জাতি-ধর্ম-বর্ণ-কালনির্বিশেষে মানুষ রাতের আকাশকে ভালোবেসেছে; ভালোবেসেছে আকাশের অগণিত তারা। দূর আকাশের তারা নিয়ে রচিত হয়েছে রূপকথা, আবার কোনো কোনো জাতি তারাগুলোকে মেনেছে দেবতা হিসেবে। শুভ কিংবা অশুভ শক্তির উৎস হিসেবে নিষ্প্রাণ তারাগুলোকে দেখানো হয়েছে জ্যোতিষচর্চায়।
যুগে যুগে তারাগুলোকে যেমন মানুষ চিনে নিয়েছে, তারাগুলোও কিন্তু মানুষকে দিয়েছে পথের সন্ধান; মহাসমুদ্রের নাবিক থেকে শুরু করে মরুভূমির পরিব্রাজক—দিকনির্দেশনার জন্য তারাগুলোর অবস্থান ব্যবহার করেন আজকের এই আধুনিক যুগে এসেও।
সেই আদিকাল থেকেই জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়টি বিজ্ঞান গবেষণার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা হিসেবে আছে। মহাকাশ গবেষণার একটা বড় লক্ষ্য হলো, মহাবিশ্বের সৃষ্টিবিষয়ক রহস্য ভেদ করা। বিজ্ঞানের ভাষায় বিগ ব্যাং বা এক মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের জন্ম। কিন্তু কেমন ছিল সেই বিগ ব্যাং? বিগ ব্যাং থেকেই যদি মহাবিশ্বের জন্ম হয়, তবে তার আগে কী ছিল? এসব জানার জন্যও মানুষ যুগে যুগে তাকিয়েছে মহাকাশের দিকে, তারাগুলোর গতিপ্রকৃতি নিয়ে করেছে নানামুখী গবেষণা।
এককালে মানুষ তারা দেখত খালি চোখে। ১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দে ওলন্দাজ চশমা কারিগর হ্যান্স লিপারশে উদ্ভাবন করেন টেলিস্কোপ। এর পরের বছরই ইতালীয় আবিষ্কারক গ্যালিলিও গ্যালিলি আরও উন্নত টেলিস্কোপ তৈরি করেন। সেই থেকে শুরু। মানুষের মহাকাশ দেখার আজন্ম আকাঙ্ক্ষাকে পূর্ণতা দিতে কালের বিবর্তনে ও বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় টেলিস্কোপের প্রভূত উন্নতি হয়েছে।
বিশেষ করে সপ্তদশ শতকে স্যার আইজ্যাক নিউটন প্রিজম ও আয়না ব্যবহার করে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের টেলিস্কোপ আবিষ্কার করেন। দিন দিন উন্নতি হতে হতে ব্যাপারটা এখন এমন একপর্যায়ে পৌঁছেছে, টেলিস্কোপকে অতীত দেখার যন্ত্র বা একধরনের টাইম মেশিন হিসেবেও মনে করতে পারি।
আমরা কিন্তু খালি চোখেও অসীম দূরত্বে দেখতে পাই। কোনো বস্তু, সেটি যতই দূরে থাকুক, সেটিকে দেখতে পাব কি পাব না, তা নির্ভর করবে সেই বস্তু থেকে যথেষ্ট পরিমাণ আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখ পর্যন্ত এসে পৌঁছাতে পারছে কি না, তার ওপর। এ কারণেই সুদূর আকাশের নক্ষত্ররাজিও রাতের আকাশে খালি চোখেই দেখা যায়। আবার বস্তু থেকে কতটা আলো চোখ পর্যন্ত এসে পৌঁছাবে, তার অনেকটাই নির্ভর করে মাঝখানের মাধ্যমের ওপর।
ঢাকার আকাশের চেয়ে অনেক বেশি তারা দেখা যায় আরেকটু গ্রামের দিকে গেলে। কারণ, ঢাকার আকাশে উড়তে থাকা ধূলিকণা তারাগুলোর আলো আটকে দেয় অনেকখানি। আবার পূর্ণিমা রাতের চেয়ে অমাবস্যার রাতেও অনেক বেশি তারা দেখা যায়। কারণ, পূর্ণিমার উজ্জ্বল আলোকচ্ছটায় ঢাকা পড়ে যায় তারার মিটিমিটি আলো।
আকাশের তারাগুলো কতটা দূরে থাকে? পৃথিবীতে যেমন দূরত্ব মাপার জন্য কিলোমিটার, মাইল, ক্রোশ ইত্যাদি পরিমাপ আছে, মহাকাশে দূরত্ব মাপার জন্যও একই রকম কিছু পরিমাপ রয়েছে। সাধারণ কিলোমিটার দিয়েও ক্ষেত্রবিশেষে মহাজাগতিক দূরত্বকে প্রকাশ করা যায়। কিন্তু তাতে বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন ইত্যাদি লিখতে হয় বলে মহাজাগতিক পরিমাপের বড় আকারের কিছু একক রয়েছে।
বড় মাপের মহাজাগতিক দূরত্ব পরিমাপের জন্য প্রথম যুগের প্রচলিত একক ছিল লাইট ইয়ার বা আলোকবর্ষ। আলো এক বছরে যতটা পথ পাড়ি দেয়, তাকেই বলে এক আলোকবর্ষ। কিলোমিটারের হিসাবে এক আলোকবর্ষ সমান ৯.৭ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার। ১–এর পরে ১২টি শূন্য মানে এক ট্রিলিয়ন।
এই পরিমাপ দূরবর্তী মহাজাগতিক বস্তুর ক্ষেত্রে সহজ, কিন্তু সৌরজগতের ভেতরের দুটি বস্তুর (যেগুলো অপেক্ষাকৃত কাছাকাছি) দূরত্ব পরিমাপের জন্য বেশি বড় হয়ে যায়। এ রকম মহাজাগতিক দূরত্ব মাপার জন্য যে একক ব্যবহার করা হয়, তাকে বলে অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট বা AU। পৃথিবী থেকে সূর্যের যে দূরত্ব, অর্থাৎ ১৫ কোটি কিলোমিটারকে ১ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট ধরা হয়। অন্যভাবে দেখলে ১ আলোকবর্ষ হলো প্রায় ৬৩,০০০ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।