জুমবাংলা ডেস্ক: গ্রামের ভেতর প্রবেশ করলে গভীর নির্জনতা। চাষবাসের জমি থেকে শুরু করে দোকানপাট, বাসস্ট্যান্ড সব-ই রয়েছে জাপানের এ গ্রামে। চারদিকে ভালো করে খেয়াল করলে লোকজনও দেখা যায়। কিন্তু তাদের কাছে গেলেই অন্য দৃশ্য ধরা পড়ে। এ যে মানুষ নয়, বরং মানুষের পোশাক পরে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি পুতুল।
পুতুলে ভরা জাপানের এ গ্রামটির নামও অদ্ভুত। জাপানের ‘ইয়া উপত্যকায় নাগোরো’ গ্রামের নাম দেওয়া হয়েছে স্কেয়ারক্রো গ্রাম। পুতুলগুলি কাকতাড়ুয়ার আকারে তৈরি করা হয়েছে বলেই গ্রামের এমন নাম। শিকোকু দ্বীপপুঞ্জের এ গ্রামের একটি জাপানি নামও রয়েছে। স্থানীয়দের কাছে এ গ্রাম কাকাশি নো সাতো নামে পরিচিত।
এ গ্রামে কাকতাড়ুয়ার সংখ্যা দুইশোরও বেশি। গ্রামবাসীর মতো প্রতিটি কাকতাড়ুয়ার নাম, লিঙ্গ, বয়স নির্ধারণ করে রেজিস্ট্রিতে লিখে রাখা আছে। এক একটি কাকতাড়ুয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলে মনে হয় তারা যেন জীবন্ত। কেউ টেলিফোনের লাইন ঠিক করছে, কেউ আবার বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। কোথাও কোথাও আবার কাকতাড়ুয়ার দলকে আড্ডা মারতেও দেখা যায়।
কিন্তু এ কাকতাড়ুয়াদের জীবদ্দশা তিন বছরের বেশি নয়। তিন বছর পার হয়ে গেলেই তাকে গ্রামের বাইরে সরিয়ে দেওয়া হয়। তার জায়গায় চলে আসে অন্য এক কাকতাড়ুয়া। তবে জাপানে এমন এক ভুতুড়ে গ্রাম গড়ে ওঠার পেছনে এক নারীর হাত রয়েছে। ঐ নারীর নাম সুকিমি আয়ানো। গ্রামের কাকতাড়ুয়াদের মা হিসাবে তিনি অধিক পরিচিত।
নাগোরো গ্রামে জন্ম হলেও পড়াশোনা সূত্রে গ্রাম ছেড়ে বাইরে চলে গিয়েছিলেন সুকিমি। ২০০২ সালে আবার ঐ গ্রামে ফিরে আসেন তিনি। কিন্তু গ্রামে আসার পর তিনি হতাশ হয়ে পড়েন। সুকিমির শৈশব কেটেছিল নাগোরো গ্রামে। পরিবহণের বিশেষ সুযোগ সুবিধা ছিল না এই গ্রামে। বাস চলাচল করলেও তার সংখ্যা ছিল খুব কম। রেলস্টেশন যেতে হলেও কমপক্ষে এক ঘণ্টা সময় লাগত।
সিএনএন ট্রাভেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুকিমি জানান, নাগোরো গ্রামে আগে ৩০০ জন গ্রামবাসী থাকতেন। কিন্তু তিনি যখন ফিরে এলেন, তখন গ্রামে মাত্র ২৭ জন ছিলেন। এই ২৭ জনের মধ্যে যিনি কনিষ্ঠতম, তার বয়স ৫০ বছর। সুকিমি বলেন, ‘নাগোরো গ্রাম ছেড়ে সকলে বাইরে চলে গিয়েছেন। গ্রামটি যেন ফাঁকা ফাঁকা না লাগে, তাই আমি কাকতাড়ুয়া বানাতে শুরু করি।’
সুকিমি তার বাবার আদলে প্রথম কাকতাড়ুয়া বানিয়েছিলেন। কাকের উৎপাত থেকে বাঁচার জন্য তা নিজের বাড়ির জমিতে রেখে দেন তিনি। কিন্তু সুকিমি খেয়াল করেন যে, জমির সামনে দিয়ে যখন কেউ যেতেন, কাকতাড়ুয়াকে দেখে হাত নাড়াতেন। এই দৃশ্য দেখে সুকিমির মাথায় এক অভিনব পরিকল্পনা আসে। তিনি ভাবেন সমস্ত গ্রামেই তার হাতের তৈরি কাকতা়ড়ুয়া দিয়ে ভরিয়ে দেবেন।
যেমন ভাবা, তেমন কাজ। ২০১৩ সালের মধ্যে মোট ৩৫০টি কাকতাড়ুয়া তৈরি করে ফেলেছিলেন সুকিমি। দূর থেকে এই কাকতাড়ুয়াগুলো দেখলে মনে হয় যেন গ্রামবাসীরাই গ্রামজুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রতি বছর অক্টোবর মাসের প্রথম রবিবার নাগোরো এলিমেন্টারি স্কুলের কাছে স্কেয়ারক্রো উৎসব হয়।
সুকিমিকে এই কাকতাড়ুয়াদের মা হিসেবে মানা হয়। প্রতি মাসের চতুর্থ বুধবার সুকিমি ওয়ার্কশপের আয়োজন করে থাকেন। সেরামিকের কাজ থেকে শুরু করে নিজের হাতে কাকতাড়ুয়া বানানো শেখান সুকিমি। কিন্তু ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এই ওয়ার্কশপ বন্ধ থাকে।
সূত্র: আনন্দবাজার
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।