাভাস দেন শুক্র গ্রহের ট্রানজিট বা অতিক্রমণের। আমরা জানি, পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে চাঁদ চলে এলে পৃথিবী থেকে সূর্যকে আর দেখা যায় না। সূর্য ঢাকা পড়ে চন্দ্রের পেছনে। এটাই সূর্যগ্রহণ।
শুক্র গ্রহ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এলে হয় শুক্রের অতিক্রমণ। পৃথিবী থেকে চাঁদের তুলনায় শুক্র অনেক দূরে। ফলে আসলে বড় হলেও শুক্রকে আকাশে দেখা যায় ছোট। তাই শুক্র সূর্যকে চাঁদের মতো ঢেকে দিতে পারে না। তবে সূর্যের আলোকে বাধাগ্রস্ত করে কিছুটা। সেটা সূর্যের গায়ে কালো দাগ হিসেবে দেখা যায়। এটাই শুক্রের অতিক্রমণ। বিষয়টা অন্য গ্রহের বেলায়ও ঘটে।
এমন একটি সূক্ষ্ম ব্যাপার সঠিকভাবে অনুমান করেন হরকস। শুধু তা–ই নয়। তিনিই প্রথম প্রমাণ করেন, পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয়, ঘুরছে সূর্যকে কেন্দ্র করে। আর এরই মাধ্যমে নির্মিত হয় পরবর্তী সময়ে নিউটনের কাজের ভিত্তিপ্রস্তর।
হরকসের আগে মহাবিশ্বের পরিধি সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা ছিল না। শুক্র গ্রহের অতিক্রমণ নিয়ে হরকসের প্রবন্ধ অল্পের জন্য চিরতরে হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়। গৃহযুদ্ধ ও লন্ডনের মহাগ্নি থেকে বেঁচে যায় শুধু লাতিন ভাষায় লিখিত একটি পাণ্ডুলিপি।
১৬৩৯ সালে হরকসের বয়স ছিল মাত্র ২০ বছর। এ অল্প বয়সে তিনি এক বড় গাণিতিক সাফল্য অর্জন করেন। জোহানেস কেপলারের মতো জ্যোতির্বিদের হিসাবের ভুল বের করেন। করেন সংশোধনও। কেপলার বলেছিলেন, ১৬৩৯ সালে অল্পের জন্য অতিক্রমণ হবে না।
হরকসই প্রথম দেখান, চাঁদ পৃথিবীর চারপাশে উপবৃত্তাকার কক্ষপথে ঘুরছে। তিনি এ থেকে অনুমান করেন, ধূমকেতুও একই পথে চলবে। চাঁদের কক্ষপথ তৈরিতে চাঁদ ও পৃথিবীর ভূমিকার কথাও তিনি তুলে আনেন। নিউটন প্রিন্সিপিয়ায় তাঁর কথা লিখেছিলেন। বলেছিলেন, তাঁর চাঁদের গতিপথ নির্ণয়ে হরকসের অবদান আছে। শেষজীবনে হরকস জোয়ার-ভাটায় চাঁদের ভূমিকা ব্যাখ্যা করার কাজ করছিলেন।
হরকস খ্যাতি ও স্বীকৃতি না পাওয়ার অন্যতম কারণ অল্প বয়সে মৃত্যু। ফলে তিনি নিজের গবেষণা প্রকাশ ও প্রচারের সুযোগ পাননি। ফলে অন্য জ্যোতির্বিদেরা জানতে পারেননি তাঁর গবেষণার কথা। আর সে কারণে তিনি কেপলার ও গ্যালিলিওর মতো সাধারণ মানুষের প্রশংসা পাননি। যদিও তিনি কোপার্নিকাস, টাইকো ব্রাহে, গ্যালিলিও ও কেপলারদের সঙ্গে নিউটনের মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন।
জ্যোতির্বিদ্যায় হরকস এখন অচেনা এক নাম। জ্যোতির্বিদ্যায় তাঁর অবদানের কথাও জানেন অল্পসংখ্যক মানুষ। আগে এর জন্য আমি নিজেদের দুষলেও এখন বুঝি, এর পেছনে অন্যতম কারণ ছিল তাঁর স্বল্পায়ু। ভদ্রলোক বেঁচেছিলেন মাত্র ২২ বছর। জীবদ্দশায় তাঁর বৈজ্ঞানিক গবেষণাকর্ম প্রকাশিত হয়নি। তাঁর অসামান্য গাণিতিক অবদান তাই পায়নি বহুল পরিচিতি ও স্বীকৃতি। আগেও বলেছি, ১৬৮৭ সালে নিউটন প্রিন্সিপিয়ায় হরকসের পর্যবেক্ষণের অবদানের কথা স্বীকার করেন। হরকসের পর্যবেক্ষণ ছাড়া নিউটনের পক্ষে মহাকর্ষের কাজ শেষ করা ছিল অসম্ভব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।