স্পোর্টস ডেস্ক: প্রথমার্ধের বিবর্ণতা কাটিয়ে বিরতির পর উজ্জীবিত ফুটবল খেলল থমাস টাচেলের দল চেলসি। আট মিনিটে আদায় করে নিল দুই গোল। রবিবার প্রিমিয়ার লিগের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে টটেনহ্যাম হটস্পারকে ২-০ গোলে পরাজিত করে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখলো চেলসি।
স্ট্যামফোর্ড ব্রীজের ম্যাচটিতে দুর্দান্ত পারফর্ম করা মরক্কোর মিডফিল্ডার হামিক জিয়েচের প্রশংসা করতে ভুল করেননি চেলসি বস থমাস টাচেল। প্রথমার্ধ গোলশুন্য থাকার পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই দুর পাল্লার অসাধারণ কার্লিং শটে জিয়েচ ডেডলক ভাঙ্গেন। এর আগে প্রথমার্ধে হ্যারি কেনের একটি গোল ফাউলের কারনে বাতিল হয়ে গেলে এগিয়ে যাওয়া হয়নি স্পার্সদের। ৫৫ মিনিটে থিয়াগো সিলভার হেডে চেলসির জয় নিশ্চিত হয়। তৃতীয় স্থানে থাকা চেলসি এই জয়ে টেবিলের শীর্ষে থাকা ম্যানচেস্টার সিটির সাথে পয়েন্টের ব্যবধান ১০’এ নামিয়ে এনেছে। একইসাথে টানা চার লিগ ম্যাচে জয়বিহীন থাকা চেলসি এর মাধ্যমে নিজেদের আত্মবিশ্বাসও ফিরে পেয়েছে।
ম্যাচ শেষে চেলসি বস টাচেল বলেন, ‘হাকিমের গোলটি দুর্দান্ত ছিল। ম্যাচে সে সবসময়ই এমন কিছু টেকনিক প্রয়োগ করে যার তুলনা নেই। আমরা সবাই এসব নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আজ মাঠেই তার প্রমান মিলেছে। যোগ্য দল হিসেবেই আমরা জয়ী হয়েছি। ম্যাচের শেষ পর্যন্ত নিজেদের ওপর আস্থা ছিল।’
এবারের মৌসুমে ইতোমধ্যেই টটেনহ্যামকে তিনবার পরাজিত করেছে চেলসি। তার উপর ঐ ম্যাচগুলোতে কোন গোলও হজম করেনি। এর মধ্যে লিগ কাপের সেমিফাইনালের ম্যাচটিতে লন্ডনের প্রতিদ্বন্দ্বীদেও বিদায় করে দিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে চেলসি।
শীতকালীন বিরতির কারনে ফেব্রুযারির মাঝামাঝি নাগাদ লিগে চেলসির আর কোন ম্যাচ নেই। এই সময়ের মধ্যে অবশ্য তাদেরকে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ খেলতে মাঠে নামতে হবে। গত ২৬ ডিসেম্বর এ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে জয়ের পর এই প্রথম লিগে সাফল্য পেল টাচেল শিষ্যরা। মৌসুমের মাঝামাঝিতে এসে এই জয়টা তাদের প্রয়োজন ছিল। টাচেল বলেন, ‘পরিসংখ্যানই সব বলে দেয়। প্রতি তিনদিনে নিজেদের প্রমান করাটা আমাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। ভাল একটি পারফরমেন্সকে সঙ্গী করে বিরতিতে যাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই জয়টা আমাদের প্রয়োজন ছিল। খেলোয়াড়রাও বেশ পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছে। কারন গত কয়েকদিন বেশ কিছু ম্যাচ আমাদেরকে খেলতে হয়েছে।’
এদিকে এন্টোনিও কন্টে দায়িত্ব গ্রহনের পর লিগে গত ১০ ম্যাচে এটাই টটেনহ্যামের প্রথম পরাজয়। আর গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে পরাজিত হয়ে শীর্ষ চারের জায়গা থেকে স্পার্সরা আপাতত ছিটকে পড়েছে। চতুর্থ স্থানে থাকা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের থেকে দুই পয়েন্ট পিছিয়ে টটেনহ্যাম এখনো টেবিলের সপ্তম স্থানে রয়েছে। যদিও তাদের হাতে ইউনাইটেডের থেকে দুই ম্যাচ বেশী রয়েছে।
কেনের গোল বাতিলের প্রসঙ্গে কন্টে বলেছেন, ‘আমি রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাইনা। কিন্তু ইংল্যান্ডে এসব গোল বাতিলের সিদ্ধান্ত আমি কখনই মেনে নিতে পারিনা। পরাজয় আমি কখনই পছন্দ করিনা। এটা আমার জন্য সবসময়ই কঠিন একটি বিষয়। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় টানা ৯ ম্যাচে পরাজিত না হওয়াটা সত্যিই বিশেষ কিছু। এই মুহূর্তে চেলসির মত দলের বিপক্ষে পয়েন্টের ব্যবধানটা অনেক বড় বিষয়। শীর্ষ দলগুলোর সাথে আমাদের পার্থক্যটা অনেক বেশী হয়ে গেছে।’
কাল ম্যাচের শুরু থেকেই দারুন উজ্জীবিত ছিল চেলসি। ম্যাসন মাউন্ডের ডেলিভারি থেকে রোমেলু লুকাকুর শট বারের উপর দিয়ে চলে যায়। জিয়েচের ক্রস থেকে ক্যালুম হাডসন-ওডুই গোলের ভাল একটি সুযোগ নষ্ট করেন। ২৫ গজ দুর থেকে জিয়েচের শক্তিশালী শট রুখে দেন হুগো লোরিস। রায়ান সেসেগননের পাস থেকে কেন বল জালে জড়ালে টটেনহ্যাম এগিয়ে গিয়েছিল কিন্তু রেফারী পল টিয়ারনি বিতর্কিত ভাবে গোলটি ফাউলের কারনে বাতিল করে দেন। ৪৭ মিনিটে আর কোন ভুল করেননি জিয়েচ। হাডসন-ওডুাইয়ের কাছ থেকে বল পেয়ে মরোক্কান এই উইঙ্গার কার্লিং শটে লোরিসকে পরাস্ত করেন। কিছুক্ষন পরেই জিয়েচ ব্যবধান প্রায় দ্বিগুন করে ফেলেছিলেন। কিন্তু এবার সতর্ক ছিলেন লোরিস। ৫৫ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার সিলভা ব্যবধান দ্বিগুন করলে চেলসির জয় নিশ্চিত হয়। সেট-পিস থেকে মাউন্ডের ক্রসে সিলভার কোনাকুনি হেডে বল জালে জড়ালে টটেনহ্যামের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। ৩৭ বছর বয়সী সিলভা ২০১৩ সালে রায়ান গিগসের পরে সবচেয়ে বেশী বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে প্রিমিয়ার লিগে গোলের কৃতিত্ব দেখালে। ৩৯ বছর বয়সী গিগস কিউপিআর এর বিপক্ষে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে গোল করে এখনো এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।