জুমবাংলা ডেস্ক: আঙ্গুর বিদেশি ফল হলেও জনপ্রিয় এই ফলটি চাষে সফল হয়েছেন বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার একজন চাষী। বিবিসি বাংলার প্রতিবেদক রাকিব হাসনাত-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, তুরস্ক, চিলি, আর্জেন্টিনা, ইরান ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলোতেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হলেও ফলটি প্রায় সারা বিশ্বেই জনপ্রিয়। বাংলাদেশের বাজারেও পাওয়া যায় সবুজ ও লাল বা বেগুনি রংয়ের আঙ্গুর।
বাংলাদেশের শহর থেকে গ্রামাঞ্চল প্রায় সর্বত্রই এই ফলটির চাহিদা থাকলেও আবহাওয়া, মাটি ও বাণিজ্যিক চাষের জ্ঞানের অভাবসহ নানা কারণে বাংলাদেশে এই ফলটি চাষের আগ্রহ খুব একটা দেখা যায়নি।
তবে এখন কৃষি কর্মকর্তারা ও চাষীরা বলছেন, বাংলাদেশের মাটিতেও আঙ্গুর চাষ করে সফল হওয়া সম্ভব। এর মধ্যে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা এটি চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী বলে দাবি করছেন সেখানকার কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসান আলী।
মোহাম্মদ হাসান আলী বলেন, সেখানে একজন চাষী বাণিজ্যিক উৎপাদনে সফল হয়েছেন এবং ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে কিছু বড় কোম্পানির প্রতিনিধিরাও সেখানে গিয়ে দেখে এসেছেন।
তিনি আরও বলেন, “মহেশপুরের মাটিটা আঙ্গুরের জন্য উপযোগী। এখানে এই ফলটা হবে বলে আমরা আশা করছি। একজন চাষি সফল হয়েছেন। শুরু থেকেই তিনি আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেছেন এবং চলতি বছর তার বাগান আরও বিস্তৃত হয়েছে।”
আর যেই চাষী আঙ্গুর চাষ করে সফল হয়েছেন বলে কৃষি বিভাগ বলছে তার নাম আব্দুর রশিদ।
আব্দুর রশিদ বলেন, তিনি দু বছর ধরে আঙ্গুর চাষ করছেন এবং এর মধ্যে একবার ফল বাজারজাত করেছেন।
এর আগে সবুজ আঙ্গুর চাষ করলেও এবার সাথে তিনি যোগ করেছেন লাল-বেগুনি আঙ্গুর।
ঝিনাইদহে আঙ্গুর এলো কীভাবে
আব্দুর রশিদ আরও কিছু বিদেশি ফলেরও চাষ করেছেন। এক সময় তার চিন্তায় আসে যে আঙ্গুর উৎপাদনের চেষ্টা করবেন তিনি।
এর মধ্যে ভারতে গিয়েছেন এবং সেখানে এটি চাষ করতে দেখেছেন, যা তার মধ্যে আগ্রহ তৈরি করে।
রশিদ আরও বলেন “এসব দেখে আমার মধ্যে চিন্তাটা এলো যে এটা বাংলাদেশেও সম্ভব হবে। তারপর থেকেই আমি চারা সংগ্রহ করার চেষ্টা শুরু করলাম”
পরবর্তীতে চীন, ইটালি ও ভারত থেকে প্রবাসীদের মাধ্যমে আঙ্গুরের চারা সংগ্রহ করে মহেশপুরে বাগান শুরু করেন।
এখন ৩৮ শতক জমিতে দুশোর বেশি আঙ্গুর গাছ আছে তার। গত বছর ফলন ভালো হয়েছে বলে এবার বাগানের পরিধি কিছুটা বাড়িয়েছেন।
“গতবার সবুজটা করেছিলাম। এবার সামনে লাল-বেগুনিটার খবর দিতে পারবো বলে আশা করছি,” বলছিলেন তিনি।
কৃষি কর্মকর্তা মিস্টার আলী জানিয়েছেন, গতবছর আব্দুর রশিদের আঙ্গুর স্থানীয় বাজারে কেজি প্রতি দুশো টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
“ফলনটাও ভালো হয়েছে। ফলটাও স্বাদের। তবে সবুজটার মধ্যে বীচি আছে। হয়তো আরও ভালো জাত পেলে সেটা আরও ভালো হবে মহেশপুরে,” বলছিলেন তিনি।
সাধারণত আঙ্গুর চাষের জন্য এমন জায়গা দরকার হয় যেখানে পরিমিত বৃষ্টি হবে কিন্তু মাটিতে পানি জমে থাকবে না। আবার আবহাওয়া হতে হবে শুষ্ক ও উষ্ণ থাকে।
আঙ্গুর পাকার সময় বৃষ্টি হলে আঙ্গুরের গুণাগুণসহ আকৃতি নষ্ট হয়ে যায়। আবার আঙ্গুর পাখি খেয়ে ফেলে বলে এ নিয়ে সতর্ক থাকতে হয়।
বাংলাদেশে আঙ্গুরের জন্য নানা চেষ্টা
বাংলাদেশে এর আগেও বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে আঙ্গুর চাষের চেষ্টা হয়েছে। উনিশশো নব্বই সালে গাজীপুরের বিএডিসির উদ্যান উন্নয়ন কেন্দ্রে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আঙ্গুর চাষের চেষ্টা করা হয়েছিলো।
তবে ব্যক্তি বা বেসরকারি উদ্যোগে খুব বেশি প্রচেষ্টার কথা আগে শোনা যায়নি।
যদিও বাংলাদেশের মাটি আঙ্গুরের জন্য উপযুক্ত বলেই বলছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
পরিমিত মাত্রায় সার ও যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে একটি আঙ্গুর গাছই বছরের পর বছর ধরে ফলন দিতে পারে।
বাংলাদেশে অক্টোবর নভেম্বর মাসে আঙ্গুর গাছ ছাটাই করলে মার্চ এপ্রিলে ফল পাওয়া যায়। এরপর আবার শীতের সময়ে ফলন আসে।
আঙ্গুর পাকার সময় বৃষ্টিরা সম্ভাবনা থাকলে পলিথিন জাতীয় কাগজ দিয়ে গাছ ঢেকে দিতে হয় কারণ বৃষ্টির পানি লাগলে আঙ্গুর ফেটে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
তবে আবার আঙ্গুর পুরোপুরি পেকে যাবার পরেও সংগ্রহ না করা হলে পরে তার মিষ্টতা নষ্ট হতে শুরু করে এবং এক পর্যায়ে পচন ধরতে আরম্ভ করে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।