বিজনেস ডেস্ক : সূচকের উত্থান-পতনে দিশেহারা পুঁজিবাজারের সবশ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা। এরমধ্যে শাহ মোহাম্মদ সগীর অ্যান্ড কোম্পানি সিকিউরিটিজ হাউজের লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে হাউজ কর্মকর্তাদের অসহযোগিতায় বিনিয়োগের বর্তমান অবস্থার খবর জানতে না পেরে বেকায়দায় পড়েছেন সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা।
বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করে বলেন, শাহ মোহাম্মদ সগির অ্যান্ড কোম্পানির গ্রাহকেরা গত সেপ্টেম্বর মাসের ২৫ তারিখ থেকে কোন প্রকার বাই-সেল করতে পারছেন না। এমনকি গত দুই মাস যাবত বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ উত্তোলনের রিক্যুইজিশন দিলেও হাউজ কর্তৃপক্ষ তা দিচ্ছে না। এছাড়াও হাউজ থেকে রিং সাইন টেক্সটাইলের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদনের প্রেক্ষিতে টাকা কেটে নিলেও তাদের আবেদন করা হয় নি।
এ অবস্থার কারণ জানতে ওই বিনিয়োগকারীরা হাউজ কর্তৃপক্ষ অথবা সংশ্লিষ্ট শাখায় যোগাযোগ করলেও তারা স্পষ্ট কোন ব্যাখ্যা না দিয়ে কালক্ষেপন করছে। অথচ ওই বিনিয়োগকারীরা জানতেই পারছে না যে আসলে কি হয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর শাহ মোহাম্মদ সগীর অ্যান্ড কোম্পানির ট্রেড সেটেলমেন্ট ফেইলুরের কারণে তাদের ট্রেড স্থগিত করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। অর্থ্যাৎ ক্রয়-বিক্রয়ের বিপরীতে ডিএসইর নির্ধারিত ফি পরিশোধ করেনি শাহ মোহাম্মদ সগীর অ্যান্ড কোম্পানি। আর এ কারণেই সিকিউরিটিজ হাউজটির ট্রেড সাসপেন্ড করেছে ডিএসই। যা বর্তমানে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃক তদন্তানাধীন।
ডিএসইর নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, এ ধরনের অপরাধে কোন হাউজের মাসে ট্রেড সাসপেন্ড হলে সাধারণত ২বার ডিএসই নিজেই ট্রেড ওপেন করে দিতে পারে। এর বেশী হলে তা বিএসইসির এখতিয়ারে চলে যায়। তখন ডিএসইর কিছুই করার থাকে না।
এতে এটাই প্রতীয়মান যে, ট্রেড সেটেলমেন্ট ক্লিয়ারে শাহ মোহাম্মদ সগীর অ্যান্ড কোম্পানির গাফিলতি রয়েছে। অথচ বলির পাঠা হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
তবে এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের দুঃশ্চিন্তার কারণ নেই বলেও জানান ডিএসইর কর্মকর্তারা। তারা বলেন, এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষিত থাকবে। বিনিয়োগকারীরা ইচ্ছে করলেই লিঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অন্য কোন হাউজে স্থানান্তরিত করতে পারবেন।
কিন্তু শাহ মোহাম্মদ সগীর অ্যান্ড কোম্পানির অপরাধের শাস্তি কেন বিনিয়োগকারীরা পাবেন; এবং হাউজটির ট্রেড রি-ওপেন কিংবা লিঙ্ক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত করার সময়কালে বিনিয়োগকৃত শেয়ারের দাম কমে অনাকাঙ্খিত লস হলে এর দায় কে নেবে- এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর তারা দিতে পারেন নাই।
অভিযোগ রয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের চাহিদা মোতাবেক লিঙ্ক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরে সহযোগিতা করছেন না শাহ মোহাম্মদ সগীর অ্যান্ড কোম্পানির কর্মকর্তারা। বিশেষ করে জেলা শহর কিংবা মফস্বলের গ্রাহকদের ভোগান্তি আরও বেশি। সংশ্লিষ্ট ব্রাঞ্চের কর্মকর্তারা একেকদিন একেকরকম কথা বলছেন। কখনো বলছেন মালিকানা পরিবর্তন হবে, আবার কখনো বলছেন আজ-কালের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে।
নোয়াখালি থেকে মো: শাহেদ (হাউজ কোড-১৬…৫৬) অভিযোগ করে বলেন, গত ২০-২২ দিন আমরা কোন ট্রেড করতে পারছি না। এছাড়া আমরা রিং সাইন টেক্সটাইলের আইপিও আবেদন বাবদ টাকা জমা দিলেও আমাদের আবেদন করা হয়নি।
লক্ষীপুর ও চৌমুহনী শাখার বিনিয়োগকারী সুসেন চন্দ্র দাস (বিও নং- এনসিইউ ২৩…৮০) অভিযোগ করে শেয়ারনিউজ২৪.কমকে জানান, গত সেপ্টেম্বর মাসের ২৫ তারিখ থেকে কোন প্রকার বাই-সেল করতে পারছি না। এমনকি গত দুই মাস যাবত আমরা টাকা উঠানোর রিক্যুইজিশন দিলেও হাউজ কর্তৃপক্ষ তা দিচ্ছে না। এছাড়াও রিং সাইন টেক্সটাইলের আইপিওতে আবেদনের প্রেক্ষিতে টাকা কেটে নিলেও আমাদের আবেদন করা হয় নি। সংশ্লিষ্ট ব্রাঞ্চের কর্মকর্তারা একেকদিন একেকরকম কথা বলছেন। কখনো বলছেন মালিকানা পরিবর্তন হবে, আবার কখনো বলছেন আজকালের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে। এছাড়া কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে ফোন দিলেও কোম্পানির এমডি, চেয়ারম্যান ফোন রিসিভ করছেন না বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
এর প্রেক্ষিতে শেয়ারনিউজ২৪.কমের প্রতিনিধিরা শাহ মোহাম্মদ সগীর অ্যান্ড কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে এসব অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। সেসময় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও এমডি/সিইওকে পাওয়া যায়নি। আর যারাই উপস্থিত ছিলেন তারাও কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোন কথা বলতে রাজি হন নি।
এ বিষয়ে জানতে তখন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান তাহমিনা জামানকে মুঠোফোনে (মোবাইল নং-০১৭৯৮-৬১…৯৮) একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে মুঠোফোনে (মোবাইল নং-০১৭১৪-৩৮…৩৯) যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, একটু সমস্যা হয়ে গেছে, যা আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি। তবে লিঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে শেয়ার ট্রান্সফারে হাউজ কর্মকর্তাদের অসহযোগীতার কারণ এবং সমস্যার সমাধানে কালক্ষেপনের সময়কালে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ লোকসানের দায় কে নেবেÑ এমন প্রশ্ন রাখলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
শেয়ার নিউজের পক্ষ থেকে ঠিক একই প্রশ্ন রাখা হয় ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমনের কাছে। এমন পরিস্থিতিতে হাউজ কর্তৃপক্ষের গাফিলতি থাকলে তিনি ভোক্তভোগী গ্রাহকদের বিএসইসিতে অভিযোগের পরামর্শ দেন। তিনি জানান, বিএসইসিতে কমপ্লেইন সেল খোলা হয়েছে। সেখানে অভিযোগ করলে বিনিয়োগকারীরা ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ফিডব্যাক পেয়ে থাকেন।
জানতে চাইলে ঢাকা ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বলেন, বিষয়টি আমিও শুনেছি। তিনি জানান, এ ধরনের সমস্যায় বিনিয়োগকারীরা চাইলে লিঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে শেয়ার ট্রান্সফার করে নিতে পারেন। তবে এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের ভয়ের কিছু নেই বলে জানান তিনি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যেহেতু তাদের ট্রেড সাসপেন্ড করা আছে, তাই বিনিয়োগকারীদের অর্থ নিরাপদ থাকবে বলেও জানান তিনি।
তবে এ সময়ে গ্রাহকদের বিনিয়োগ যদি লোকসানে চলে যায় তার দায় কে নেবে জানতে চাইলে ডিবিএ সভাপতি বলেন, সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা যদি লস ক্লেইম করে, আর তদন্তে যদি এর কারণ অভিযুক্ত কোম্পানি হয়, তাহলে এর দায় অবশ্যই ওই কোম্পানি অর্থ্যাৎ শাহ মোহাম্মদ সগীর অ্যান্ড কোম্পানিকেই নিতে হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।