আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ডাইনোসর পিঁপড়া হল এক বিশেষ ধরনের পিঁপড়া। এই পিঁপড়া প্রথম আবিষ্কার হয় ১৯৭৭ সালে। পতঙ্গবিদদের মতে, এটাই প্রথম পিঁপড়ার প্রজাতি, যার উদ্ভব বোলতা থেকে। ৭ কোটি বছর আগে এই পিঁপড়ার জন্ম। বিশ্বে যত পিঁপড়ার প্রজাতি রয়েছে, তাদের সবার থেকে অনেকটাই আলাদা এরা।

পতঙ্গবিদেরা একে জীবন্ত জীবাশ্ম এবং মিসিং লিঙ্ক বলে। বোলতা এবং পিঁপড়া দুই প্রাণীর বৈশিষ্ট্যই রয়েছে এদের মধ্যে। সৃষ্টির সময় থেকে আজও একই রকম রয়ে গেছে এরা।
দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার একটা ছোট শহর পুচেরা। পশুপালন এবং কৃষিকাজই মূলত এই শহরের মানুষের জীবিকা ছিল। কিন্তু একটা সময়ে এমন অবস্থা আসে, যখন খাবারের টাকা জোগানোও অসম্ভব হয়ে পড়ে। শহরের অস্তিত্বই তখন লুপ্ত হওয়ার মুখে। এই সঙ্কট থেকে পিঁপড়াই সমস্যা সমাধানের উপায় বাতলে দিল! অস্তিত্ব লুপ্ত হওয়া থেকে বাঁচল গোটা শহর।
এই শহরকে অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়া থেকে উদ্ধার করেছে এরা, সেই পুচেরা শহরের নামকরণ রাজা পুজেরির নাম থেকে। ১৯১৭ সালে তার মৃত্যু হয়। আর ১৯২০ সালে পুচেরা নামে এই শহরের জন্ম।
অ্যাডিলেড থেকে ৬৪০ কিলোমিটার দূরে পার্থ এবং সিডনির সংযোগরক্ষাকারী হাইওয়ের পাশেই গড়ে উঠেছিল শহরটা। পশুপালন আর কৃষিকাজ দিয়ে শহরের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল না। রোজগারের খোঁজে এলাকার লোকজন অন্যত্র চলে যেতে শুরু করেন।
একটা সময় এমনই অবস্থা হয় যে, যে কয়েকটা পরিবার এখানে থেকে যায়। তথন তাদের দিনের খাবার জোগানোও অসম্ভব হয়ে পড়ে। শহরের অস্তিত্বই বিলুপ্ত হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। বদল আসতে শুরু করে ১৯৭৭ সাল থেকে।
সে বছরই পতঙ্গবিদেরা প্রথম সম্পূর্ণ অন্য প্রজাতির পিঁপড়ার খোঁজ পান এই এলাকায়। ঠিক যেন ডানা ছাড়া বোলতা। পেছনে বিষাক্ত বড় হুলও রয়েছে এদের। এদের নাম দেয়া হয় ডাইনোসর পিঁপড়া।
তার পর থেকে প্রতিনিদ কোনো না কোনো পতঙ্গবিদ পুচেরায় আসতে শুরু করেন। দিনের পর দিন এখানে থেকে গবেষণার কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। ফলে তাদের জন্য থাকার জায়গা তৈরি হয় শহরে। উপার্জনের একটা রাস্তাও খুলে যায় বাসিন্দাদের।
পিঁপড়ার আকর্ষণে বহু পর্যটকও এখানে এসে রাত্রিযাপন করতে শুরু করেন। ক্রমে রাস্তার পাশে রাত্রিযাপন এবং খাওয়া দাওয়ার জন্য একটা রোডহাউস, কতগুলো দোকান গড়ে ওঠে। রাত্রিযাপন না করলেও হাইওয়ে দিয়ে যাওয়া সব গাড়িই এখন পুচেরাতে দাঁড়ায়। সেই সব দোকান থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস কেনেন বা কিছু ক্ষণ বিশ্রাম নেন।
অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার মুখ থেকে পুচেরা আজ পর্যটন মানচিত্রে নিজের জায়গা করে নিয়েছে। গড়ে ওঠা রোডহাউসের বাইরে ডাইনোসর পিঁপড়ার একটা বড় প্রতিকৃতি বানানো হয়েছে। যা আরো বেশি পর্যটক আকর্ষণ করে।