জুমবাংংলা ডেস্ক : চলতি বছর রাজবাড়ীতে উচ্চ ফলনশীল জাতের টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় রাজবাড়ীর চাষিরা দিনদিন টমেটোর আবাদ বাড়াচ্ছেন। পদ্মা নদীর তীরবর্তী জেলা রাজবাড়ী। এ জেলার মাটি অধিক উর্বর হওয়ায় প্রতিটি শাকসবজি ও ফসলের সর্বোচ্চ ফলন হয়। চলতি মৌসুমে টমেটোর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ হাজার টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা। রাজবাড়ী জেলায় মোট আবাদি জমির পরিমাণ ৭৯ হাজার ১৬৩ হেক্টর।
চলতি রবি মৌসুমে উচ্চ ফলনশীল জাতের টমেটো আবাদ হয়েছে প্রায় ৯০০ হেক্টর জমিতে। তবে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে পদ্মার চরাঞ্চলে গোয়লন্দে।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুসারে, এ বছর জেলা সদরে ২৬০, কালুখালীতে ৪৫, গোয়ালন্দে ৪৫০, পাংশায় ৫৫ ও বালিয়াকান্দিতে ৩৫ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ করেছেন কৃষকেরা।
গত বছর জেলার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছিল। হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন ছিল সাড়ে ২৫ টন। যার মোট উৎপাদন ছিল ১৭ হাজার ১৫৭ টন। সেই হিসেবে চলতি মৌসুমে টমেটোর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ হাজার টন।
সরেজমিনে রাজবাড়ী জেলা সদরের বরাট ইউনিয়নের নয়নসুখ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মার তীরে চরের জমিতে একরের পর একর জমিতে কৃষকেরা করেছেন বিউটি প্লাস, মিতালি, টিএম ১২২০’সহ বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল জাতের টমেটোর আবাদ। ক্ষেতের প্রতিটি গাছেই ঝুলছে কাঁচা-পাকা টমেটো। কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন টমেটো সংগ্রহ ও ক্ষেত পরিচর্যায়।
কৃষক গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি ১০০ শতাংশ জমিতে আধুনিক মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো আবাদ করেছি। প্রথমদিকে ৮০ টাকা কেজিদরে বিক্রি করেছি। এখন প্রতি কেজি ৫০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। ১০০ শতাংশ জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো আবাদ করতে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি, বিক্রি হবে প্রায় ৫ লাখ টাকার মতো।
কৃষক সলিম শেখ বলেন, আমি ২ বিঘা (৬৬ শতাংশ)জমিতে টমেটো আবাদ করেছি। ফলন আল্লাহর রহমতে ভালো হয়েছে। বাজারে দাম ভালো থাকলে আমরা লাভবান হবো।
কৃষক সালাম শেখ বলেন, রাজবাড়ী জেলার এই টমেটো স্থানীয় বাজারসহ ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহফুজ মিয়া বলেন, প্রতিনিয়ত মাঠে এসে সরাসরি কৃষকের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করি। চাষাবাদ সম্পর্কে নানাবিধ পরামর্শ ও সেবা দিই আমরা।
সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জনি খান বলেন, জমিকে উত্তমরূপে তৈরি করে প্রয়োজনীয় জৈব ও রাসায়নিক সার মিশিয়ে বেড তৈরি করে সেখানে বীজ বপন করতে হয়। তারপর সেই বেডগুলো মালচিং পেপার দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। মালচিং পেপার হলো বিশেষ ধরনের পলি পেপার (পলিথিন)। বীজগুলো থেকে চারা গজানোর পর চারার স্থানগুলো থেকে মালচিং পেপার ছিদ্র করে দিতে হয়। যাতে চারাগুলো সহজে বেড়ে উঠতে পারে। এ ছাড়া মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে জমিতে আগাছা জন্মাতে পারে না এবং সেচের অতিরিক্ত পানি জমে চারা বিনষ্ট হয় না। এভাবে চাষে অতিরিক্ত সারের প্রয়োজন হয় না। ফলে জমি চাষাবাদে শ্রম কমে যাওয়ায় কৃষি শ্রমিকও কম লাগে। এতে উৎপাদন খরচ কমে যায়, জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং ফলন অনেক বেশি হয়।
রাজবাড়ী জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, রাজবাড়ীতে গত বছর ৯৪৫ হেক্টর জমিতে টমেটো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬০ হেক্টর রয়েছে গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে। এ বছর এখনো আবাদ চলমান। পলিমাক্স ব্যবহার করে আধুনিক পদ্ধতিতে টমেটো চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের। এতে আগাছা কম হয়। গাছের বৃদ্ধিও ভালো হয়। রোগবালাই হয় না। ফলনও বেশি হয়। আধুনিক কৃষি ব্যবহারে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।