জুমবাংলা ডেস্ক : লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি, জেলা পরিষদ ও চররমনী মোহন ইউপি’র সাবেক সদস্য আলমগীর হোসেন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচার নির্যাতন থেকে বাদ যায়নি নিজ দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। জমি দখল, ঘাট দখল, চাঁদাবাজি, হামলা, মামলাই ছিল তার নিত্যদিনের কাজ। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করলে নেমে আসতো নির্মম নির্যাতন। তার ভয়ে আতঙ্কিত চররমনী মোহন ও মজুচৌধুরীহাটসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকা। তার বিরুদ্ধে সদরসহ বিভিন্ন থানায় নানা অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। দেশের জনপ্রিয় জাতীয় দৈনিক মানবজমিন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়- গত ৪ঠা আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও গুলি চালিয়ে চার শিক্ষার্থী নিহত ও তিনশ’র বেশি গুলিবিদ্ধের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে। এরপর ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে চলে যায় আলমগীর হোসেন। তার রয়েছে লক্ষ্মীপুর শহরসহ বিভিন্ন স্থানে বহুতল বাড়ি ও কয়েক একর জমি। চর মেঘাতে সরকারি কয়েকশ’ একর খাস জমি দখল করে ৫শ’র বেশি মহিষ লালন-পালন করছেন। এ ছাড়া মজুচৌধুরীরহাটে রয়েছে বালু মহল। বর্তমানে শত কোটি টাকার মালিক বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
মজুচৌধুরীরহাট এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদের সদস্য এবং চররমনী মোহন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করতেন আলমগীর হোসেন। এই সুবাদে সরকারি খাস জমি দখল ও ঘাট দখল বাণিজ্য, চাঁদাবাজি ও অবৈধভাবে বালুমহল দিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক এখন। শহরের গোহাটা সড়কে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় ৫ তলা বাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া কয়েক একর জমি ও বিভিন্ন স্থানে একাধিক প্লট রয়েছে তার।
মেঘনা বেষ্টিত জেলা লক্ষ্মীপুর। জেলার বেশির ভাগ মানুষ কৃষি কাজ ও নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। আর এসব অসহায় মানুষদের শাসন ও শোষন করে চরাঞ্চলের এক শ্রেণির প্রভাবশালীরা। এসব প্রভাবশালীর মধ্যে অন্যতম লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররমনী মোহন এলাকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন মেম্বার ওরফে আলমগীর। তার নেতৃত্বে রয়েছে বিশাল এক লাঠিয়াল বাহিনী। এই লাঠিয়াল বাহিনীর চাঁদাবাজি, জমিদখল ও ঘাট দখলসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অত্যাচার-নির্যাতনে অতিষ্ঠ চরাঞ্চলের জেলে থেকে শুরু করে সব শ্রেণির-পেশার লোকজন। আলমগীর মেম্বারের জন্মস্থান ভোলার সাবাসপুর হলেও স্বাধীনতার পর চররমনী মোহন এলাকায় এসে রাজত্ব শুরু করে। এরপর থেকে আলমগীর হোসেন আর পিছনে ফিরতে হয়নি। এক সময় নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করলেও এখন শতকোটি টাকার মালিক। কীভাবে এত টাকার মালিক, এটাই এখন প্রশ্ন স্থানীয়দের। তার সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে দাবি জানান ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও স্থানীয়রা।
অনেকটা টানা-পড়েনের সংসার ছিল তার। স্থানীয়দের মতে, রাজনীতির মাধ্যমেই আয় তার শত কোটি টাকা। তবে রাজনীতিবিদ হিসেবে খুব একটা জনপ্রিয় ছিলেন না আলমগীর। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েও না পেয়ে দুইবার চররমনী মোহন ইউনিয়নে আবু ইউসুফ ছৈয়ালের সঙ্গে চেয়ারম্যান নির্বাচন করেন। সেই ভোটে বিপুল ব্যবধানে হেরে যান তিনি। ওই সময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আলমগীর। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক এমপি নয়নের আশির্বাদ পুষ্ট আলমগীর দুইবার জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। সে সময়ে লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদসহ জেলে পল্লীতে যত অনিয়ম তার হাত ধরেই শুরু হয়।
আলমগীর মেম্বারের লক্ষ্মীপুরে আগমন: আলমগীর মেম্বারের মূল বাড়ি ভোলার সাহাবাসপুর এলাকায়। তার পিতা নুরুল্লাহ মিয়া জেলে ছিলেন। বাবার সঙ্গে জেলের কাজ করতেন আলমগীর। মেঘনার ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে স্বাধীনতার পরপরই সপরিবার চলে আসেন লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলার মজুচৌধুরীরহাট এলাকায়। ঘাঁটি করেন চররমনী মোহন এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। তার বাবা নুরুল্লাহ মিয়া দুই বিয়ে করেন। তারা চার ভাই পাঁচ বোন। আলমগীর মেম্বার পরের ঘরের সন্তান। আলমগীর মেম্বারের পরিবারের সিন্ডিকেটে রয়েছে ভাতিজা হুমায়ূন কবির, ইউসুফ হোসেন জাবেদ, ভাগিনা ইউপি সদস্য মাদক ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম, ভাই বারেক মিয়া। বারেক মিয়ার ছেলে হত্যা মামলার আসামি শাকিল। সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তারা সরকারি খাল দখল, বেড়িবাঁধ দখল, মাছ ঘাট দখল, বালু মহল দখল, মাদক ব্যবসাসহ সকল অপকর্ম তাদের নিত্যদিনের ব্যবসা।
মজুচৌধুরীরহাট এলাকার বাসিন্দা আবদুল আজিজ বলেন, আলমগীর হোসেন মেম্বার ও তার লাঠিয়াল বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। চর মেঘায় সরকারি কয়েকশ’ একর জমি দখল করে মহিষ লালন-পালন করছেন। কয়েক মাস আগে ইউপি সদস্য মনির হোসেন বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ আটক হয়েছে। অর্থাৎ মাদক ব্যবসা, বালু মহল ও লঞ্চ ও ফেরিঘাট নিয়ন্ত্রণ করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
চররমনী মোহন এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, আলমগীর ও তার লাঠিয়াল বাহিনীর অত্যাচারে চররমনী মোহন এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। তার কথামতো না চললে দেয়া হতো মামলা ও নির্যাতন। পাশাপাশি তার আত্মীয়স্বজনরা জমি দখল, ঘাট দখল ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি দখল করে দোকান-পাট গড়ে তুলে বিক্রি করতেন। পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর পাটোয়ারী বলেন, এই ওয়ার্ডে আলমগীর মেম্বার জমি কিনে পাঁচতলা বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। অথচ এই আলমগীর ছিলেন এক সময়ে ইউপি মেম্বার ও মজুচৌধুরীরহাট ঘাট এলাকার আতঙ্ক। আওয়ামী লীগ করে গত ১৭ বছরে হয়েছেন শতকোটি টাকার মালিক।
তবে এসব বিষয়ে অভিযুক্ত আলমগীর হোসেনের সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে তার ছেলে এডভোকেট হাসানুজ্জামান বলেন, রাজনীতির প্রতিহিংসার কারণে অনেকেই নানান কথা বলছেন। এ ছাড়া ব্যাংক লোন নিয়ে বহুতল বাড়ি নির্মাণ করছে বাবা। এখনো অনেক টাকা দেনা রয়েছে। বাবা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কারণে ষড়যন্ত্রের শিকার।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবদুল মোন্নাফ বলেন, আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে।
পুলিশ সুপার মো. আকতার হোসেন বলেন, অন্যায়কারী যত বড় শক্তিশালী হোক না কেন? আইনের কাছে সে অপরাধী। আইনের অধীনে প্রত্যেক অপরাধীর বিচার হবে। এ ছাড়া আলমগীর মেম্বারসহ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। সূত্র: মানবজমিন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।