জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি কৃষি। দিন দিন এই খাতে প্রযুক্তির ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তেমনি ড্রাগন চাষে অভিনব এক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সফল হয়েছেন এক উদ্যোক্তা। তার এই প্রযুক্তি ড্রাগন চাষে এনে দিয়েছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
বাংলাদেশে এমন পদ্ধতি দেখা মেলা ভার। অভিনব লাইট ইনডোর্স পদ্ধতি ব্যবহারে একদিকে যেমন অপরূপ সৌন্দর্যেও সৃষ্টি করেছে, অন্যদিকে ফলন বৃদ্ধি করেছে তিনগুণ। আবার অসময়ে ড্রাগন উৎপাদন করে দেশের মধ্যে সাড়া ফেলেছেন এই উদ্যোক্তা।
বলছিলাম ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার চারাতলা গ্রামের বিপ্লব জাহানের ড্রাগন বাগানের কথা।
এমন ব্যতিক্রম উৎপাদন পদ্ধতি দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন আসছে শত শত দর্শনার্থী।
জানা যায়, ৪ বছর আগে হরিণাকুণ্ডুর চারাতলা গ্রামে ১১ বিঘা জমিতে গড়ে তোলা হয় এই ড্রাগন বাগান। এখানে ৩০ হাজার গাছে প্রতি বছরে ফলন হতো গড়ে ৪৫ টন। বাগানটিতে প্রতি মাসে খরচ ২ লাখ টাকা।
প্রতিদিন ১২ জন শ্রমিক কাজ করেন। গত বছর চীন থেকে সাড়ে ৩ হাজার বিশেষ ধরনের লাইট এনে রাতে লাইট ইনডোর্স পদ্ধতিতে শুরু করা হয় ড্রাগন ফলের পরিচর্যা। যা অসময়ে স্বাস্থ্য সম্মত ড্রাগন ফল উৎপাদনে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। আলোর কারণে বাগানে ফুলের সংখ্যা গত মৌসুমের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এখন প্রায় লক্ষাধিক ফুল ফুটেছে। যা অন্য সময়ের তুলনায় তিনগুণ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি লাইট আর নিচে সবুজ ড্রাগন গাছ ও ওপরে সাদা ফুলের হাতছানি। দেখে মনে হবে আঁধার রাতে আলো আর সবুজ-সাদার মিলনমেলা। প্রতিটি ড্রাগন গাছের মাথার ওপর একটি করে লাইট জ্বালানো। প্রতিটি গাছেই ধরে আছে ফল আবার ফুলও ফুটতে শুরু করেছে। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে লাইটগুলো জ্বালানোর পর তা অপরূপ সৌন্দর্যে রূপ নেয়। এমন ভিন্নতা দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে জড়ো হচ্ছে শত শত মানুষ। বৈচিত্র্যময় চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জায় গা ভাসাতে বিভিন্ন জেলা থেকেও আসছে দর্শনার্থী।
মহেশপুরের গুড়দহ এলাকা থেকে থেকে বাগান দেখতে আসা উদ্যোক্তা আল-রিয়াদ বলেন, ‘ড্রাগন বাগান করার উদ্যোগ নিয়েছি। এজন্য বাগান দেখতে এসেছি। সাধারণ ড্রাগন চাষ পদ্ধতির থেকে আল্ট্রা হাইড্রেনসিটি পদ্ধতি অনেক ভালো ছিল, তবে এই আলো জ্বালিয়ে যে পদ্ধতিতে ড্রাগন চাষ করা হচ্ছে তা অনেক ব্যয়বহুল। কিন্তু অন্য পদ্ধতিগুলো থেকে এই পদ্ধতিতে খরচ বেশি হলেও এতে অসময়ে যেমন ফল পাওয়া যাচ্ছে, আবার দামটাও অন্য মৌসুমের তুলনায় বেশি পাওয়া যাচ্ছে। ভাবছি এমন পদ্ধতিতে চাষ শুরু করবো।’
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থেকে আসা দর্শনার্থী সাদিয়া আক্তার বলেন, ‘ফেসবুক-ইউটিউবে গতবছর এই বাগানের ভিডিও অনেকবার দেখেছি। ইচ্ছে ছিল বাগানটি সরাসরি দেখবো। তাই বাগান দেখতে এসেছি। ড্রাগন বাগানে আসার পর দেখতে অনেক ভালো লাগল। এমন সৌন্দর্য সত্যিই আগে কখনো দেখিনি।’
বাগানের ব্যবস্থাপক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বাগানে নিয়মিত ১২ জন কাজ করে। রাতে একজন নাইট গার্ড বাগান পাহারা দেয়। যখন ফুল ফোটে তখন রাতেও ফুলগুলো কৃত্রিম পরাগাইনের জন্য কাজ করতে হয়।’
ড্রাগন ফ্রুটস এগ্রোর স্বত্বাধিকারী বিপ্লব জাহান জানান, ‘ইউটিউব দেখে এ চাষাবাদ সম্পর্কে জেনেছিলাম। অভিনব এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যাপক ফলন পাচ্ছি। প্রথম দিকে বড় অঙ্কের টাকা লাগলেও লাভও হয় বেশি। সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা ও রাত ৩টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত মোট ৯ ঘণ্টায় দুই দফা লাইটগুলো জ্বলে। শীতকালে দিন ছোট হয় তাই দিনের আলো কম হয়। ড্রাগন বেড়ে ওঠে মূলত দিনের আলোয়, তাই এ পদ্ধতিতে চাষ করলে রাতেও ড্রাগনের সঠিক বেড়ে ওঠা স্বাভাবিক থাকে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার বাগানে ৩৫ হাজার ড্রাগনের গাছ রয়েছে। যা থেকে তিনি গতবছর ৪০ লাখ টাকার ড্রাগন বিক্রি করেছেন। এ বছর ৫৫ হাজার মেট্রিক টন ড্রাগন উৎপাদন হবে বলে আশা করছি।’ সূত্র : কালের কণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।